1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ঘুস ও দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ’ হবে কবে?

১৮ নভেম্বর ২০২০

পুলিশের প্রধান বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘‘পুলিশে দুর্নীতিবাজদের কোনো জায়গা নেই৷’’ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করতে পুলিশে অভ্যন্তরীণ কোনো ব্যবস্থা আছে কিনা? আর আইজিপির এটা কি শুধু কথার কথা?

https://p.dw.com/p/3lV7k
বাংলাদেশ পুলিশ
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo

মঙ্গলবার তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক মতবিনিময় সভায় আরো বলেন, ‘‘কোনো পুলিশ সদস্য অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না৷ দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমরা বদ্ধপরিকর৷ পুলিশ হবে ঘুস ও দুর্নীতিমুক্ত৷’’

ওই মত বিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন  ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)  কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম৷ আর এই পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলামেরই আইজিপিকে দেয়া একটি চিঠি বেশ আলোড়ন তুলেছিল কয়েকমাস আগে৷ তিনি ৩০ এপ্রিল তার অধীনস্ত যুগ্ম কমিশনার (লজিস্টিক) মো. ইমাম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইজিপিকে চিঠি দিয়েছিলেন৷ অভিযোগ, ওই যুগ্ম কমিশনার কেনাকাটায় খোদ পুলিশ কমিশনারকেই ‘পার্সেন্টেজ’ দেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন৷ তিনি যুগ্ম কমিশনারের বিরুদ্ধে কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগও করেন৷ এই চিঠির ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয় এক মাস পরে৷ কিন্তু ওই একমাসে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ যখন খবর প্রকাশ হয় তারও ১০ দিন পর ৯ জুন তাকে শুধু বদলি করা হয়৷ তাও করেন পুলিশ কমিশনার নিজে৷ আর কোনো ব্যবস্থা বা তদন্তের কোনো খবর এখনো জানা যায়নি৷

পুলিশের বহুল আলোচিত ডিআইজি মিজানুর রহমান এখন কারাগারে৷ ঘুস লেনদেনের ঘটনায় তাকে হাইকোর্টের নির্দেশে আদালত থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গত বছরের ২ জুলাই৷ কিন্তু এর আগে পুলিশ সদরদপ্তর  থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ প্রায় বছর জুড়ে তার নানা অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির খবর সংবাদমাধ্যমে ছাপা হওয়ার পরও না৷ গত বছরের ২৪ জুন দুদক তার বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা করলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়৷

বদলি, ক্লোজ আসলে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়: ড. ইফতেখারুজ্জামান

৩১ জুলাই  কক্সবাজারে ক্রসফায়ারের নামে মেজর (অব.) সিনহাকে হত্যার পর টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসকেও রক্ষায় পুলিশের একটি মহল তৎপর ছিলো৷ এমনকি তাকে ছুটি দিয়ে থানা ছেড়ে যাওয়ারও সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল৷ পরে অবশ্য প্রতিবাদ ও চাপের মুখে তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে৷

পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে সরাসরি, ইমেইল বা টেলিফোনে অভিযোগ করার সুযোগ আছে৷ কিন্তু পুলিশ সদস্যদের দুর্নীতির অভ্যন্তরীণ তদন্তের আলাদা কোনো বিভাগ নেই৷ খোঁজ নিয়ে জানাগেছে   প্রতিমাসে গড়ে  প্রায় এক হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয় হয়৷ তবে এইসব ব্যবস্থার মধ্যে বদলিই বেশি৷ আর যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় তাদের ৯৫ ভাগেরও বেশি কনেস্টবল থেকে ইন্সপেক্টর পদের পুলিশ সদস্য৷ এএসপি ও তার উপরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদাহরণ খুবই কম৷ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘পুলিশের আইজি যা বলছেন তা বাস্তবে কার্যকর করতে হলে উপর থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ আর বদলি, ক্লোজ আসলে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়৷ এসব দিয়ে দুর্নীতি দূর করা যায় না৷’’

তিনি বলেন, ‘‘যত গবেষণা বা  জরিপ করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে পুলিশ সব সময় দুর্নীতিতে শীর্ষ পর্যায়ে আছে৷ সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী যারা পুলিশের সেবা নিতে যান তাদের শতকরা ৭৬ জনকে ঘুস দিতে হয়৷ এছাড়া মানুষকে হয়রানি করে, পকেটে মাদক- অস্ত্র দিয়ে পুলিশ ঘুস আদায় করে বলে অভিযোগ আছে৷ কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়৷ আইজিপি সাহেব হয়তো দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার কারণে বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের পুলিশে কোনো জায়গা নেই৷ কিন্তু বাস্তবে এটা এত সহজ নয়৷ ঠগ বাছতে আবার গা উজাড় হওয়ার মতো না হয়৷ তবে আন্তরিক হলে এটা কঠিনও নয়৷ এখন দেখার বিষয় এটা নিয়ে তিনি কতটা আন্তরিক৷’’

আইজি যদি পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারেন তাহলে এটা হবে যুগান্তকারী ব্যবস্থা: দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান

‘‘পুলিশের আইজি যদি পুলিশ বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারেন তাহলে এটা হবে একটি যুগান্তকারী ব্যবস্থা,’’ এই মন্তব্য দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের৷ তার মতে, যদি সব দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যকে পুলিশ বিভাগ থেকে বের করে দেয়া হয় তাহলে পুলিশে আর দুর্নীতি থাকবে না৷ তিনি বলেন, ‘‘শুধু পুলিশ কেন সব বিভাগেই অভিযোগের তদন্ত এবং ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিভাগীয় আইন আছে৷ সেই আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেয়া যায়৷’’ তবে পুলিশ সদর দপ্তর চাইলে দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ দুদকেও পাঠাতে পারে৷ দুদক তাদের মত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে বলে জানান তিনি৷

ডিএমপির নয়জন পুলিশ সদস্য মাদক সংশ্লিষ্টতার কারণে চাকরি হারিয়েছেন৷ ডোপ টেস্টের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে তদন্ত করা হয়৷ আরো ৫৯ জন সদস্য একই প্রক্রিয়ায় চাকরি হারানোর পথে আছেন৷ এসব কর্মকর্তা কনেস্টবল থেকে সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার৷