‘চুরি করতে পারিনা, রিকশাও চালাতে পারিনা'
২ মে ২০২১রবিবার তারা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণপরিবহন খুলে দেয়ার দাবীতে ঢাকারগাবতলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, মহাখালি বাসটার্মিনালসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন৷
তারা আগামী ৬মে'র মধ্যে গণপরিবহন খুলে দেয়াসহ তিনটি দাবী জানিয়েছেন৷ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন ও পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা, সরকারি উদ্যোগে সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা দেয়া ও সারা দেশে বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোতে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ১০ টাকাকায় ওএমএসের চাল বিক্রির ব্যবস্থা করা৷
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘‘আমরা ৬ মে'র মধ্যে পরিবহন খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছি৷ তার আগে আমাদের আরো কর্মসূচি আছে৷ আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দেব৷''
‘চুরি করতে পারিনা, রিকশাও চালাতে পারিনা'
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির একটি ফেসবুক পেজ আছে৷ সেই পেজে প্রতি দিনই সারাদেশ থেকে পরিবহন শ্রমিকরা তাদের মোবাইল ফোন নাম্বার দিয়ে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন৷ তাদেরই একজন কাওসার আহমেদ হৃদয়৷
ফেসবুক থেকে পাওয়া ফোন নাম্বারেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়৷ ঢাকার সিটি সার্ভিস বাসে তিনি হেল্পারের কাজ করতেন৷ কিন্তু এখন তার কাজ নাই৷ পোস্তাগোলা এলাকায় দুই সন্তান এবং স্ত্রী নিয়ে থাকেন৷ তিন মাসের ভাড়া বাকি৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন আর দোকানদারও বাকি দিতে চায়না৷ কোনো সহায়তা নাই৷ কী করব বুঝে উঠতে পারছিনা৷''
জাফর ইকবাল নামে আরেকজনও একইভাবে সহায়তার আবেদন জানিয়েছন৷ তিনি দূরপাল্লার বাস চালাতেন৷ মাসে আয় হতো ২২-২৩ হাজার টাকা৷ স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে এখনো ঢাকার মোহাম্মদপুরে আছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আর তো পারছিনা৷ মাসে এত টাকা আমাকে কে দেবে! না পারছি চুরি করতে, না পারছি রিকশা চালাতে৷''
বাংলাদেশের পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘‘আমরা এই আবেদনগুলো দেখি৷ কিন্তু আমাদের পক্ষে এখন আর আলাদাভাবে কারুর জন্য কিছু করার নাই৷''
আর পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘‘শ্রমিকরা চরম অসহায় অবস্থার মধ্যে আছেন৷ তারা এখন রাস্তায় নেমে যে কোনো একটা কাজ করবেন তারও সুযোগ নাই৷''
শ্রমিক কল্যাণের টাকা কোথায়?
বাংলাদেশে ৫০ লাখের মত পরিবহন শ্রমিক আছেন৷ তাদের সঙ্গে কমপক্ষে দুই কোটি ৫০ লাখ লোক জড়িত বলে বলে জানান পরিবহন শ্রমিক নেতারা৷ কিন্তু তারা লাকডাউনে কোনো বেতন ভাতা পাচ্ছেন না৷ এমনকি তেমন সহায়তাও নেই৷
এবারের লকডাউনশুরু পর থেকে বাস টার্মিনালগুলোতে শ্রমিকদের একবার কিছু চাল ও ভোগ্যপণ্য দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল৷
পরিহন শ্রমিক লীগের মো. সভাপতি হানিফ খোকন বলেন, ‘‘ঢাকার তিনটি টার্মিনালে মোট চার দিন ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে৷ তাতে কতজন শ্রমিক পেয়েছে?''
তিনি দাবি করেন, গত বছরের লকডাউন শেষ হওয়ার পর মালি সমিতি প্রতি গাড়ি থেকে ৬০ টাকা এবং শ্রমিক ফেডারেশন ৪০ টাকা করে নিয়েছে৷ এই কয় মাসে আমার হিসেবে ১০ লাখ গাড়ি থেকে শ্রমিক সংগঠনগুলো এক হাজার ৩৫০ কোটি এবং মালিকরা এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা নিয়েছে৷ সেই টাকা কোথায়? সেটা তো এখন শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা যায়৷
বাংলাদেশের পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্যাহ বলেন, ‘‘আমরা যা টাকা নিই সেটা পরিচালনা ব্যয়৷ শ্রমিকদের কোনো টাকা আমাদের কাছে নাই৷''
আর শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী দাবী করেন, ‘‘ওই টাকা থেকে ৪০০ কোটি টাকা সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের কাছে আছে৷ আমরা আমাদের খরচ বাদে একটি অংশ শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য সরকারের কাছে জমা রাখি৷ কিন্তু সরকার সেই টাকা শ্রমিকদের দিচ্ছেনা৷''
এই পরিস্থিতিতে মালিক-শ্রমিক সবার দাবী স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন খুলে দেয়া৷ খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, পরিবহন মালিকরাও চান যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন খুলে দেয়া হয়৷ এটা নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের , সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে মালিক পক্ষের বৈঠক হয়েছে৷ তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন খুলে দেয়ার চিন্তা করছেন৷
ওবায়দুল কাদেরও একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ আগামীকাল এব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হতে পারে৷