কীটনাশক তৈরি, এবং মৌমাছিকে সাহায্য
২৯ মার্চ ২০১৩সারা বিশ্বে মৌমাছির সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে কমে যাওয়ার পিছনে যে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক কীটনাশকের ব্যবহার দায়ী হতে পারে, এ সন্দেহ অনেকদিনের৷ এ নিয়ে যথেষ্ট গবেষণাও হয়েছে৷ এই মার্চ মাসেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফ থেকে তিনটি বিশেষ ধরনের কীটনাশক নিষিদ্ধ করার একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর এবার ইউরোপীয় কমিশন হুমকি দিয়েছে, ইইউ দেশগুলি এ ব্যাপারে শীঘ্র একমত না হলে কমিশন নিজেই নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যবস্থা নেবে৷
ইতিপূর্বে ইইউ-এর ফুড সেফটি বা নিরাপদ খাদ্য সংক্রান্ত তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা এফসা জানায়, যে ধরনের নিওনিকোটিনয়েড কীটনাশকগুলি নিষিদ্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে, সেগুলি মৌমাছির স্বাস্থ্যের পক্ষে বিশেষভাবে বিপজ্জনক৷ যদিও এই কীটনাশকের ব্যবহার এবং মৌমাছিদের মধ্যে তথাকথিত ‘কলোনি কল্যাপ্স ডিজর্ডার' বা মৌমাছির ঝাঁকের মৃত্যুর কোনো সংযোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
সিনজেন্টা এবং বায়ার বলছে, মৌমাছিদের উপর কীটনাশকের প্রভাবের কোনো প্রমাণ নেই এবং কীটনাশকগুলি নিষিদ্ধ করা হলে তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতির পক্ষে একটা বড় আঘাত হবে৷ অপরদিকে এই অচলাবস্থার অন্ত ঘটানোর জন্য তারা একটি পরিকল্পনার প্রস্তাব দিয়েছে, যা মৌমাছিদেরও সাহায্য করবে আবার কীটনাশকের উপর মানুষের আস্থাও ফিরিয়ে আনবে৷
পরিকল্পনাটি হল, ক্ষেতখামার ও মাঠের চারপাশে আরো বেশি করে ফুলের চাষ, যা-তে মৌমাছিরা মধু আহরণ করতে পারে৷ সেই সঙ্গে গবেষণা করে দেখা হবে, মৌমাছির শরীরে নিওনিকোটিনয়েড কীটনাশকের কোনো হদিশ পাওয়া যাচ্ছে কিনা৷ এছাড়া মৌমাছিদের পক্ষে ক্ষতিকর বিভিন্ন প্যারাসাইট ও ভাইরাস নিয়েও গবেষণা করা হবে৷
ইউরোপে অধিকাংশ ফলমূল ও শস্যের পরাগ যোগ করার জন্য মৌমাছি এবং অপরাপর কীটপতঙ্গ অপরিহার্য৷ অপরদিকে এই মহাদেশে ৮০ লাখ হেক্টার চাষজমিতে নিওনিকোটিনয়েড ব্যবহার করা হয়৷ কিন্তু নিওনিকোটিনয়েড কীটনাশকগুলি মৌমাছিদের অন্তর্ধানের জন্য দায়ী কিনা, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যেও মতানৈক্য আছে৷ কিছু বিশেষজ্ঞের মতে মৌমাছিদের বাসভূমি বিনাশ এবং ভারোয়া মাইট-এর মতো প্যারাসাইটই মৌমাছির মৃত্যুর জন্য দায়ী৷
শেষমেষ থাকে আয়-ব্যয়ের হিসেব৷ সিনজেন্টা ও বায়ার-এর অর্থানুকুল্যে সম্পাদিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বীজের উপর নিওনিকোটিনয়েড কীটনাশকের প্রয়োগ পুরোপুরি বন্ধ করলে ইউরোপীয় অর্থনীতির ক্ষতি হবে বছরে ৪৫০ কোটি ইউরো৷ অপরদিকে মৌমাছি এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা শুধু পরাগই আনে না, ইইউ-এর কৃষি খাতে আনে বছরে ২,২০০ কোটি ইউরো মূল্যের খাদ্যপণ্য৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স)