ওটিটির এগিয়ে চলা, অনেক সম্ভাবনা ও কিছু বাধা
নতুন বাস্তবতার জগতে ঢুকে পড়েছে দেশের বিনোদন। দেশীয় সব কনটেন্টে ‘সিনেমার কালচারে’ এগিয়ে থাকা কলকাতাকেও অনায়াসে টেক্কা দিচ্ছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো। কী সেই জাদু? জানাচ্ছেন দেশের ওটিটি জগতের পেশাদাররা।
চঞ্চল চৌধুরী (অভিনেতা)
‘‘প্রথম দিকে ওটিটি অন্য দেশের অনুসরণে ছিল। এরপর আমি যখন তাকদীর করলাম, আমি বলবো তখন থেকেই ওটিটিতে আমাদের গল্প বলা শুরু হলো। এক কথায় আমার কাছে ওটিটি এগিয়ে যাবার কারণ- কোয়ালিটি। যে প্ল্যাটফর্মগুলো আছে, সেগুলোতে মান বজায় রাখার চেষ্টা আছে। মেকিংয়ের ক্ষেত্রে যত্ন আছে, আছে বাজেট, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সর্বোপরি আছে প্রফেশনালিজম।’’
নুসরাত ইমরোজ তিশা (অভিনেত্রী)
‘‘সারা বিশ্বে এখন ওটিটি এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও তাই। এগিয়ে যাবার পেছনে স্ট্র্যাটেজি, বাজেট, নির্মাতার স্বাধীনতা- অনেকগুলো বিষয়ই কাজ করছে। সবচেয়ে ভালো বিষয়, দর্শক আরাম করে কোনো বিজ্ঞাপনবিরতি ছাড়া দারুণ সব কন্টেন্ট দেখতে পাচ্ছে। হ্যাঁ, সে টাকা দিচ্ছে। কিন্তু বিনোদনটা শতভাগ। তবে মাধ্যমটির সবে যাত্রা শুরু হলো তো, প্রচুর ভালো কাজ হচ্ছে! এটাই সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।’’
সৈয়দ আহমেদ শাওকি (নির্মাতা)
দর্শকই বড় বিচারক। আমি বলবো, এক সময় টেলিভিশন আর বিজ্ঞাপন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ‘কনটেন্ট’ দর্শক গিলতে বাধ্য হতো। ওটিটি সেই দায়িত্ব দর্শকের হাতে তুলে দিয়েছে। তারা টাকা দিয়ে ‘কনটেন্ট’ দেখছে। তাই প্ল্যাটফর্মের জন্য ভালো কন্টেন্ট বানানো ছাড়া উপায়ও নেই। আর ভালো কন্টেন্ট মানেই এগিয়ে যাওয়া। এটা সহজ সমীকরণ। আরো একটি বিষয়, নির্মাতা এখানে কোনো বাধা ছাড়াই তার গল্প বা ভাবনাটা বলতে পারছে।
আজমেরি হক বাঁধন (অভিনেত্রী)
‘‘বাজেটের দিক থেকে ওটিটি এগিয়ে। এগিয়ে, গল্প বলার স্বাধীনতায়। তরুণ নির্মাতারা তাদের মতো করে গল্প বলার সাহসটা পাচ্ছে। তাই দর্শক বেশি কানেক্ট করতে পারছে। একজন অভিনেত্রী হিসেবে বলবো, আমি অনেক ধরনের চরিত্র করার সুযোগ পেয়েছি, যা আগে পাইনি। আমাদের সিনেমায় বা অন্য মাধ্যমে মেয়েদের সব ধরনের চরিত্রে দেখা যায় না। ওটিটি তার ব্যাতিক্রম।’’
আবু শাহেদ ইমন (নির্মাতা ও প্রযোজক)
