এবোলা দমনে সনাতন পদ্ধতি
১৮ আগস্ট ২০১৪‘বিকল্প থেরাপি ও প্রাকৃতিক ভেষজ চিকিত্সা কেন্দ্র’-টি লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়ার ছোট এক পৌর এলাকায় অবস্থিত৷ আফ্রিকার অনেক মানুষ সনাতন চিকিত্সা প্রথায় বিশ্বাস করেন৷ তাই অসুখ বিসুখ হলে এই কেন্দ্রে আসেন তারা৷ ‘‘আমি জ্বর, ম্যালেরিয়া, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি ভালো করে থাকি৷ এ জন্য যে সব ওষুধ ব্যবহার করি, সেসব গাছের শেকড় থেকে প্রস্তুত করা হয়৷’’ বলেন কেন্দ্রটির চিকিত্সক পিস বেলো বা ‘ডক্টর পিস’৷
তিনি আরো জানান, ‘‘তবে এবোলা রোগীদের চিকিত্সা আমি করি না৷ অবশ্য কেউ এই রোগটি নিয়ে আমার কাছে আসেনি এখনও৷ আমার কাছে এমন কিছু নেই, যা দিয়ে আমি তাদের ভাল করতে পারি৷’’
একই সুর প্রতিবেশী দেশেও
প্রতিবেশী দেশ গিনির হিলার মুসা ট্রাওর-এর কণ্ঠেও একই সুর শোনা যায়৷ ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে রোগটি সম্পর্কে বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ তাই এবোলা রোগীদের চিকিত্সা করেন না তিনি৷
মুসার কথায়, ‘‘আমাদের বলা হয়েছে যে, কোনো রোগীর এবোলার লক্ষণ দেখলে সরাসরি নির্ধারিত চিকিত্সা কেন্দ্রে তাঁকে পাঠিয়ে দিতে এবং কর্তৃপক্ষকে খবরটি জানাতে৷’’
এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সঠিক৷ বলেন সিয়েরা লেওনের রেডক্রসের মুখপাত্র আবুবকর তারাওয়ালি৷ তাঁর দেশেও অনেক মানুষ অসুখ-বিসুখ হলে সনাতন চিকিত্সকদের কাছে যান৷ আবুবকর ও তাঁর সহকর্মীরা এই হিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন৷ তাঁদের পরামর্শ: ‘‘এবোলায় আক্রান্তরা তাদের কাছে এলে এইসব রোগীকে গ্রহণ বা চিকিত্সা না করতে৷’’ এর পরিবর্তে এইসব রোগীকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া কিংবা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত৷
বড় চ্যালেঞ্জ
আবুবকর জানান, এবোলার লক্ষণ সিয়েরা লিওনেও দেখা যাচ্ছে৷ তবে সবাইকে ডাক্তার ও সাহায্য সংস্থাগুলির পরামর্শ শোনানোটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ এখনও অনেকে মনে করেন, ব্ল্যাক ম্যাজিক কিছু রোগ সারাতে পারে৷
চিকিত্সকদের প্রতি আস্থার অভাব
এছাড়া হাসপাতাল ও চিকিত্সকদের প্রতি আস্থার অভাবও রয়েছে৷ সিয়েরা লিওনে এবোলার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে একটি খবরও ছড়িয়ে পড়ে, যার এবোলা হয়েছে সে মারা যাবে৷ তাই অনেকের মনেই এই প্রশ্ন দেখা দেয়: ‘‘আমি কেন হাসপাতালে যাব? ডাক্তাররা যখন বলেই দিয়েছেন যে আমি আর বাঁচবো না৷’’
বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষরা হাসপাতাল এড়িয়ে চলেন৷ তাঁরা হিলারদের কাছে যান৷ অথবা হাসপাতালে গেলেও সাফল্য না দেখে আবার সনাতন পদ্ধতির ডাক্তারের শরণাপন্ন হন৷ দুটি বিষয়ই মহামারির জন্য বিপজ্জনক৷ এতে করে অসুখটি দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয় না৷ রোগীকে আলাদা না করায় ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাস৷
ইতোমধ্যে সিয়েরা লিওনের হাসপাতালগুলিকে পাহারা দেওয়ার জন্য সেনা নিয়োগ করা হয়েছে, যাতে পরিবারের লোকজন ডাক্তারদের পরামর্শের বিরুদ্ধে রোগীকে জোর করে বের করে নিয়ে যেতে না পারে৷ উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে এবোলার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর পশ্চিম আফ্রিকায় মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে৷
দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে
গিনি থেকে প্রতিবেশী লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনেতে বিস্তৃত হয়েছে এবোলার ভাইরাস৷ সম্প্রতি আরো দূরের দেশ নাইজেরিয়ায় পৌঁছেছে এই ভাইরাসের থাবা৷
ভুক্তভোগী দেশগুলিতে অনেক মানুষই এই রোগের অস্তিত্ব স্বীকার করতে চান না৷ নিজের কিংবা আত্মীয়স্বজনের এবোলা হলেও তা জানাতে সংকোচ বোধ করেন৷ এর ফলে এবোলা-সংকটকে দমন করা আরো দুরূহ হয়ে উঠেছে৷ এ কারণে ভুক্তভোগী দেশগুলিতে মানুষকে সচেতন করার ক্যাম্পেন শুরু করেছেন চিকিত্সক ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ৷ এবোলার লক্ষণ, যেমন জ্বর, মাথাব্যথা ও পেশিব্যথা হলে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা৷
এক্ষেত্রে হিলারদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ৷ রেডক্রসের আবুবকর জানান, ‘‘কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় হিলার আমাদের টিমের সঙ্গে আছেন৷ তাঁরা এবোলা ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করেন৷ এবোলা যে হিলারদের কাছে নয় হাসপাতালে যাওয়ার মতো একটি ব্যাধি, সেই তথ্যও পৌঁছে দেন তাঁরা মানুষের কাছে৷’’