করোনায় আক্রান্ত অমিত শাহ হাসপাতালে
৩ আগস্ট ২০২০সারা দেশে করোনা-নীতি তৈরি করছিলেন তিনি। দিল্লিতে করোনা আটকানোর ভারও নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন। সেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তিনি নিজেই হিন্দিতে টুইট করে জানিয়েছেন, করোনার মৃদু উপসর্গ আছে। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অমিত শাহকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাননি চিকিৎসকরা।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় অমিত শাহ আগামী বুধবার অযোধ্যায় মমন্দিরের ভূমিপুজোর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না। ঘটনা হচ্ছে, তিনি গত কয়েক দিনে প্রচুর নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করেছেন, বৈঠক করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধ, সকলে যেন করোনার পরীক্ষা করিয়ে নেন এবং নিজেকে আইসোলেশনে রাখেন। গত ২৯ জুলাই তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকেও যোগ দিয়েছিলেন, যেখানে নতুন শিক্ষানীতি অনুমোদিত হয়। সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ অন্য মন্ত্রীরা ছিলেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকা বলছে, যাঁরা দিন তিন-চার আগেও করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁরা যেন কিছুদিন আইসোলেশনে থাকেন। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের ওপরও এই নিয়ম খাটে। প্রধানমন্ত্রীর আবার বুধবার ১২টা ১৫ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে রামমন্দিরের ভূমিপুজোয় থাকার কথা ও রুপোর ইট প্রতিষ্ঠা করার কথা। তবে সরকারি আধিকারিকদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক যাবতীয় সতর্কতা নিয়ে হয়। প্রত্যেকের মধ্যে অন্তত ছয় ফুটের দূরত্ব থাকে। প্রত্যেকের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ২৯ জুলাইয়ের বৈঠকেও সব সতর্কতা ছিল। মন্ত্রিসভার বৈঠকের ছবিতেও দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহের মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব আছে।
শাহের সঙ্গে গত কয়েক দিনে প্রচুর রাজনৈতিক নেতা, কর্মী, আধিকারিক দেখা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে আছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত সাংসদ সৌমিত্র খান, নিশীথ প্রামাণিক, দেবশ্রী চৌধুরী, রাজু বিস্তা। তাঁরা সকলেই নিজেদের আইসোলেশনে রেখেছেন এবং করোনা পরীক্ষাও করাচ্ছেন। রাজ্যসভা সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তও দেখা করেছিলেন অমিত শাহের সঙ্গে। আসলে গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে রাজ্য বিজেপি নেতাদের দিল্লিতে বেশ কয়েকদিন ধরে বৈঠক ছিল। সেখানে বিজেপি-র বিভিন্ন গোষ্ঠী একে অপরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করে। তাই রাজ্যের অনেক নেতাই অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এ ছাড়া ভূপেন্দ্র যাদবকে সঙ্গে নিয়ে অমিত শাহ গত ২২ জুলাই লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠকও করেন।
রোববার রাতেই কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা জানান, তিনিও করোনায় আক্রান্ত এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ইয়েদুরাপ্পার বয়স ৭৭ বছর। ফলে করোনায় আক্রান্ত হলে তাঁর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া স্বাভাবিক। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর শরীর ভালো আছে। চিকিৎসকদের পরামর্শেই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ইয়েদুরাপ্পা সম্প্রতি রাজ্যপাল বাজুভাই বালার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই। এর আগে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল বানোয়ারিলাল পুরোহিতও করোনায় আক্রান্ত হয়ে চেন্নাইয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে তাঁর উপসর্গ নেই। তিনি ভালো আছেন বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী ৬২ বছর বয়সী কমল রানী বরুণ লখনউয়ের হাসপাতালে মারা গেছেন।
ভারতে এতদিন রাজনীতিকরা খুব বেশি করোনায় আক্রান্ত হননি। কিন্তু হঠাৎ, যেভাবে তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাতে রীতিমতো আলোড়ন শুরু হয়েছে। এখন যেহেতু অল্প কিছু এলাকা ছাড়া লকডাউন কার্যত আর নেই, তাই আক্রান্তের সংখ্যাও হু হু করে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫৫ হাজার জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই অবস্থায় রাজ্যগুলি আবার একদিন বা দুই দিন করে লকডাউন চালু করছে। পশ্চিমবঙ্গে সপ্তাহে দুই দিন করে লকডাউন চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এভাবে এক বা দুই দিনের লকডাউনে করোনা কতটা নিয়ন্ত্রণে আসবে তা আর কিছুদিনের মধ্যে বোঝা যাবে।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)