উত্তর প্রদেশে 'বিদেশি' বাছাই শুরু হতেই বিতর্ক
২৪ জানুয়ারি ২০২০উত্তর প্রদেশ জুড়ে 'বিদেশি' চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে৷ ২১ জেলা থেকে আসা রিপোর্ট হল, ৪০ হাজারের বেশি 'বিদেশি' চিহ্নিতকরণ করা হয়ে গিয়েছে৷ রাজ্য়ের মন্ত্রী শ্রীকান্ত শর্মা জানিয়েছেন, পুরো কাজটাই হয়েছে সিএএ অনুযায়ী৷ এই আইনের বিজ্ঞপ্তি জারির পরেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের লোকেদের চিহ্নিত করা হচ্ছে৷ কিন্তু আইনজ্ঞরা, বিরোধী নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন,সিএএ নিয়ে রুলই তো তৈরি করেনি সরকার৷ রুল তৈরি হলে তো বোঝা যাবে কীভাবে চিহ্নিতকরণ করবে সরকার৷ তা হলে এখন বিদেশি চিহ্নিতকরণ হচ্ছে কী করে? পুরোটাই তা হলে বেআইনি?
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সামনে সওয়াল করতে গিয়ে এই যুক্তিটাই দিয়েছিলেন আইনজীবী অভিষেক মণু সিংভি৷ তিনি বলেছিলেন, উত্তর প্রদেশে সিএএ নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ ৪০ হাজারেরও বেশি লোককে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারও নামের পাশে টিক চিহ্ন দেওয়া হচ্ছে। কারও নামের পাশে ক্রস বা কাটা চিহ্ন দেওয়া হচ্ছে৷ অভিষেক যখন এই সওয়াল করছেন, তখন আদালতে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্য়ায়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''সিংভি বলেছেন, টিক মারা মানে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া যায়৷ ক্রস মানে সন্দেহজনক৷ কিন্তু সিএএ রূপায়ণের ক্ষেত্রে কোনও রুল তৈরি করা হয়নি৷ তা হলে এই কাজ কী ভাবে করতে পারে রাজ্য সরকার? যাদের নামে ক্রস বা কাটা দেওয়া হয়েছে, তাঁদের ভোটাধিকার এবং অস্তিত্ব তো সঙ্কটের মধ্য়ে পড়বে৷''
সিপিএম নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিমও মনে করেন, যোগী আদিত্যনাথ সরকার যে কাজ করছে তা বেআইনি৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলছেন, ''এটাকে বলে রেসিয়াল প্রোফাইলিং৷ বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার চায়, আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বাতিল করে রেসিয়াল ডেমোক্রেসি চালু করা৷ তার মানে, গণতন্ত্র থাকবে, কিন্তু একটি নির্দিষ্ট জাতি, ভাষা, ধর্মের ভিত্তিতে৷ যার কিছুটা উদাহরণ আমরা মিয়ানমারে দেখছি৷ সু চি এসেছেন, কিন্তু রোহিঙ্গাদের ওপর ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷'' সেলিমের দাবি, ''উত্তর প্রদেশেও যোগী তাই করছেন৷ ধর্ম, ভাষা, খাদ্যকে ব্যবহার করে প্রোফাইলিং করা হচ্ছে৷ সরকার পক্ষপাতদুষ্ট৷ তাই রুল ছা়ড়াই লোককে চিহ্নিত করা হচ্ছে, কাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, কাকে ডিটেনশন শিবিরে পাঠানো হবে, কাকে ফেরত পাঠানো হবে৷ এটা আমাদের গণতন্ত্রের ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত৷''
তৃণমূল সাংসদ এবং আইনজীবী সুখেন্দু শেখর রায়ও মনে করেন, উত্তর প্রদেশ সরকার এ ক্ষেত্রে আইনের পথে হাঁটছে না৷ ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন,''আইন তৈরি হওয়ার পর সরকার তার রুল বা নিয়ম তৈরি করে৷ কীভাবে সরকার এই আইনরূপায়ণ করবে, তা রুলে বলা হয়৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে এখনও রুল তৈরি হয়নি৷ গেজেটে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে মাত্র৷ তাই কোনও সরকার এই আইনকে হাতিয়ার করে বিদেশি চিহ্নিত করতে পারে না৷ করলে সেটা বেআইনি। যোগী সরকার তাই সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিদেশি চিহ্নিতকরণের কাজ করছে৷''
বিতর্ক সত্ত্বেও উত্তর প্রদেশ সরকার 'বিদেশি' চিহ্নিতকরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷ সিএএ মামলা সুপ্রিম কোর্টে উঠবে মাস খানেক পরে৷ তখন আবার এই আপত্তির কথা জানাতে পারেন সিংভিরা৷ ততদিনে অবশ্য উত্তর প্রদেশে 'বিদেশি' চিহ্নিতকরণের কাজ অনেকটাই এগিয়ে যাবে৷
জিএইচ/কেএম