1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
পরিবেশডেনমার্ক

গরু ঢেঁকুরের জন্য কর দিতে হয় যে দেশে

১৫ জানুয়ারি ২০২৫

ডেনমার্ক পৃথিবীর প্রথম দেশ যেটি গরুর ঢেঁকুরের কারণে পরিবেশের ক্ষতির উপর কর আরোপ করেছে৷ ডেনমার্কের কৃষকরা তাতে সম্মতিও দিয়েছেন৷ তবে ইইউতে সামগ্রিকভাবে এধরনের বাড়তি খরচের প্রতিবাদে সরব কৃষকরা৷

https://p.dw.com/p/4pAqH
মাঠে চরতে থাকা একটি গরু
গরুর ঢেঁকুরে নিঃসৃত হওয়া মিথেন গ্যাস গ্রিনহাউজ গ্যাসের অন্যতমছবি: Phil Wilkinson/Sruc/PA Media/dpa

ঢেঁকুর তোলা গরুর বিরুদ্ধে সম্প্রতি ব্যবস্থা নিয়েছে ডেনমার্ক সরকার৷ কারণ সেগুলো ঢেঁকুরের সময় মিথেন গ্যাস ছাড়ে যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ ঢেঁকুর তোলা গরু পালায় তাই কৃষকদের বাড়তি কর দিতে হচ্ছে৷ গবাদি পশু পালনকারী ক্রিস্টিয়ান কখের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলেছে ডিডাব্লিউ, যার আবাস ক্রিস্টিয়ানসফিল্ড নামের এক ছোট্ট গ্রামে৷ একহাজার গরুর মালিক তিনি৷ শুরুতেই গরু কেন ঢেঁকুর তোলে সেকথা জানালেন কখ৷ 

তিনি বলেন, ‘‘মুশকিল হচ্ছে গরু জাবর-কাটা পশু৷ ফলে খাবার কয়েকটি পাকস্থলীর মধ্য দিয়ে যায়৷ আর এই প্রক্রিয়ায় মিথেন উৎপন্ন হয় যা ঢেঁকুর আকারে বের হয়ে যায়৷''

যেহেতু মিথেন পরিবেশের জন্য কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর, তাই ডেনমার্ক ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ গড়ে দশটি গরুর ঢেঁকুরে বছরে এক টন মিথেন নির্গত হয়৷ টন প্রতি এই মিথেনের উপর কর দশ ইউরো৷

এই পরিমান কর দিতে রাজি হয়েছে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলো৷ বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট ডেনমার্কের কৃষি মন্ত্রণালয়ও৷

দেশটির খাদ্য, কৃষি এবং মৎস বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকব ইয়েন্সন বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে বার্তাটি হচ্ছে কৃষকদেরকে আরো পরিবেশবান্ধব খামার গড়তে হবে৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা খামারের কিছু জমি নিয়ে নেবো এবং সেখানে বন গড়বো৷ আর এটা দ্রুত করতে চাই আমরা৷ আমি বিশ্বাস করি কর সংক্রান্ত যে সমঝোতায় আমরা পৌঁছেছি সেটার কারণে এসব কিছু আগের চেয়েও দ্রুত গতিতে করা যাবে৷''

তবে ইউরোপের অন্যত্র এই বিষয়ে সদিচ্ছা অনেক কম৷ জার্মানি এবং ফ্রান্সে কৃষকরা ছোটখাট ইস্যুতেও বড় বড় প্রতিবাদ করেন৷

গবাদি পশু পালক ক্রিস্টিয়ান কখ বলেন, ‘‘আমি মনে করি ডেনমার্কের মানসিকতা একটু আলাদা৷ আমরা সাধারণ মানুষকে বিরক্ত করে ট্রাক্টর নিয়ে প্রতিবাদ করতে চাই না৷''

গরুর ঢেঁকুরে ট্যাক্স!

বন গড়তে আবাসযোগ্য জমি ছেড়ে দেয়াটা ডেনিশ কৃষকদের জন্য এক বড় সিদ্ধান্ত৷ কিন্তু দেশটির লেক আর সমুদ্রের খাঁড়ির মান উন্নয়নে এটা দরকার৷ বাড়াবাড়ি রকমের কৃষিকাজের কারণে সেগুলো দূষিত হচ্ছে৷ জলের আধারের কাছে কম কৃষির মানে পানি দূষণও কম৷

ক্রিস্টিয়ান কখ এটাও জানেন কম ঢেঁকুর উৎপাদন হয় এমন খাবার গরুকে দিলে এসংক্রান্ত করের বোঝাও কমবে৷

ডেনমার্কের পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক সংঘ অবশ্য চায় না কৃষকরা গবাদি পশুর খাদ্য পরিবর্তন করুক৷ এটি মনে করে এসংক্রান্ত চুক্তি বেশ দুর্বল৷

ডেনিশ সোসাইটি ফর নেচার কনজারভেশনের ট্যুঁ ন্যুঁ গর বলেন, ‘‘বিশেষ করে এই অংশটা তত মজবুত নয় যতটা আমরা আশা করেছিলাম৷ আমরা আশঙ্কা করি কিছু কৃষকের হয়ত কোনো করই দিতে হবে না৷ তাই আমরা চুক্তিটি আরো মজবুত আশা করেছিলাম৷''

গরুর ঢেঁকুর সংক্রান্ত করের ব্যাপারে ভিন্নমত সত্ত্বেও অবশ্য সবপক্ষ বর্তমান সমঝোতায় সম্মতি দিয়েছে৷ খাদ্য, কৃষি এবং মৎস বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকব ইয়েন্সন বলেন, ‘‘ডেনমার্কে আমাদের একে অপরের সঙ্গে কথা বলার দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে৷ আমরা একটি ছোট্ট দেশ এবং আমাদের একটি ডেনিশ মডেল রয়েছে যার আওতায় আমরা সবপক্ষ একত্রে বসি৷ সরকার, বিভিন্ন সংগঠন, এক্ষেত্রে কৃষকরা এবং সবুজ সংগঠন মিলে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছেছে৷''

গ্রিনপিসের ক্রিস্টিয়ান ফ্রমবার্গ অবশ্য এই আলোচনার অংশ ছিলেন না৷ তিনি বেশ হতাশ৷ ফ্রমবার্গ বলেন, ‘‘এই চুক্তি গরু, শুকর এবং অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যা অনেকটা স্থির পর্যায়ে রাখবে৷ এটি আসলে অনেক বেশি উদ্ভিদনির্ভর কৃষির বিপরীতে কোনো সমাধান দিচ্ছে না৷ অর্থাৎ এই চুক্তির ফলে আমাদের সাগরগুলো দূষণমুক্ত হবে মনে করছি না৷''

তারপরও এই চুক্তি ইউরোপ এবং বিশ্বের মধ্যে ডেনমার্ককে এক্ষেত্রে অগ্রদূত করেছে৷ ক্রিস্টিয়ান কখের গরুগুলোও নিশ্চিন্তে ঢেঁকুর তুলতে পারছে৷

প্রতিবেদন: অ্যাক্সেল ব়্যুভল্ট/এআই