আফগানিস্তানের অবাঞ্ছিত মেয়েরা
১২ জানুয়ারি ২০১৭তোহেবারা ওরফে শাফিরা আফগানিস্তানে ছেলেদের মতো স্কুলে যায়, অন্যান্য বোনদের দেখাশোনাও করে৷ ততদিন পর্যন্ত, যতদিন না তাদের ঋতুচক্র শুরু হয় অথবা নারীসুলভ দৈহিক সৌর্ন্দয ফুটে ওঠে৷
বহু পুরনো প্রথা হলেও ‘বাচ্চা পশে’-র কারণগুলোকে তিন ভাগে চিহ্নিত করা যায়৷
সামাজিক
আফগান সমাজে ছেলে শিশুর মর্যাদা মেয়ে সন্তানের থেকে উঁচুতে৷ আজও সে দেশে ছেলে সন্তানের জন্মকে অপরিহার্য ও সম্মানের বলে বিবেচনা করা হয়৷ আফগানদের দৃষ্টিতে পুত্র সন্তান বংশের ও পরিবারের সম্মানের ধারক-বাহক৷ তাই যার পুত্র সন্তান নেই, সবাই তাকে দেখে করুণার চোখে৷
আর্থিক
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে আর্থিক অস্থিতিশীলতাও ‘বাচ্চা পশ’ প্রথার পিছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে৷ সে দেশের মেয়েরা স্বাধীনভাবে ঘরের বাইরে কাজ করতে পারে না৷ তাই পুত্রহীন দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের মেয়েদের ‘বাচ্চা পশ’ হতে বাধ্য করে৷ শুধু গ্রামে-গঞ্জেই নয়, রাজধানী কাবুলেও বাচ্চা পশের বহু নজির আছে৷
কুসংস্কার
আফগানিস্তানে এখনও এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা মনে করেন যে, সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের পিছনে মায়ের ভূমিকা আছে৷ ‘বাচ্চা পশ’ প্রথার মাধ্যমে একটি মেয়ে শিশুকে ছেলের মতো করে পালন করা হয়, যাতে মায়ের মনে ছেলে সন্তান জন্ম দেওয়ার আকাঙ্খা জাগে৷
বলা বাহুল্য, এই প্রথার ফলে শারীরিকভাবে না হলেও মানসিকভাবে মেয়ে শিশুটি নিপীড়িত হয়, কারণ, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত এক ধরনের জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবার পর, হঠাৎ করেই আবার তার জীবনাচরণে পরিবর্তন আসে৷ স্বাভাবিকভাবেই এতে মেয়েটির মনে মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়৷ গতকালও যে মেয়েটি ছেলেদের মতো সালোয়ার-কুর্তা পড়তো, তাকেই হয়ত আজ চাদরে মুখ ঢাকতে হচ্ছে৷ গতকালও যে ছেলেদের সাথে খেলা করতো, আজ থেকে ছেলেদের সাথে খেলা করা তার জন্য হয়ত নিষিদ্ধ হয়ে গেছে৷ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে ইচ্ছেমতো বাইরে যাওয়া, স্কুলে গিয়ে পড়াশোনাও৷