‘কঠোর লকডাউন’ কি শিথিল হয়েছে?
২২ এপ্রিল ২০২১নাকি মাঠ পর্যায়ে লকডাউন বাস্তায়নের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা শিথিলতা দেখাচ্ছে? সরকার-পুলিশ সবাই বলছে, লকডাউন শিথিল করা হয়নি। মানুষকে ঘরে বন্দি রাখা খুব কঠিন। তবে যারা বের হচ্ছেন তারা প্রয়োজনেই বাইরে যাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এটা নন মেডিকেল লকডাউন। এই লকডাউনের সঙ্গে মেডিকেল কম্পনেন্ট নেই। ফলে এই লকডাউন কোন কাজে আসছে না। লকডাউন দেওয়ার উদ্দেশ্য কী? মানুষকে ঘরে বন্দি করে রাখা? এটা দেওয়া হয়েছে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। সে জন্য সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
সেটা কী হচ্ছে? তা তো হচ্ছে না। এখন একজন যদি সংক্রমিত হন, তাকে আইসোলেশনে রাখতে হবে। যে পরিবার পজেটিভ হয়নি, তাদের চলাচলে সমস্যা নেই। শুধু স্বাস্থ্যবিধি মানলেই হবে। আমরা বলেছিলাম, প্রতিটি ওয়ার্ডে একটা করে পরীক্ষাকেন্দ্র রাখতে আর সেখানে পরীক্ষা করে যারা সংক্রমিত হয়েছেন তাদের আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে। শুধু লকডাউন দিয়ে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে তো কাজ হবে না। মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থা করতে হবে।”
চেকপোস্টে কী পুলিশ শিথিলতা দেখাচ্ছে? নতুন কোন নির্দেশনা এসেছে কী-না জানতে চাইলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "নতুন কোন নির্দেশনা আসেনি। পুলিশ কঠোরভাবেই লকডাউন বাস্তবায়ন করেছে। আমাদের চেকপোস্টগুলো সচল আছে। সেখানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কোন চেকপোস্টও কমানো হয়নি।”
গত ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এই লকডাউনের মেয়াদ ছিল। পরে সেটা আরো ৭দিন বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু পেশার মানুষ ছাড়া অন্যদের বাইরে বের হতে হলে পুলিশের কাছ থেকে মুভমেন্ট পাস নিতে হবে। যদিও অনেকেই অভিযোগ করেছেন, পুলিশের মুভমেন্ট পাস পাওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে ঢোকাই যাচ্ছে না। ফলে পাস ছাড়াই জরুরি প্রয়োজনে বের হতে হচ্ছে।
কঠোর লকডাউন কি শিথিল করা হয়েছে? মাঠ পর্যায়ে যারা এই লকডাউন বাস্তায়ন করছেন তাদের কাছে নতুন কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "না, নতুন কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন চলবে।” তাহলে হঠাৎ করেই রাস্তায় এত গাড়ি কেন বের হল? চেকপোস্টে পুলিশ কী শিথিলতা দেখাচ্ছে? জবাবে তিনি বলেন, "আমার মনে হয়, পুলিশ কোন শিথিলতা দেখাচ্ছে না। সমস্যা হয়েছে, আমাদের তো ঘরে আটকে রাখা কঠিন। তবে যারা বের হচ্ছেন তারা কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানছেন।
সবার মুখে আপনি মাস্ক দেখতে পাবেন। আমার মনে হয়, যারা বের হচ্ছেন তারা হয়তো হাসপাতালে যাতায়াত করছেন। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু পেশার মানুষকে তো বের হতেই হবে। রাস্তায় কিন্তু গণপরিবহন চলছে না। যেগুলো চলছে, কিছু ব্যক্তিগত আর পণ্যবাহী গাড়ি। দোকানপাট মার্কেট বন্ধ। অফিস-আদালতও বন্ধ। সাধারণ মানুষ কিন্তু ঘরেই আছেন। যদিও মার্কেট খুলে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা চাপ দিচ্ছেন। আমরা বলেছি, ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সবকিছু বন্ধ থাকবে। আমার বিশ্বাস, এই ১৫ দিনের লকডাউন বাস্তবায়ন করা গেলে সংক্রমনের চেইনটা ভাঙা যাবে।”
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। অধিকাংশই ব্যক্তিগত যানবাহন। তবে সিএনজি অটোরিক্সাও বের হয়েছে। অবাধে চলাচল করছে রিক্সা। বেলা ১২টার দিকে তো বিজয় সরণি ট্রাফিক সিগন্যালে যাথারীতি জ্যামেও পড়তে হয়েছে। মিরপুর থেকে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামটর হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত কোথাও চেকপোস্টে পুলিশের জেরার মুখোমুখি হতে হয়নি। অবাধেই চলাচেলা করছেন বাইরে বের হওয়া মানুষ।