করোনায় মৃত্যুতে নতুন রেকর্ডে কঠোর লকডাউন শুরু
১৪ এপ্রিল ২০২১বুধবার বিগত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে করোনায় ৯৬ জন মারা গেছেন৷ এটা একদিনে করোনায় মৃত্যুর এপর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যা৷ আর এনিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মারা গেলেন ৯ হাজার ৯৮৭ জন৷ ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ১৮৫ জন৷ আর এপর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাত লাখ ৩১ হাজার ১৭০ জন৷
বুধবার থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে ঢাকার সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে৷ অধিকাংশ সড়কের প্রবেশ পথই অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ তারপরও লোকজন জরুরি প্রয়োজনে ‘মুভমেন্ট পাস' নিয়ে বের হয়েছেন৷ পুলিশ যানবাহন থামিয়ে মুভমেন্ট পাস চেক করে তারপর গাড়ি ছাড়ে৷ তবে মুভমেন্ট পাস ছাড়াও যানবাহন দেখা গেছে৷ তারা বলছেন, মুভমেন্ট পাসের জন্য চেষ্টা করেও পুলিশের ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছেন না৷
ঢাকার ধানমন্ডি, পান্থপথ, কারওয়ারন বাজার, বাংলামটর, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুরে লকডাউনে কিছু ব্যক্তিগত যানবাহন ও রিকশার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে৷ ঢাকার ভেতরে সিটি সার্ভিস ও ঢাকার বাইরের দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ আছে৷ আর ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় যারা ব্যক্তিগত যানবাহনসহ নানা উপায়ে লকডাউনে ঢাকার বাইরের যাওয়ার এখনো চেষ্টা করছেন তারা বিপাকে পড়েছেন৷
বুধবার পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হওয়ায় সরকারি ছুটি৷ রোজারও প্রথম দিন ৷ ফলে লোকজন কতটা লকডাউন মানছেন তা বুঝতে আরো দুই-এক দিন দেখতে হবে৷
এখন যে লকডাউন শুরু হয়েছে তা শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক মত চললে এর সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন৷ তবে সেই সুফল এখন নয়, কমপক্ষে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে৷ আর এখন যে সংক্রমণ ও মৃত্যু তার জন্য অন্তত তিন সপ্তাহ আগের পরিস্থিতি বিবেবচনায় নিতে হবে৷
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে এখন সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে আসবে সেজন্য আগামী কোরবানির ঈদ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে৷ তবে সংক্রমণের এই যে পাগলা ঘোড়া তা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নিম্নগামী হবে বলে তার ধারণা৷
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন," একটু অপেক্ষা করুন৷ এর আগে এক সপ্তাহের সীমিত আকারের লকডাউন এবং এবং এখন যে লকডাউন শুরু হয়েছে তার সুফল পাওয়া যাবে৷ এটা যে বিফলে যাবে তা নয়৷”
তিনি বলেন, সংক্রমণের হার কমাতে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে৷ সরকার এব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে সংক্রমণ ঠেকান কঠিন৷
আর সাধারণভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও বিএসএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম৷ তিনি বলেন," ৭০ ভাগ মানুষ মাস্ক পরছেন না৷ আর করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ৯৬ ভাগ পর্যন্ত কার্যকর তিন স্তরের মাস্ক৷ তাই সংক্রমণ ঠেকাতে হলে যে কোনো উপায়ে মানুষকে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে৷”
আর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার জন্য তিনি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে দায়ী করেন৷ তিনি বলেন, পর্যাপ্ত আইসিইউ ও ও চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছেন৷ হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা হচেছনা৷ হাসপাতালে বেড নাই৷
বাংলাদেশে এখন টেস্টের বিবেচনায় করোনায় আক্রান্তের হার শতকরা ২০.৮৯ ভাগ৷ আর আক্রান্তের হিসেবে মৃত্যুর হার শতকরা ১.৪২ ভাগ৷ গত ২৪ ঘন্টায় ঢাকার সরকারি হাসপতালগুলোতে মাত্র পাঁচটি আইডিইউ বেড খালি ছিলো৷ ড. মুশতাক হোসেন বলেন,'' সংক্রমণ ঠেকিয়ে রোগী কমিয়ে আনতে না পারলে আইসিইউ বেড বাড়িয়েও পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে৷''