গলদা চিংড়ি ধরে কে?
২৮ এপ্রিল ২০১৬‘রাজোনাতুরা' পরিবেশ সংরক্ষণ সংগঠনের জীববিজ্ঞানী কিম লেই-কুপার-এর কাজ হলো, পরিবেশের উপর গলদা চিংড়ি ধরার কী প্রভাব পড়ে, সেটা খুঁজে বার করা৷ কিম বলেন, ‘‘গলদা চিংড়িরা আজব জীব! কোনোদিন ভাবিনি যে, আমি নিজে দশ বছর ধরে গলদা চিংড়িদের নিয়ে কাজ করব৷ ওরা যে সামুদ্রিক পরিবেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, সেটা উপলব্ধি করে আশ্চর্য হতে হয়েছে৷ জেলেরা এই গলদা চিংড়ি ধরেই বেঁচে থাকে, কাজেই এটা একটা বহুমুখী প্রকল্প৷''
লেই-কুপার গলদাচিংড়িগুলোর উপর নম্বর লাগান৷ এ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়৷ কেননা গলদা চিংড়িরা বিপুল এলাকা জুড়ে ঘুরে বেড়ায়, সংরক্ষিত এলাকার বাইরেও৷ আবার ধরা পড়লে, তাদের নম্বর দেখে বোঝা যায়, তারা কোন পথ দিয়ে এসেছে আর তাদের সুরক্ষার প্রয়োজন কোথায়৷
চিংড়ির বংশবৃদ্ধি হলে হাঙরেরও সুবিধে
বহু সামুদ্রিক জীব গলদা চিংড়ি খায়৷ গলদা চিংড়িদের বংশবৃদ্ধি হলে, হাঙর, মান্টা রে ইত্যাদি মাছেরা তা থেকে উপকৃত হয়৷ টোপ ফেলে আর জলের নীচের ক্যামেরা বসিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখতে চান, কোন ধরনের প্রাণীরা এ অঞ্চলে পাওয়া যায়৷ কিম জানালেন, ‘‘হাঙরদের দেখতে পেলেই সবচেয়ে ভালো লাগত, কেননা ওরা খুব ইন্টারেস্টিং৷ এছাড়া ওরা যে খাদ্য-খাদক পরম্পরার অঙ্গ, তা-তে গলদা চিংড়িরাও আছে৷ মা হাঙররা খাঁচার তলায় নেমে গলদা চিংড়ি খায়৷ কাজেই হাঙরদের দেখতে পাওয়ার অর্থ, শৈলশিরার জীববৈচিত্র্য ভালোই আছে; লবস্টার ধরার ফলে রিফ-এর ওপর বিশেষ প্রভাব পড়েনি৷''
জলের তলার ক্যামেরায় বাস্তবিক নানা ধরনের জীবজন্তু ধরা পড়েছে৷ যেমন একটি সামুদ্রিক কচ্ছপ ও কয়েকটি হাঙর৷
মেসোঅ্যামেরিকান রিফটির দৈর্ঘ্য পাক্কা এক হাজার কিলোমিটার৷
চিংড়ি সমবায়
সিয়ান কা'ন বায়োস্ফিয়ারের সংরক্ষিত এলাকায় গলদা চিংড়ি ধরতে গেলে ধীবর সমবায়ের সদস্য হতে হবে৷ এ ধরনের সাতটি সমবায় মিলে চিংড়ি চাষের নিয়মকানুন আর চিংড়ির দাম ঠিক করে৷ একটা গলদা চিংড়ির ওজন এক কিলোর মতো৷ তার জন্য জেলেরা দাম পায় কম-বেশি বারো ইউরো, যা থেকে তাদের ভালোভাবেই সংসার চলে যায়৷ কিম লেই-কুপারের মতো বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন, সাগরের পরিবেশ এখানে মন্দ নয়৷ কাজেই সমবায়টি ‘টেকসই' সার্টিফিকেট পেয়েছে৷
কিম লেই-কুপার বললেন, ‘‘সকলেরই আশা থাকে যে, তাদের গবেষণা শুধু বই-এর পাতার মধ্যে সীমিত থাকবে না৷ কাজেই সেটাই তো একটা দারুণ ফলাফল৷ এবং সেই গবেষণা থেকে যদি বাস্তবিক উপকার হয়, জেলেদের সরাসরি উপকার হয়, সেটা তো আরো ভালো৷''
বায়োস্ফিয়ারের সংরক্ষিত এলাকার কাছেই ক্যারিবিয়ানের মেক্সিকান অংশের একাধিক নাম-করা টুরিস্ট স্পট৷
‘চাকাই' চিংড়ি
ধীবর সমবায়ের তরফ থেকে ‘চাকাই' নাম দিয়ে ‘টেকসই' চিংড়ি বিক্রি করা হয়৷ ‘রোজউড' লাক্সারি হোটেলের শেফ হুয়ান পাবলে লোজা সাধারণ গলদা চিংড়ির চেয়ে এই পরিবেশ-বান্ধব চিংড়িই পছন্দ করেন৷ হুয়ান জানালেন, ‘‘মানুষজন এখানে আসেন প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখবার জন্য৷ কাজেই আমাদের সেটাকে শ্রদ্ধা করে চলা উচিত৷ ‘চাকাই' গলদা চিংড়ি হলো এই এলাকার একমাত্র ‘টেকসই' গলদা চিংড়ি৷ এছাড়া ‘চাকাই' চিংড়িগুলো টাটকা আর ওদের কোয়ালিটিও ভালো৷''
আজকের গলদা চিংড়িগুলো যে কোনো অতিথির জন্য নয়৷ লেই-কুপার এ অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকৃতি সুরক্ষা সংগঠনগুলির প্রধানদের নিমন্ত্রণ করেছেন৷ তাঁর পরিকল্পনা হলো: আমন্ত্রিতদের ‘টেকসই' গলদা চিংড়ি খাইয়ে তাঁর নিজের প্রকল্পের অর্থায়ন করতে রাজি করা৷ চিংড়ির শূককীট বহুদূর অবধি যায়, কাজেই চিংড়িদের সংখ্যা ঠিক রাখতে আর তাদের পরিবেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে প্রতিবেশী দেশগুলিতেও গবেষণা চালাতে হবে ও সংরক্ষিত এলাকা সৃষ্টি করতে হবে৷
কিম জানালেন, ‘‘আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হলো, আমার ছেলে-মেয়েরা এই আশ্চর্য পরিবেশ দেখতে পাবে৷ আশা করব আমাদের প্রজন্মের মতো তারাও ছোট ছোট চিংড়ি আর সেই সঙ্গে মান্টা রে, স্টিং রে, হাঙর, এই সব সুন্দর জীবদের দেখতে পাবে৷ সেটাই হবে আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ৷''
তাঁর এই টেকসই প্রকল্পের ওপরেও সেটা নির্ভর করবে৷