1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিকেনিয়া

কেনিয়ায় পুলিশের গুলিতে পাকিস্তানি সাংবাদিকের মৃত্যু ‘বেআইনি’

প্রতিবেদন: সৃষ্টি মঙ্গল পাল/টিএম৯ জুলাই ২০২৪

কেনিয়ায় পুলিশের গুলিতে পাকিস্তানের সাংবাদিক আরশাদ শরিফের মৃত্যুর ঘটনাকে বেআইনি ও অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে দেশটির একটি আদালত৷

https://p.dw.com/p/4i43J
আরশাদ শরিফ ছিলেন পাকিস্তানের টিভি চ্যানেল এআরওয়াই-এর সাংবাদিক৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন তিনি৷
কেনিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত পাকিস্তানের সাংবাদিক আরশাদ শরিফছবি: AP/picture alliance

নাইরোবির দক্ষিণের শহর কাজিয়াদোর হাইকোর্ট সোমবার এ রায় দেয়৷ রায়ে বলা হয়, ২০২২ সালে একজন পাকিস্তানি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে পুলিশ বেআইনিভাবে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগ করেছিল৷

আরশাদ শরিফ ছিলেন পাকিস্তানের টিভি চ্যানেল এআরওয়াই-এর সাংবাদিক৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন তিনি৷ পাকিস্তানি একজন রাজনীতিবিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন৷ সেটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে প্রাণ-ভয়ে পাকিস্তান ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি৷ সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে কেনিয়ায় পৌঁছেছিলেন তিনি৷

২০২২ সালে সংবাদপাঠক ও সাংবাদিক আরশাদ শরিফের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় পুলিশ৷ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শরিফ৷ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, অপহরণের সঙ্গে জড়িত একটি চোরাই গাড়ি ভেবে ভুলবশত আক্রমণ করা হয়েছিল শরিফের উপর৷

বিচারক স্টেলা মুতুকু বলেন, ‘‘শরিফকে মাথায় গুলি করা ছিল বেআইনি ও অসাংবিধানিক৷'' 

ভুল পরিচয়ের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ যে দাবি করেছে সেটিও প্রত্যাখ্যান করেছে কেনিয়ার হাইকোর্ট৷

দীর্ঘদিন ধরে চলা মামলায় অবশেষে ‘ন্যায়বিচার' পেয়েছেন বলে মনে করেন মামলার বাদী শরিফের স্ত্রী জাভেরিয়া সিদ্দিকী৷

সরকারকে ৭৮ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা

গত বছর শরিফ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে অভিযোগ দায়ের করেন তার স্ত্রী জাভেরিয়া ও কেনিয়ার দুটি সাংবাদিক সংগঠন৷

বাদী পক্ষের আইনজীবী ওচিয়েল ডুডলি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, এই রায় ‘‘পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একটি অনন্য নজির৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই বিচারের মধ্য দিয়ে আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে কেনিয়া সরকার আরশাদ শরিফের মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘন করেছে৷''

আদালত তার রায়ে কেনিয়া সরকারকে এক কোটি কেনিয়ান শিলিং বা ৭৮ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে৷ ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত ৩০ দিন বিলম্বিত করতে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন জানালে তা গ্রহণ করে আপিলের সুযোগ দিয়েছে আদালত৷

আদালত রায়ে আরো জানিয়েছে, কেনিয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘অফিস অব দ্য ডিরেক্টর অব পাবলিক প্রসিকিউশনস অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট পুলিশিং ওভারসাইট অথরিটি' জড়িত দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিচার না করে শরিফের অধিকার লঙ্ঘন করেছে৷

দ্য নেশন সংবাদপত্র তাদের এক প্রতিবেদনে বিচারক মুতুকুকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘‘অভিযুক্তরা তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে ভুক্তভোগীর অধিকার লঙ্ঘন করেছে৷''

‘আদালতের রায় ন্যায়সঙ্গত'

কেনিয়ার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ডমিনিক ওয়াবালা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘পুলিশের গুলি চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের দেয়া রায় অবশ্যই ন্যায়সঙ্গত৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ঘটনার দিন পুলিশ নাইরোবিতে একটি গাড়ি চুরি সম্পর্কে অভিযোগ পেয়েছিলেন৷ চুরি যাওয়া গাড়িটি নাইরোবির বাইরে চলছিল খবর আসে পুলিশের কাছে৷ সেই গাড়ি ভেবে শরিফের গাড়িতে আক্রমণ করেন তারা৷ কিন্তু চুরি যাওয়া গাড়িটির সঙ্গে সাংবাদিকের গাড়ির কোনো মিল পাওয়া যায়নি৷''

তিনি আরো বলেন, পুলিশ ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়েই গুলি চালিয়েছে৷ 

কেনিয়ায় পুলিশি বর্বরতা যেন সাধারণ ঘটনা

কেনিয়ার পুলিশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ এবং বেআইনি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত করে আসছে অধিকার সংস্থাগুলো৷

অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের কর্মকর্তা মুলোঙ্গো ফ্রান্সিস ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ এতে বোঝা যায় যে, বাহিনীতে সংস্কার এবং শক্তিশালী তদারকি ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে৷'' 

বাংলাদেশ: নির্যাতনকারীরা যেভাবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী

সম্প্রতি, কেনিয়া সরকারের কর বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে অন্তত ৩৯ জন বিক্ষোভকারী মারা গেছেন৷ সেই অভিযোগের তীরও পুলিশের দিকে৷

পাকিস্তানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিম্নমুখী

শরিফ পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী এবং শাসকগোষ্ঠীর কট্টর সমালোচক ছিলেন৷ বর্তমানে কারাবন্দি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের একজন সমর্থকও ছিলেন তিনি৷

২০২২ সালে শরিফকে পাকিস্তান ছেড়ে পালাতে হয়েছিল৷ তিনি ইমরান খানের চিফ অব স্টাফ শাহবাজ গিলের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন৷ সেখানে রাজনীতিবিদ গিল বলেছিলেন, সামরিক বাহিনীর জুনিয়র অফিসারদের তাদের ঊর্ধ্বতনদের অন্যায় আদেশ অমান্য করা উচিত৷ এআরওয়াই টিভি সাক্ষাৎকারটি প্রচার করলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়৷ জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা৷ প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে৷ সেখান থেকে আসেন কেনিয়ায়৷

কয়েক দশক ধরে দেশটির সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী৷ দেশটিতে সামরিক বাহিনীর কোনো সমালোচনা সহ্য করা হয় না৷ সাংবাদিকেরা প্রায়ই ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়েন৷

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থান ১৫২ তম৷

পাকিস্তানে ন্যায়বিচার নিয়ে সন্দিহান শরিফের স্ত্রী

বার্তা সংস্থা এএফপিকে শরিফের স্ত্রী জাভেরিয়া বলেন, ‘‘আমি আমার আবেগকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারছি না, আর আমি আরশাদকেও ফিরিয়ে আনতে পারব না৷ কিন্তু, আমি একটি নজির স্থাপন করেছি যে বা যারা একজন সাংবাদিককে হত্যা করে, তারা বিচারের ঊর্ধ্বে নয়৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আজ আমার দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই৷''

ফলে, পাকিস্তানে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে ‘আশাবাদী' নন তিনি৷

কেনিয়ার আদালতের দেয়া রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অবশেষে আমি বুঝতে পারছি যে ন্যায়বিচার অর্জিত হয়েছে৷''