1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কঠোর লকডাউন কতটা কঠোর হবে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৬ জুন ২০২১

বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রথম ‘লকডাউন’ শব্দটি ব্যবহার করা হলো৷ এর আগে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ বলা হলেও এবার লকডাউনের সাথে কঠোর শব্দটিও ব্যবহার করা হয়েছে৷ তবে অতীতের অভিজ্ঞতায় প্রশ্ন উঠেছে কঠোর লকডাউন কেমন হবে?

https://p.dw.com/p/3vbEE
Bangladesch Dhaka | Coronakrise: Exodus durch Lockdown
ছবি: bdnews24

বাংলাদেশে সোমবার থেকে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে৷ করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যল কমিটির ১৪ দিনের শাটডাউনের প্রস্তাবে এই ঘেষণা দেয়া হয়েছে৷ প্রাথমিকভাবে সাত দিনের জন্য সিদ্ধান্ত হলেও তা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে৷ টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মো, শহীদুল্লাহ বলেন, ‘‘সংক্রমণ ঠেকাতে হলে লকডাউন হতে হবে কারফিউর মতো৷’’

গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়৷ ১৮ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়৷ ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি দিয়ে করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়৷ আর এবার করোনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে কঠোর বিধিনিষেধ এবং আঞ্চলিক লক ডাউন চলছে৷

কামরুল ইসলাম

বাংলাদেশে অতীতে লকডাউন এবং কড়াকড়ি নিয়ে বিচিত্র ধরনের অভিজ্ঞতা আছে৷ পোশাক কর্মীদের ছুটি দিয়ে আবার করেনার মধ্যেই ফিরিয়ে আনা হয়েছিল৷ গণপরিবহন বন্ধ রেখে ব্যক্তিগত যানবাহন চলেছে৷ এখনো সারাদেশে কড়াকড়ি রয়েছে, কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছুই খোলা রয়েছে৷ স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানার ক্ষেত্রেও রয়েছে উদাসীনতা৷ ঢাকার চারপাশের সাত জেলায় লকডাউন দিয়ে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে৷ মানুষ যেকোনো উপায়ে ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন৷ আবার ঢাকায়ও মানুষ আসছেন৷ দূর পাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকলেও এই যাত্রা থামানো যাচ্ছে না৷ সোমবার থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণার পরও অনেকে ঢাকা ছাড়ছেন৷ একইভাবে ঢাকায়ও আসছেন সমানভাবে৷

এখনো লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি৷ তবে লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী এবং বিজিবি মোতায়েন থাকবে বলে জানানো হয়েছে৷ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশনাও থাকছে৷ জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার জন্য পুলিশের কাছ থেকে এবারও মুভমেন্ট পাস নিতে হবে৷

জরুরি সেবা ছাড়া দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত, শিল্প কারখানা, যানবাহন চলাচল সব কিছু বন্ধ থাকবে৷ আর্থিকসহ অন্যান্য সেবা দেয়ার প্রয়োজনে কিছু অফিস সীমিত আকারে খোলা থাকবে৷ সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা লকডাউনের আওতায় পড়বেন না৷ তবে পোশাক কারখানা খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন পোশাক কারখানার মালিকরা৷

ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট ও করোনা টিকা

সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার জানান, ‘‘রবিবার কঠোর লকডাউন নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে৷ তাতে সুনির্দিষ্টভাবে গাইড লাইন থাকবে৷ তবে কেউ যাতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে না পারেন তা নিশ্চিত করা হবে৷’’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘‘লকডাউন কার্যকর করতে হলে সাম্যতার প্রয়োজন হয়৷ গণপরিবহন বন্ধ থাকবে কিন্তু ব্যক্তিগত যানবাহন চলবে এটা হয় না৷ পোশাক কারখানা খোলা থাকবে কিন্তু দোকানপাট বন্ধ থাকবে সেটাও হয় না৷ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সব বন্ধ রাখতে হবে৷ করোনা ছাড়ানো বন্ধ করতে হলে সঠিকভাবে লকডাউন কার্যকর করতে হবে৷ এরজন্য অতীতে সঠিক কোনো পরিকল্পনা ছিলো না ৷ ফলে সফল হয়নি৷ এবার যে কঠোর লকডাউনের কথা বলা হচ্ছে তার জন্য পরিকল্পনা কী তা এখনো স্পষ্ট নয়৷’’

ডা. লেনিন চৌধুরী

একই ধরনের কথা বলেন বিএসএমইউ'র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনের আগে একটি প্রস্তুতি থাকতে হয়৷ লকডাউনের সময় পুরো দেশ কীভাবে চলবে৷ জরুরি সেবাসহ খাদ্য ও পণ্য সরবরাহ কীভাবে হবে তার গাইডলাইন থাকতে হয়৷ লকডাউন মানতে আইনের প্রয়োগ করতে হয়৷ কিন্তু এখানো সেই পরিকল্পনা স্পষ্ট নয়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনে গরিব মানুষ কী খাবে৷ তাদের ঘরে রাখা যায় কীভাবে তার সুনির্দিষ্ট পরিকলল্পনা দিতে হয়৷ তাদের যদি খাবার না থাকে, আয় না থাকে তাহলে তাদের ঘরে আটকে রাখা যাবে না৷ তাই তাদের যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করতে হবে৷ আর মানুষ যাতে ঘরে বসে খাদ্য ও জরুরি সেবা পেতে পারে তার সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না পারলে লকডাউন কার্যকর করা অসম্ভব৷’’

এদিকে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলছে৷ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন চার হাজার ৩৪৩ জন৷ শনাক্তের হার সাড়ে ২২ শতাংশ৷ একদিন আগে এই হার ছিলো ২১ দশমিক দুই শতাংশ৷ গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৭৭ জন৷ জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ মনে করেন, বাংলাদেশে এখন করোনার সংক্রমণ খুবই উচ্চ হারের৷ তাই সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লকডাউন কার্যকর করার কোনো বিকল্প নাই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান