অ্যাসিড আক্রমণের প্রতিকার
১৪ জুলাই ২০১৩মহিলাদের ওপর অ্যাসিড হামলার প্রতিকারে গোটা দেশে অ্যাসিড বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং অ্যাসিড-আক্রান্তদের পুনর্বাসনে রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে পরামর্শ করে একটা সহমতে আসার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তাতে ভ্রুক্ষেপ না করায় বিষয়টি সম্পর্কে কঠোর মনোভাব নিয়েছে আদালত৷ বলা হয়েছে, সরকার এক সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় নীতিমালার খসড়া দাখিল না করলে বা কোনো ব্যবস্থা না নিলে সুপ্রিম কোর্ট একতরফাভাবেই সারা দেশে অ্যাসিড বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবে৷
অ্যাসিড হামলা উপ-মহাদেশে মহামারির আকার নিতে চলেছে৷ গ্রাম-শহরে ভেদহীনভাবে মেয়েরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি৷ কার্যত, প্রতি সপ্তাহেই এই ধরণের ঘটনা ঘটছে৷ এদের মধ্যে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সি মেয়ে হলো প্রায় ৭০ শতাংশ৷ লিঙ্গ বৈষম্যের এ এক জঘন্য দিক৷ এই কয়েকদিন আগেই দিল্লির এক তরুণী নার্স প্রীতি মারা যান অ্যাসিড আক্রমণে মুম্বই-এ৷
অ্যাসিড আক্রান্ত তরুণী লক্ষী এবং সেবা সংগঠনগুলির মতে, অ্যাসিড হামলা বৃদ্ধি পাবার মূল কারণ দেশে অ্যাসিড জলের মতোই সহজলভ্য৷ নাইট্রিক এবং সালফিউরিক অ্যাসিডের একটি বোতল মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে সহজেই কেনা যায় পাড়ার হার্ডওয়্যারের দোকানে৷ তাই সক্রিয়বাদীরা ‘নন-ইন্ডাস্ট্রিয়াল' অ্যাসিড বিক্রি নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়৷ কেউ কেউ আবার সুপারিশ করেন, অ্যাসিড বিক্রেতাদের লাইসেন্স থাকতে হবে এবং কিনতে হলে ক্রেতাকে তাঁর পরিচয়-পত্রের সঙ্গে জানাতে হবে কী কাজে এই মারাত্মক কেমিক্যাল তাঁর দরকার৷
অ্যাসিড বিক্রি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অ্যাসিড-আক্রমণকারীকে গ্রেপ্তার, দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে৷ এছাড়াও পুলিশ প্রশাসনের মানসিকতার সংস্কার জরুরি, যাতে তাঁরা ধর্ষণ ও অ্যাসিড হামলাকে সমগোত্রের অপরাধ বলে গণ্য করে৷
এ বছরে যে নতুন আইন পাশ করা হয়েছে, তাতে অপরাধীর শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে৷ তাতে ৮ থেকে ১০ বছর জেল হতে পারে৷ কিন্তু আক্রান্তের পুনর্বাসন, যেমন মেডিক্যাল, আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক সমস্যা সমাধানের উপযুক্ত সংস্থান নেই তাতে৷
উল্লেখ্য, ভারতের মতো বাংলাদেশেও অ্যাসিড নিক্ষেপ একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা৷ ১৯৯৯ সালে মোট ৩,০০০টি অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছিল বাংলাদেশে৷ কিন্তু ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার দুটি আইন পাশ করে৷ অ্যাসিড আমদানি এবং খোলা বাজারে তা বিক্রি নিয়ন্ত্রিত করে৷ পরিণামে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ২০০২ সালের ৪৯৬ থেকে কমে গত বছর হয় মাত্র ৯৮টি৷
এই সমস্যার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে না পারাটা সরকারের পক্ষে লজ্জাকর এবং বৃহত্তর সমাজের অ-সংবেদনশীলতার এক প্রতিফলন৷