‘ইন্টারনেট চালু ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যাহারেই সমাধান'
২০ জুলাই ২০২৪শুক্রবার ইউটিউবে ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়' টকশো-তে অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন তারা৷
ডয়েচে ভেলে বাংলার প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীনের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্ত ছিলেন দেশটির ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ ও জার্মানি প্রবাসী সাংবাদিক সরাফ আহমেদ৷
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে চলমান সহিংসতায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ৩৬ জন মারা গেছেন৷ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সংঘর্ষ৷ এমন বাস্তবাতায় তাৎক্ষণিক সমাধান কী হতে পারে, জানতে চাওয়া হয় অতিথিদের কাছে৷
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘‘ইমিডিয়েট স্টেপগুলোর মধ্যে প্রথম যে জিনিসটা, সেটা হলো ইন্টারনেটের যে ব্ল্যাকআউট, সেটা খুলে দিতে হবে৷ কারণ আমরা যাতে বুঝতে পারি, গত তিন চার দিনে ব্যাপকভাবে যে প্রাণহানি ঘটেছে সেটার সংখ্যাটা কত, কারা, কিভাবে দায়ী৷ এটা বুঝতে পারবেন ইন্টারনেট খুলে দিলে৷ পুলিশ উইথড্র (প্রত্যাহার) করেন সমস্ত জায়গা থেকে৷ পুলিশ, বিজিবি, সশস্ত্র যান ব্যবহার করে ভীতি তৈরি করে...''
তিনি আরো বলেন, ‘‘পুলিশ উইথড্র করুন, শক্তি প্রয়োগের জায়গা দিয়ে হবে না৷ বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিক৷ শিক্ষার্থীদের আসতে দিন৷... যারা এই সমস্ত ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক৷''
সারাদেশে সহিংসতা, বিটিভিতে আগুন দেয়ার মতো ঘটনার পরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তুলে নিয়ে তাৎক্ষণিক সমাধান কীভাবে সম্ভব?-এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, ‘‘রোববার-সোমবার হত্যাকাণ্ডের পর এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে৷'' এর আগে আন্দোলনের সময় কোনো সহিংসতা হয়নি উল্লেখ করেন তিনি৷
তাৎক্ষিণক সমাধান প্রসঙ্গে সাংবাদিক সরাফ আহমেদ বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে যে ঘটনা ঘটেছে সরকারের দুঃখপ্রকাশ করা উচিত৷ দুঃখপ্রকাশ করে তাদের কাছে মাফ চেয়ে রাস্তা থেকে পুলিশ নামিয়ে নেয়া উচিত৷ এই যে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে, এতে যে গুজব ছড়াচ্ছে, মিরপুরে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হচ্ছে জনতার উপরে এই যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, এইগুলো যারা করছে, তারা খুবই শিশুসুলভ আচরণ করছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘তারা বুঝতে পারছে না, ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে কোনোদিন এইভাবে মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করা যায় না৷ মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করতে হলে, মানুষের কাছে যেতে হবে, কথা বলতে হবে৷ সেই শক্তি আওয়ামী লীগের এই মুহূর্তে নেই৷''
তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে বলে মনে করেন সরাফ আহমেদ৷
প্রবাসী এই সাংবাদিক বলেন, ‘‘বর্তমানে আওয়ামী লীগের মধ্যে জনসম্পৃক্ততা নেই৷'' তবে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এখনই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত বলে মনে করেন না সাংবাদিক সরাফ আহমেদ৷
তিনি আরো বলেন, ‘‘একটা কথা আমি বলব, এই আন্দোলন এখন আর ছাত্রদের হাতে নেই৷ ছাত্রদের হাতে থাকলে বিভিন্ন স্থাপনা পুড়িয়ে দেয়া, টেলিভিশন পুড়িয়ে দেয়া... একটা সুযোগ সন্ধানী দল, সুযোগ সন্ধানী কর্মীরা এগুলো করে বেড়াচ্ছে৷ আমি তাদের নাম বলব, কিন্তু সবাই বুঝতে পারছে এরা কারা৷ কিন্তু আমি বারবার বললেই হবে না শুধু তাদের কারণে এই ঘটনা ঘটছে৷ কারণ তারও প্রমাণ দরকার, কারা এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘শুরুতে আলোচনার মাধ্যমে যে সমাধান হতে পারতো, সেখান থেকে সরকার সরে এসেছে৷ আজকের পরিস্থিতির জন্য তারা দায়ী৷''
অধ্যাপক আলী রীয়াজের মতে কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী তার শপথ ভঙ্গ করেছিলেন৷ বলেন, ‘‘কারণ শপথে আছে অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে শাসন করার কথা৷...এখন তিনি বলছেন, ক্ষুব্ধ হয়ে, বিরাগের বশবর্তী হয়ে তিনি এটা করেছিলেন৷ সেটাই হলো শপথ ভঙ্গ করা৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘কথিত ছাত্রলীগকর্মী, যুবলীগকর্মী যারা অস্ত্র উঁচিয়ে... তাদের আটক করুন, বিচার করুন৷ এটার জন্য কোনো রকম আলোচনার দরকার হয় না৷''
এই অধ্যাপক বলেন, ‘‘যে প্রশ্নটা উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের, অতীত অভিজ্ঞতাগুলো দেখুন, ২০১৮ সালের আন্দোলনের পরে, ওই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো করা হয়েছে, সেগুলোর ভার তাদের বহন করতে হয়েছে৷ এই হচ্ছে পরিস্থিতি৷''
চলমান আন্দোলনে বিরোধীদলের ভূমিকা নিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘‘এই আন্দোলনের সূচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর না থাকাটাই সঠিক ছিল৷ কারণ এটা রাজনৈতিক দলের দাবি ছিল না৷ এটা শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল৷''
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিরোধী দলগুলোর ব্যর্থতা উঠে এসেছে বলে মনে করেন সরাফ আহমেদ৷
টিএম/এফএস