কেন হঠাৎ ‘বিজেপি’-ঝোঁক টলিউডে?
১৯ জুলাই ২০১৯পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বেশ অনেকদিন ধরেই রয়েছে রূপালি পর্দা থেকে রাজনীতির ময়দানে আসার ঝোঁক৷ এই ‘ট্রেন্ড' বিশেষ করে নজরে আসে ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই৷
সিনেমা, সাহিত্য, সঙ্গীত ও নাটক- সব ক্ষেত্রের তারকাদেরই দেখা যায় একে একে তৃণমূল সরকারের পাশে থাকতে৷ শুধু তাই নয়, দলের হয়ে নির্বাচনে লড়েছেন কবীর সুমন, ব্রাত্য বসু, শতাব্দী রায়, মুনমুন সেন বা তাপস পালের মতো ব্যক্তিত্বরা৷ কিন্তু গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির উত্থানের পর থেকেই, পশ্চিমবঙ্গের তারকারা বিভক্ত হয়েছেন৷
নুসরাত জাহান বা মিমি চক্রবর্তীর মতো তরুণ অভিনেতারা এবছর তৃণমূলের হয়ে ভোটের মাঠে নামলেও টেলিভিশনের বেশ কিছু পরিচিত মুখ এর মধ্যে যোগদান করেছেন বিজেপিতে৷
বৃহস্পতিবার নতুন দিল্লীতে ভারতীয় জনতা পার্টির কেন্দ্রীয় অফিসে গিয়ে দলে নাম লেখালেন একঝাঁক টলিউড তারকা৷ যারা বিজেপিতে গেলেন, তারা হলেন: পার্নো মিত্র, ঋষি কৌশিক, মৌমিতা গুপ্ত, রূপাঞ্জনা মিত্র, কাঞ্চনা মৈত্র, অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়, রূপা ভট্টাচার্য, অরিন্দম হালদার (লামা), সৌরভ চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও দেবরঞ্জন নাগ৷ এদের সাথে সেদিন উপস্থিত ছিলেন আগেই বিজেপিতে যোগদান করা দুই অভিনেতা অঞ্জনা বসু ও কৌশিক চক্রবর্তী৷
যোগদান পর্বে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ, দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র ও তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যাওয়া সাবেক মন্ত্রী মুকুল রায়৷
হঠাৎ কেন গেরুয়া শিবিরে যোগদানের হিড়িক টলিউডে?
‘ফিল্ম পাড়া' টালিগঞ্জে তৃণমূল-শাসিত কলাকুশলীদের ইউনিয়নের দাপটে বেশ অনেকদিন ধরেই জর্জরিত বিরোধী মত, বলে মনে করেন দিলীপ ঘোষ৷ তাঁর মতে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস গোটা টলিউড পাড়াকে কুক্ষিগত করে রেখেছে৷ বিজেপির মতো জাতীয় পর্যায়ে শক্তিসম্পন্ন দলে যোগদানের ফলে এই কলাকুশলীরা এখন সাহস পাবেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে৷''
তবে শুধুই কি কর্মস্থলে অসুবিধার জন্য এমন পদক্ষেপ নিলেন এই ১৩ শিল্পী? অনেকেই মনে করছেন, আসন্ন ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই বিজেপির এই পরিকল্পনা৷ সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে তৃণমূলকে টক্কর দিতে পারা রাজনৈতিক দল এই মূহুর্তে বিজেপিই৷ ফলে আসন্ন ভোটের ময়দানে নিজের জায়গা নিশ্চিত করতেই এমন দল-বদল টলিউডের৷
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বাড়ন্ত আসনসংখ্যা শিল্পীদের বিজেপিতে আনার ক্ষেত্রে অনেকটা চুম্বকের কাজ করেছে বলে মনে করছেন অনেকে৷ যদি বা ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়, সেক্ষেত্রে সরকারের সুনজরে থাকতে চেয়েই হয়ত এমন পদক্ষেপ নিলেন এই শিল্পীরা৷
গ্ল্যামার দুনিয়ার সদস্যদের এই দল পাল্টানোকে তৃণমূলনেত্রী কীভাবে দেখছেন, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২১ জুলাই পর্যন্ত৷ উল্লেখ্য, প্রতি বছরই এই দিনে তৃণমূল কংগ্রেস শহীদ দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে, যেখানে ফি বছর উপস্থিত থাকেন দেব, হিরণসহ টলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিরা৷
বৃহস্পতিবার বিজেপিতে যোগ দেওয়া বেশ কয়েকজন অভিনেতা এর আগে পা মিলিয়ে ছিলেন ২১ জুলাইয়ের মিছিলে৷ কিন্তু এবার তাদের অভাব কিছুটা হলেও চোখে পড়বে বলে জানা যাচ্ছে বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া থেকে৷
বিনোদন জগতের শিল্পীদের রাজনৈতিক দলে ‘টানার' এই হিড়িক পশ্চিমবঙ্গে শুরু করেছিলেন মমতাই৷ রাজনীতিতে গ্ল্যামারের ছোঁয়া এনে বিপুলভাবে নিজের পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন এই নেত্রী৷
কিন্তু তাঁর এই অভ্যাসই এখন ভাগ বসাচ্ছে তৃণমূলের জনপ্রিয়তায়৷ শুধু তৃণমূল-ঘেঁষা শিল্পীরাই নন, দল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে ভিড়েছেন একাধিক সাংসদ-বিধায়ক-নেতারাও৷
এই ধাক্কা কি আদৌ সামলে উঠতে পারবেন পশ্চিমবঙ্গে এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? নিজের গোছানো ছকে কি তবে নিজেই বাঁধা পড়ে গেলেন তিনি?