কঠোর লকডাউন কতটা কঠোর হবে
২৬ জুন ২০২১বাংলাদেশে সোমবার থেকে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে৷ করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যল কমিটির ১৪ দিনের শাটডাউনের প্রস্তাবে এই ঘেষণা দেয়া হয়েছে৷ প্রাথমিকভাবে সাত দিনের জন্য সিদ্ধান্ত হলেও তা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে৷ টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মো, শহীদুল্লাহ বলেন, ‘‘সংক্রমণ ঠেকাতে হলে লকডাউন হতে হবে কারফিউর মতো৷’’
গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়৷ ১৮ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়৷ ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি দিয়ে করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়৷ আর এবার করোনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে কঠোর বিধিনিষেধ এবং আঞ্চলিক লক ডাউন চলছে৷
বাংলাদেশে অতীতে লকডাউন এবং কড়াকড়ি নিয়ে বিচিত্র ধরনের অভিজ্ঞতা আছে৷ পোশাক কর্মীদের ছুটি দিয়ে আবার করেনার মধ্যেই ফিরিয়ে আনা হয়েছিল৷ গণপরিবহন বন্ধ রেখে ব্যক্তিগত যানবাহন চলেছে৷ এখনো সারাদেশে কড়াকড়ি রয়েছে, কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছুই খোলা রয়েছে৷ স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানার ক্ষেত্রেও রয়েছে উদাসীনতা৷ ঢাকার চারপাশের সাত জেলায় লকডাউন দিয়ে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে৷ মানুষ যেকোনো উপায়ে ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন৷ আবার ঢাকায়ও মানুষ আসছেন৷ দূর পাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকলেও এই যাত্রা থামানো যাচ্ছে না৷ সোমবার থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণার পরও অনেকে ঢাকা ছাড়ছেন৷ একইভাবে ঢাকায়ও আসছেন সমানভাবে৷
এখনো লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি৷ তবে লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী এবং বিজিবি মোতায়েন থাকবে বলে জানানো হয়েছে৷ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশনাও থাকছে৷ জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার জন্য পুলিশের কাছ থেকে এবারও মুভমেন্ট পাস নিতে হবে৷
জরুরি সেবা ছাড়া দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত, শিল্প কারখানা, যানবাহন চলাচল সব কিছু বন্ধ থাকবে৷ আর্থিকসহ অন্যান্য সেবা দেয়ার প্রয়োজনে কিছু অফিস সীমিত আকারে খোলা থাকবে৷ সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা লকডাউনের আওতায় পড়বেন না৷ তবে পোশাক কারখানা খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন পোশাক কারখানার মালিকরা৷
সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার জানান, ‘‘রবিবার কঠোর লকডাউন নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে৷ তাতে সুনির্দিষ্টভাবে গাইড লাইন থাকবে৷ তবে কেউ যাতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে না পারেন তা নিশ্চিত করা হবে৷’’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘‘লকডাউন কার্যকর করতে হলে সাম্যতার প্রয়োজন হয়৷ গণপরিবহন বন্ধ থাকবে কিন্তু ব্যক্তিগত যানবাহন চলবে এটা হয় না৷ পোশাক কারখানা খোলা থাকবে কিন্তু দোকানপাট বন্ধ থাকবে সেটাও হয় না৷ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সব বন্ধ রাখতে হবে৷ করোনা ছাড়ানো বন্ধ করতে হলে সঠিকভাবে লকডাউন কার্যকর করতে হবে৷ এরজন্য অতীতে সঠিক কোনো পরিকল্পনা ছিলো না ৷ ফলে সফল হয়নি৷ এবার যে কঠোর লকডাউনের কথা বলা হচ্ছে তার জন্য পরিকল্পনা কী তা এখনো স্পষ্ট নয়৷’’
একই ধরনের কথা বলেন বিএসএমইউ'র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনের আগে একটি প্রস্তুতি থাকতে হয়৷ লকডাউনের সময় পুরো দেশ কীভাবে চলবে৷ জরুরি সেবাসহ খাদ্য ও পণ্য সরবরাহ কীভাবে হবে তার গাইডলাইন থাকতে হয়৷ লকডাউন মানতে আইনের প্রয়োগ করতে হয়৷ কিন্তু এখানো সেই পরিকল্পনা স্পষ্ট নয়৷’’
তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনে গরিব মানুষ কী খাবে৷ তাদের ঘরে রাখা যায় কীভাবে তার সুনির্দিষ্ট পরিকলল্পনা দিতে হয়৷ তাদের যদি খাবার না থাকে, আয় না থাকে তাহলে তাদের ঘরে আটকে রাখা যাবে না৷ তাই তাদের যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করতে হবে৷ আর মানুষ যাতে ঘরে বসে খাদ্য ও জরুরি সেবা পেতে পারে তার সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না পারলে লকডাউন কার্যকর করা অসম্ভব৷’’
এদিকে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলছে৷ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন চার হাজার ৩৪৩ জন৷ শনাক্তের হার সাড়ে ২২ শতাংশ৷ একদিন আগে এই হার ছিলো ২১ দশমিক দুই শতাংশ৷ গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৭৭ জন৷ জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ মনে করেন, বাংলাদেশে এখন করোনার সংক্রমণ খুবই উচ্চ হারের৷ তাই সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লকডাউন কার্যকর করার কোনো বিকল্প নাই৷