কুৎসায় দুঃখিত অভিজিৎ
২১ অক্টোবর ২০১৯শুরুটা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জির নোবেলপ্রাপ্তির খবরে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, যাঁর মা মারাঠি, স্ত্রী বিদেশি এবং লোকটি নিজে মার্কিন নাগরিক, তাঁকে আদৌ বাঙালি বা ভারতীয় বলা যায় কিনা৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা অন্য কোনও সরকারি পদাধিকারী তখনও একটি টুইটও খরচ করেননি অভিজিতের নোবেলপ্রাপ্তি সম্পর্কে৷ বরং সোশাল মিডিয়া ভরে উঠতে শুরু করেছিল অভিজিতের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাদা ঘাঁটায়৷ ফলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল যখন বললেন, অভিজিৎ বামপন্থী এবং তাঁর তত্ত্বকে ভারতীয়রা বাতিল করে দিয়েছেন, তখন বোঝাই গিয়েছিল যে এটাই বিজেপির অঘোষিত নীতি৷ অভিজিতের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখানো৷
সেই প্রেক্ষিতে বাংলার বিজেপি নেতা এবং দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহার মন্তব্য আদৌ অপ্রত্যাশিত নয়৷ রাহুল সাংবাদিক সম্মেলনে হাসতে হাসতে বললেন, অর্থনীতিতে নোবেল পেতে গেলে দুটো বিয়ে করা এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর বিদেশি হওয়া অন্যতম আবশ্যিক যোগ্যতা কিনা তিনি জানেন না৷ একইসঙ্গে খোঁচা দিলেন অভিজিৎ এবং আরেক নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন–কে৷ তা হলে কি বাঙালি হিসেবে গর্ববোধের কোনও জায়গা নেই এই নোবেলপ্রাপ্তিতে? ডয়চে ভেলের এই প্রশ্নের জবাবে রাহুল সিনহা বললেন, অবশ্যই এটা দেশের এক প্রাপ্তি৷ কিন্তু অভিজিতের একটা নিশ্চিত রাজনৈতিক পক্ষপাত রয়েছে৷ সেখানে নোবেল পুরস্কারকে ঢাল করে অর্থনীতির তত্ত্বকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করায় তাঁদের আপত্তি৷ আর কংগ্রেসের ন্যায় প্রকল্পে অভিজিতের তথ্য–সহযোগিতা নিয়ে রাহুল সিনহার দাবি, ভারতের মানুষ তো সেই তত্ত্ব খারিজ করেছে!
পীযূষ গোয়েলের মন্তব্যের পর রাহুল গান্ধী টুইট করে অভিজিতের উদ্দেশে বলেছেন— এরা (বিজেপি)ঘৃণায় অন্ধ৷ একজন পেশাদার সম্পর্কে এদের কোনও ধারণাই নেই৷ আপনি যদি এদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাও এরা বুঝবে না৷
আর অভিজিতের বক্তব্য, কংগ্রেস তাঁর কাছে তথ্য–সাহায্য চেয়েছিল, তাই তিনি দিয়েছেন৷ একজন পেশাদার হিসেবে৷ বিজেপি চাইলেও দিতেন৷ তিনি এবং তাঁর গবেষক দল যখন গুজরাটে বা মহারাষ্ট্রে কাজ করেন, তখন বিজেপি সরকারের সঙ্গেই কাজ করেন৷ কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, কোনও জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত নয়৷ আর তাঁর যে ব্যক্তিগত চরিত্রহননের চেষ্টা চলছে, তাতে তিনি দুঃখিত৷ এছাড়া আর কিছুই বলার নেই তাঁর৷