জাতিসংঘ জলবায়ু প্রতিবেদন: আশা ও শঙ্কার তথ্য
জাতিসংঘের জলবায়ু বিজ্ঞান প্যানেলের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কার্বন নির্গমন এখনও বেড়ে চলেছে৷ দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে প্রতিবেদনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য৷
কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে
পৃথিবীতে এখনও কার্বন নিঃসরণ কমেনি৷ ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন হিসাবে ধরলে ২০১৯ সালে ৫৯ গিগাটন কার্বন নিঃসরণ হয়েছে৷ ২০১০ সালের ৫২ দশমিক পাঁচ গিগাটনের তুলনায় এ পরিমাণ বেড়েছে ১২ শতাংশ৷ অর্থাৎ গত এক দশকে কার্বন নিঃসরণ প্রতি বছর এক দশমিক তিন শতাংশ হারে বেড়েছে৷ তবে ভালো খবর হচ্ছে, আগের দশকে এ হার ছিল দুই দশমিক এক শতাংশ৷ ফলে আগের দশকের চেয়ে গত দশকে নিঃসরণ কমেছে৷
গ্রিনহাউজ গ্যাস চেম্বারের পথে
শিল্প বিপ্লব পরবর্তী যুগে তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখতে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের জলবায়ু প্যানেল৷ বর্তমান নির্গমণের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোনো পদক্ষেপ না নেয়া হলে তাপমাত্রা তিন দশমিক দুই ডিগ্রি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ বিভিন্ন দেশের জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমিত রাখা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷
জ্বালানি ও নির্মাণ
তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে সব গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমণ অর্ধেক এবং ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে৷ এর মানে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে ৯৫ শতাংশ কয়লা, ৬০ শতাংশ তেল এবং ৪৫ শতাংশ গ্যাস কম ব্যবহার করতে হবে৷ একই সঙ্গে ভবন নির্মাণে পরিবেশবান্ধব উপকরণের ব্যবহার বাড়াতে হবে৷
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সীমিতকরণ
উষ্ণতা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখতে এমন সব পদক্ষেপ নিতে হবে যার ফলে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সীমিত করবে৷ ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক দশমিক তিন থেকে দুই দশমিক সাত শতাংশ পর্যন্ত নেমে আসবে৷ তবে উষ্ণায়ন কমাতে পারলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক সুবিধা এটি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে৷
জীবনযাপনে পরিবর্তন
বিশ্বের তাপমাত্রা কমাতে জনগণের জীবনধারা এবং আচরণের পরিবর্তন আনতে হবে৷ এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সরকারকে ভ্রমণ কমাতে বাড়ি থেকে কাজকে উৎসাহিত করা, সাইকেল চালানো এবং গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে হাঁটতে উৎসাহ দেয়া, বা মাংস খাওয়ার চেয়ে উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবারের প্রচার করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করা হয়েছে প্যানেলের প্রতিবেদনে৷
আশার সংবাদ
প্রতিবেদনে কিছু আশার কথাও তুলে ধরা হয়েছে৷ পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি দিন দিন আরো সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হয়ে উঠছে৷ ২০১০ সালের তুলনায় সৌরশক্তির এক ইউনিটের দাম এখন ৮৫ শতাংশ কম, বায়ুশক্তির দাম কম ৫৫ শতাংশ৷ কিছু দেশে জ্বালানি নীতির পরিবর্তন করায় পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি এবং বৈদ্যুতিক যানের ব্যবহার বেড়েছে, বন উজাড়ের হার কমেছে৷