‘‘ওটিটিতে এখন ভালো বিনিয়োগ হচ্ছে। আরেকটি বিষয়- সরাসরি দর্শকের সংযুক্তি। অল্প কিছু টাকায় সে ভালো কন্টেন্ট পাচ্ছে। আর বিনিয়োগের কারণে কন্টেন্ট তৈরিতে যত্ন নেয়া যাচ্ছে। সংগীত, শিল্প, অভিনয়, শিল্প নির্দেশনা, কস্টিউম ডিজাইন, স্টোরি বাছাইয়ে একটা বড় ‘কমিশনিং’ টিম কাজ করছে। সুপারভাইজ করছে। তাই দর্শকের চাহিদা মেটাতে পারছে। তবে একটাই সমস্যা- পাইরেসি। এটি না হলে ওটিটি’র ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।’’
মীর মোকাররম হোসেন (নির্মাতা ও প্রযোজক)
‘‘স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম এগিয়ে যাচ্ছে, বলা ঠিক হবে না। বিকশিত হবার চেষ্টা করছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। দর্শক বা কন্টেন্ট, যা-ই বলি না কেন, বিশ্বের সাথে তুলনায় এখনও পিছিয়ে। কিছু কাজ হচ্ছে যা প্রতিশ্রুতিময়। এখনও অনেক কিছুই বাকি। অল্প কিছু মানুষ কাজ করছে। প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা সীমিত, কিউরেশনের জায়গায় দুর্বল, প্রফেশনালস তৈরির ইন্সটিটিউশনের অভাব, স্কিলড ম্যানপাওয়ার নেই। অবকাঠামোগত দুর্বলতা আছে।’’
তাসনিয়া ফারিণ (অভিনেত্রী)
প্যানডেমিক অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। ওটিটি ঐ সময়টাতেই এলো। এই মাধ্যমটি এগিয়ে যাবার কারণ আমার কাছে, দর্শকের হঠাৎ পাওয়া স্বাধীনতা। আরেকটি বিষয়- দর্শক অর্থ দিয়ে দেখছে। ফ্রি কন্টেন্টের চেয়ে এই জায়গায় এগিয়ে থাকছে ওটিটি। আমার ক্ষেত্রে বলবো, বাজেট বেশি পাচ্ছি, মনোযোগ বেশি দিতে পারছি। এমনকি একটা ‘পজ’ কিংবা ‘সাইলেন্ট মোমেন্ট’ও এখানে অনেক মূল্যবান। আমি সেই মোমেন্টটাও দর্শকের জন্য মূল্যবান করে তুলি।
তানিম নূর (নির্মাতা)
‘‘বিনোদন এখন ফিঙ্গার টিপসে চলে গেছে। অসীম সেই সুযোগটা দর্শক লুফে নিচ্ছে। ডিস্ট্রিবিউশনটাই পরিবর্তনটা করেছে। সেই সিনেমা থেকেই সব শুরু। ন্যারেটিভটা একই রইলো। খালি মাধ্যমটা পরিবর্তন হলো। তবে এখনও দেশে দর্শক ফ্রি সাবস্ক্রিপশনে দেখতে চায়। কিন্তু সময়ের সাথে তা বাড়ছে। সাবস্ক্রাইব করে দেখার সংস্কৃতিটা গড়ে উঠতে সময় লাগবে। দেশে ওটিটি নিয়ে এখনো আইনটাও ঠিক করে করা হয়নি।’’
শঙ্খ দাশগুপ্ত (নির্মাতা)
‘‘আপনি গেল দুই-তিন বছরে যে কাজগুলো নিয়ে দর্শকের আলোচনা দেখবেন, তা ওটিটি’রই। আরো একটি বিষয়- মানুষ ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। ওটিটি ডিভাইসটিও ব্যক্তিগত। দর্শক তার অবসর সময় সেই ডিভাইসটিই বেছে নিচ্ছে। আরেকটি বিষয়- বিভিন্ন শ্রেণীর দর্শককে টানতে পারছে ওটিটি। আমরাও ধীরে ধীরে দর্শকের রুচি ধরতে পারছি। আরো সময় গেলে এটি একটি কার্যকর জায়গায় পৌঁছাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’’