চ্যাম্পিয়নস লিগে জার্মান কোচদের ইতিহাস
১৭ আগস্ট ২০২০মঙ্গলবার প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হওয়া লাইপজিগ ও পিএসজির কোচ যথাক্রমে ইউলিয়ান নাগেলসমান ও টোমাস টুখেল৷ পরদিন বুধবার হানসি ফ্লিকের অধীনে থাকা বায়ার্ন মিউনিখ খেলবে লিওঁর সঙ্গে৷
ফ্লিক, টুখেল, নাগেলসমান- তিনজনই জার্মান কোচ৷ তাদের মধ্যে আরও দুটি মিল রয়েছে৷ এক, আহত হওয়ার কারণে তাদের তিনজনেরই পেশাদার খেলোয়াড়ি জীবন সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে৷ দুই, তারা তিনজনই জার্মানির ফুটবল ফেডারেশনের দশ মাসব্যাপী ‘ফুটবল শিক্ষক’ কোর্স করেছেন৷
তিনজনের মধ্যে বায়ার্ন কোচ হানসি ফ্লিকের বয়স সবচেয়ে বেশি৷ এছাড়া তিনজনের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে পেশাদার ফুটবল খেলেছেন৷ ২৯ বছর বয়সে (বর্তমান বয়স ৫৫) ইনজুরির কারণে পেশাদার ফুটবল ছাড়তে বাধ্য হওয়ার আগে বুন্ডেসলিগায় প্রায় দুশটি ম্যাচে খেলেন ফ্লিক৷ এই সময় বায়ার্নের হয়ে চারবার লিগ শিরোপাও জেতেন৷
পিএসজি কোচ টোমাস টুখেল (৪৬) পেশাদার ফুটবল খেলতে পেরেছেন ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত৷ এরপর হাঁটুর ইনজুরির কারণে খেলা ছাড়তে বাধ্য হন৷
টুখেলের মতোই হাঁটুর ইনজুরি ভুগিয়েছে লাইপজিগ কোচ নাগেলসমানকেও৷ ফলে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের বেশি খেলতে পারেননি তিনি৷
লিওনেল মেসির চেয়ে বয়সে ২৯ দিনের ছোট নাগেলসমান৷ অর্থাৎ লাইপজিগ কোচের বয়স এখন মাত্র ৩৩! ফলে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে খেলা কোনো দলের সবচেয়ে কমবয়সি কোচ হতে যাচ্ছেন তিনি৷
মাত্র ১৯ বছর বয়সে ইনজুরির কারণে খেলা ছাড়তে বাধ্য হওয়ায় মন খারাপ হয়েছিল নাগেলসমানের৷ ‘‘মনে হয়েছিল আমি আমার পুরো বাল্যকালটা অপচয় করে ফেলেছি৷ খুবই খারাপ লেগেছিল৷’’
খেলা ছেড়ে ব্যবসায় প্রশাসন আর ক্রীড়াবিজ্ঞানে পড়ালেখা করেন নাগেলসমান৷ এরপর ২০০৭ সালে তাকে আবার খেলায় ফিরিয়ে আনেন টোমাস টুখেল, যার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার মাঠে নামবেন নাগেলসমান৷ ২০০৭ সালে জার্মানির আউগসবুর্গের রিজার্ভ দলের কোচ ছিলেন টুখেল৷ তখন স্কাউটিংয়ের দায়িত্বে নাগেলসমানকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি৷
‘ফুটবল শিক্ষক' কোর্স
ফ্লিক, টুখেল, নাগেলসমান- তিনজনই জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের দশ মাসব্যাপী ‘ফুসবাল লেরার' বা ফুটবল শিক্ষক কোর্সটি করেছেন৷ জার্মানির শীর্ষ তিন বিভাগে কাজ করতে আগ্রহীদের এই কোর্সটি করা থাকতে হয়৷ অংশগ্রহণকারীদের লিখিত, প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা, মক ট্রেনিং সেশনসহ আটশর বেশি কোর্স-ঘণ্টায় অংশ নিতে হয়৷ উল্লেখ্য, উয়েফার কোচিং লাইসেন্স পেতে প্রয়োজন ২৪০ কোর্স-ঘণ্টা৷
সহমর্মিতা
লাইপজিগ কোচ নাগেলসমান একবার বলেছিলেন, ভালো কোচ হতে হলে খেলোয়াড়দের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার ক্ষমতা আপনার থাকতে হবে৷ যারা সেরা একাদশে খেলার সুযোগ পায় না তাদেরকেও গুরুত্ব দিতে হবে৷
বায়ার্ন কোচ ফ্লিকের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যের দেখা পেয়েছেন বায়ার্ন ডিফেন্ডার জেরোম বোয়াটেং৷ বায়ার্নের সাবেক কোচ নিকো কোভাচের অধীনে প্রায় মলিন হয়ে গিয়েছিলেন তিনি ও টোমাস ম্যুলার৷ এরপর গত নভেম্বরে ফ্লিক দায়িত্ব নেয়ার পর দুজনই আবার আগের দক্ষতায় ফিরে গেছেন৷
বোয়াটেং বলেন, ‘‘যারা খেলার সুযোগ পায়, আর যারা পায় না, সবার সঙ্গেই সম্মানজনক আচরণ করেন হানসি (ফ্লিক)৷ তিনি তার ব্যবহার দিয়ে সবাইকে এমন একটা অনুভূতি দেন যেন সবাই দলের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ৷’’
পিএসজি কোচ টোমাস টুখেলও এমন আচরণের জন্য পরিচিত৷ ২০১৭ সালে ডর্টমুন্ডের বাসে বোমার হামলার সময় কোচ ছিলেন টুখেল৷ সেই সময় খেলোয়াড়রা কোচের ‘এমপ্যাথি' গুনের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন৷
মাট পিয়ারসন/জেডএইচ