উত্তর আফগানিস্তানে তালেবান-বিরোধী প্রতিরোধ
১৯ আগস্ট ২০২১উত্তর আফগানিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে উঠতে শুরু করেছে। বুধবার উত্তর এবং মধ্য-উত্তরাংশের পারওয়ান প্রদেশের রাজধানী চারিকা তালেবানের হাত থেকে বিরোধী জোট কেড়ে নিয়েছে বলে আফগান সংবাদমাধ্যমের খবর। এছাড়াও ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য তৈরি করেছে ওই জোট। তালেবান-বিরোধী এই নতুন জোটের নেতা আশরফ গনির ডেপুটি আমরুল্লাহ সালেহ। তার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, উত্তর আফগানিস্তানের প্রভাবশালী তাজিক নেতা আহমেদ মাসুদ। যিনি আহমেদ শাহ মাসুদের পুত্র। আহমেদ শাহ মাসুদ ছিলেন নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের প্রভাবশালী নেতা। ২০০১ সালে আইএস জঙ্গির হাতে তিনি নিহত হন। আফগানিস্তানের উত্তর ভাগে দীর্ঘদিন তিনি তালেবান-বিরোধী রাজনীতির নেতৃত্বে দিয়েছেন।
এই মুহূর্তে আফগানিস্তানের ৯৫ শতাংশ এলাকা তালেবানের হাতে। দেশের উত্তরাংশে মাজার-ই-শরিফ থেকে কাবুল পর্যন্ত প্রায় সমস্ত এলাকাই তারা দখল করেছিল গত কয়েকদিনে। কিন্তু সেই অঞ্চলেই নতুন করে প্রতিরোধ তৈরি হতে শুরু করেছে। বেশ কিছু এলাকা তালেবানের হাতছাড়া হয়েছে বলেও স্থানীয় সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে। যদিও অধিকাংশ সংবাদসংস্থা এখনো সেখানে পৌঁছাতে পারেনি।
আশরফ গনি দেশ ছাড়ার পরে তার ডেপুটি আমরুল্লাহ সালেহ টুইট করে জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে তিনিই নির্বাচিত আফগান সরকারের নেতৃত্ব দেবেন। অর্থাৎ, তালেবানের কাছে হার স্বীকার করেননি তিনি। এরপরেই উত্তর আফগানিস্তানে তাজিক জনগোষ্ঠীর নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান তিনি। সেখানে আহমেদ মাসুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করেছেন তিনি।
আশরফ গনি সংখ্যাগুরু পাশতুন। তালেবানও পাশতুন জনগোষ্ঠীর। গনি সরকারের তিন ডেপুটি বা ভাইস প্রেসিডেন্টের একজন তাজিক জনগোষ্ঠীর সালেহ। অন্য দুইজন হলেন, উজবেক জনগোষ্ঠীর রশিদ দোস্তম এবং হাজরা উপজাতির সারওয়ার দানিশ। এরা দুইজনেও তালেবান-বিরোধী বলে পরিচিত। দোস্তম একসময় নাজিবুল্লাহ সরকারের সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। পরবর্তীকালে আহমেদ শাহ মাসুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তালেবান-বিরোধী লড়াইয়ে সামিল হয়েছিলেন। তিনি আপাতত উজবেকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তার সঙ্গে আছেন বলখ প্রদেশের সাবেক গভর্নর এবং তাজিক বাহিনীর প্রধান আট্টা মহম্মদ নুর। এই দুইজনের সঙ্গে সালেহর যোগাযোগ হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। ফলে সালেহর জোট আরো বড় হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
কূটনীতিকদেরঅনেকেই মনে করেছিলেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন এবং ন্যাটো বাহিনী চলে গেলে দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হবে। যেভাবে তালেবান মাত্র কয়েকদিনে প্রায় গোটা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছে, তাতে সেই গৃহযুদ্ধের আলোচনা খানিকটা পিছনে চলে গেছে। তবে গত দুইদিনে উত্তর আফগানিস্তানে যেভাবে নতুন করে তালেবান-বিরোধী প্রতিরোধ তৈরি হতে শুরু করেছে, তাতে ফের গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা সামনে চলে এসেছে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এএফপি, আল জাজিরা)