জার্মানিতে লকডাউনের মেয়াদ বাড়লো
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১জার্মানির চলমান লকডাউনের মেয়াদ যে আরও বাড়ানো হবে, বুধবার চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকের আগেই তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ দুপুর ও সন্ধ্যা জুড়ে আলোচনার পর তাঁরা আগামী ৭ই মার্চ পর্যন্ত লকডাউনের ঘোষণা করলেন৷ তবে একইসঙ্গে তার পরের সময়ের জন্য ইতিবাচক পূর্বাভাষও শোনা গেল৷ শীর্ষ নেতাদের মতে, বর্তমান কড়া বিধিনিয়মের ফলে দেশে করোনা ভাইরাসের দৈনিক সংক্রমণের হার যেভাবে লাগাতার কমে চলেছে, তার আলোকে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিপদ কেটে যেতে পারে৷ তখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারবেন জার্মানির মানুষ৷ প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণের গড় হার ৩৫-এর নীচে নামলেই এমন সুযোগ পাওয়া যাবে৷ কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানবাজার, মিউজিয়াম, আর্ট গ্যালারিসহ একাধিক পরিষেবা আবার চালু হবে৷ উল্লেখ্য, বুধবার গড় সংক্রমণের হার ছিল ৬৮৷ গত ২২শে ডিসেম্বর সেই হার ছিল ১৯৮৷
ম্যার্কেল ও মুখ্যমন্ত্রীরা বুধবার কয়েকটি স্পষ্ট পদক্ষেপেরও ঘোষণা করেন৷ যেমন ১লা মার্চ থেকে দেশজুড়ে চুল কাটার সেলুন খোলা হবে৷ হোটেল-রেস্তোঁরা খোলার বিষয়ে এখনো কিছু স্থির হয় নি৷ তবে স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন খোলার সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারগুলির হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ অনেক রাজ্য ২২শে ফেব্রুয়ারি থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে যত দ্রুত সম্ভব শিশু-কিশোরদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছন্দে নিয়ে আসতে চান মুখ্যমন্ত্রীরা৷ শিক্ষকদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমাতে করোনা টিকার ক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রাধিকারের মাত্রা বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে৷
এমন সব ইতিবাচক পূর্বাভাসের মাঝেও জার্মানির নেতারা করোনা ভাইরাসের আরও ছোঁয়াচে মিউট্যান্ট বা সংস্করণ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ এই সব নতুন মিউট্যান্ট আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার কথা বলেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ তবে এখনো পর্যন্ত সংক্রমণের ধীর গতির আলোকে তিনি অদূর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী৷ আগামী ৩রা মার্চ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ম্যার্কেল ও মুখ্যমন্ত্রীরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন৷
ইউগভ সংগঠনের জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী জার্মানির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়ানোর পক্ষে৷ মাত্র এক চতুর্থাংশ মানুষ এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন৷ শিল্পবাণিজ্য জগত অর্থনীতির লাগাতার ক্ষতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিলেও মার্চ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছে৷
জার্মানিতে টিকাদান কর্মসূচির ধীর গতি স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথে বড় বাধা হয়ে উঠেছে৷ বুধবারের হিসেব অনুযায়ী ১০ লাখ মানুষ – অর্থাৎ জনসংখ্যার এক দশমিক এক শতাংশ ইতোমধ্যে টিকার দুটি ডোজ পেয়ে গেছেন৷ এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে টিকার সরবরাহ স্বাভাবিক হলে এই সংখ্যা আরও দ্রুত বাড়বে বলে রাজনীতিকরা আশা করছেন৷
করোনা মহামারি মোকাবিলায় ইউরোপের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে জার্মানির সাফল্য কতটা স্থায়ী হবে, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠছে৷ বিশেষ করে অস্ট্রিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের মতো প্রতিবেশী দেশে সংক্রমণের মারাত্মক হার বাভেরিয়া রাজ্যে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷ প্রয়োজনে সীমান্ত বন্ধ করার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স, এএফপি)