অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর পথে উত্তরাখণ্ড
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪বিলের যে খসড়ার কথা সামনে এসেছে, তাতে বলা হয়েছে, সব ধর্মের মানুষের জন্য বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে একই আইন চালু হবে। তবে আদিবাসীদের অভিন্ন দেওয়ানি বিধির থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তারা তাদের রীতিনীতি অনুসরণ করে চলতে পারবে। উত্তরাখণ্ডের প্রায় তিন শতাংশ মানুষ আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত।
২০১১ সালের জনগণনায় বলা হয়েছে, উত্তরাখণ্ডে ১৪ লাখ সাত হাজার মুসলিম আছেন। রাজ্যের প্রায় ১৪ শতাংশ মানুষ হলেন মুসলিম। এখনো পর্যন্ত মুসলিমদের তরফ থেকে খুব বেশি প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে উত্তরাখণ্ড কংগ্রেসের সভাপতি করন মাহারা বলেছেন, ''হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্য়ে বিরোধ বাড়ানোর একটা চেষ্টা চলছে। মোদী কেন্দ্রে এই আইন করেননি। একটা ছোট রাজ্যে এই আইন করে ভোটে বলবেন, বিজেপি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি করে দিয়েছে। ভোটের পর সব রাজ্যে হবে। এটা হলো ভোটের অস্ত্র।''
কী আছে এই বিলে
এখনো পর্যন্ত এই বিলের খসড়া সামনে আসেনি। বিচারপতি রঞ্জনা দেশাইয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি রাজ্য সরকারকে এই বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। সেই রিপোর্টও প্রকাশ করা হয়নি।
তবে সূত্র জানাচ্ছে, উত্তরাখণ্ডে আলাদা ধর্মের জন্য আলাদা পার্সোনাল আইন বা দেওয়ানি বিধি চালু থাকবে না। সকলের জন্য এক আইন হবে। উত্তরাখণ্ডের প্রস্তাবিত অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট বলছে, এই বিল আইনে পরিণত হলে তিন তালাকের মতো হালালা, ইদ্দতও নিষিদ্ধ হবে ও অপরাধ বলে গণ্য হবে।
সব ধর্মের ক্ষেত্রেই বিয়ের বয়স একই হবে, নারীদের ক্ষেত্রে ১৮ ও পুরুষদের ক্ষেত্রে ২১ বছর। সব বিয়ে নথিভুক্ত করতে হবে। লিভ ইন রিলেশনশিপে থাকলেও তা নথিভুক্ত করতে হবে। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমানাধিকার থাকবে।
স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রী ক্ষতিপূরণ পাবেন। স্বামীর বাবা-মা-কে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাকে নিতে হবে। যদি ওই নারী আবার বিয়ে করেন, তাহলে তিনি যে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছিলেন, তা আগের স্বামীর বাবা-মাকেও তার ভাগ দিতে হবে।
বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান কারণ ও সমান সুযোগ থাকবে।
কমিটির প্রস্তাবে সন্তানদের সংখ্যা নির্ধারণ করার বিষয়েও প্রস্তাব ছিল। কিন্তু এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার কমিটি করতে চলেছে। তাই এই বিষয়টি সম্ভবত খসড়া বিলের বাইরে রাখা হচ্ছে।
উত্তরাখণ্ড প্রথম
স্বাধীনতার পর উত্তরাখণ্ডই প্রথম রাজ্য হতে চলেছে, যেখানে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হবে। গোয়ায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু আছে। তবে তা পর্তুগিজ দেওয়ানি বিধি, যা স্বাধীনতার অনেক আগে থেকে চালু আছে। উত্তরাখণ্ডে বিজেপি-র সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। ফলে এই বিল পাস হওয়া নিয়েও কোনো সংশয় নেই।
এখন গুজরাটের মতো কয়েকটি বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তরাখণ্ডের মতো অভিল্ল দেওয়ানি বিধি করার উদ্যোগ নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারও আইন কমিশনকে এই বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছে। আইন কমিশনের রিপোর্টও অদূর ভবিষ্যতে জমা পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল বলেছেন, ''আইন কমিশনের রিপোর্ট জমা হওয়ার পর কেন্দ্র এই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে। ভারতে উত্তরাখণ্ডের মতো কিছু রাজ্য এই আইন করতে চাইছে। তাদের সেই ক্ষমতাও আছে।''
'আদিবাসীরা বাদ কেন?'
প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্তর মতে, ''অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ধারণা হিসাবে নিঃসন্দেহে ভালো। কিন্তু অভিন্ন মানে তো সকলের জন্য এক আইন হবে। তাহলে আদিবাসীদের বাদ দেয়া হলো কেন? এটা কি ভোটের দিকে তাকিয়ে?''
আশিস জানিয়েছেন, ''উত্তরপূর্বের তিনটি আদিবাসীপ্রধান রাজ্য নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও মেঘালয় এই আইনের বিরোধিতা করেছিল। আদিবাসীদের এই আইনের আওতা থেকে বাদ দিয়ে হলো। তাহলে কি ভোটের আগে মুসলিমদের লক্ষ্য করে এই আইন করা হলো?''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)