1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে হামলায় পুলিশ নিহত, উগ্র ইসলামপন্থিদের দিকে অভিযোগ

৪ জুন ২০২৪

জার্মানির মানহাইম শহরে ইসলামবিরোধী সমাবেশে হামলাকারীর ছুরিকাঘাতে এক পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রসিকিউটরেরা তদন্তে নেমেছেন৷

https://p.dw.com/p/4gcpY
জার্মানির মানহাইমে হামলার স্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন
মানহাইম শহরে হামলার স্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অনেকেছবি: Uli Deck/dpa/picture alliance

নিহত পুলিশ কর্মকর্তাকে শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার হাজার হাজার মানুষ জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরটিতে জড়ো হয়েছিলেন৷

শুক্রবার (৩১ মে) মানহাইম শহরে ইসলামবিরোধী একটি সমাবেশ করছিলেন ডানপন্থিরা৷ সেই সমাবেশে অংশ নেয়া এক ব্যক্তিকে ছুরি হাতে আক্রমণ করেন হামলাকারী৷ তাকে থামাতে গেলে ঘাড়ে আঘাত পান কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা৷ তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হামলাকারীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দায়িত্বরত অপর এক পুলিশ কর্মকর্তা৷

জার্মান কর্তৃপক্ষ বলছে, এ হামলার পেছনে ইসলামিক কোনো যোগসাজশ রয়েছে বলে তারা অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে৷ 

এক মুখপাত্র জানান, মামলাটির ‘বিশেষ গুরুত্বের কারণে' এটি তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছেন সন্ত্রাসবাদ, গুপ্তচরবৃত্তি এবং আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত জার্মানির সর্বোচ্চ প্রসিকিউটিং কর্তৃপক্ষ ফেডারেল প্রসিকিউটরেরা৷

ওই নারী মুখপাত্র আরো জানান, সন্দেহভাজন হামলাকারী ২৫ বছর বয়সি একজন আফগান নাগরিক৷ নয় বছর ধরে তিনি জার্মানিতে বসবাস করছেন৷ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন৷ ধারণা করা হচ্ছে, ইসলামের সমালোচকদের তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দিতেই হামলাটি চালানো হয়েছে৷

ওই হামলাকারীর অপরাধমূলক কোনো অতীত রেকর্ড নেই বলে জানিয়েছে জার্মানির আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা৷ তবে হামলাকারীর বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যা চেষ্টা, গুরুতর শারীরিক আঘাতের অভিযোগ আনা হয়েছে৷

‘স্পষ্টতই ইসলামিক উদ্দেশ্য'

জার্মান জোট সরকারের অংশীদার এফডিপির রাজনীতিবিদ এবং বিচারমন্ত্রী মার্কো বুশমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ওই ঘটনা যে ‘‘ইসলামিক উদ্দেশ্যে হয়েছে তার পরিষ্কার ইঙ্গিত রয়েছে৷''

তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘ইসলাম জার্মানির অংশ, কিন্তু ইসলামি মতবাদ নয়'' এবং লিখেছেন ‘‘ধর্মীয় ধর্মান্ধতা এবং উগ্র ইসলামপন্থার ভয়াবহতা এখনও রয়ে গেছে৷''

শ্রদ্ধা জানাতে হাজারো মানুষ

দায়িত্ব পালনকালে নিহত পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার মানহাইমে জড়ো হয়েছিলেন অন্তত আট হাজার মানুষ৷ শুক্রবার হামলাকারীর ছুরিতে ঘাড়ে আঘাত পান ২৯ বছর বয়সি ওই পুলিশ কর্মকর্তা৷ আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়৷ রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি৷

খ্রিস্টান, মুসলিম এবং ইহুদিদের ধর্মীয় নেতা এবং স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ মানহাইমের অনেকে মিলে এই স্মরণসভার আয়োজন করেন৷

স্থানীয় ক্যাথলিক ডিকন কার্ল ইয়ুং বলেছেন, ‘‘এই তরুণের মৃত্যু আমাদের সবাইকে শোকাহত করেছে, আমাদের কান্নায় ভাসিয়েছে, আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে৷''

এসময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মানহাইমের মুসলিম সম্প্রদায়ের ইমাম মুস্তাফা আইদিনলি বলেন, ‘‘কারণ সৃষ্টিকর্তা চান, আমরা সবাই শান্তিতে বসবাস করি৷''

নিরাপত্তা ইস্যুতে সংসদে ভাষণ দেবেন শলৎস

পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুতে রোববার গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ চ্যান্সেলর অফিসের একটি চিঠির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগ-এ নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে ভাষণ দেবেন চ্যান্সেলর শলৎস৷

সম্প্রতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রুশ সীমান্তে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে ইউক্রেনকে জার্মান অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ ফলে, ওলাফ শলৎস মানহাইমে হামলার জের ধরে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলবেন, নাকি রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কথা বলবেন তা অবশ্য স্পষ্ট নয়৷

ইইউ নির্বাচন ও ইউরো ২০২৪ নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল ও হামাসের সংঘর্ষের জের ধরে সম্ভাব্য ইসলামপন্থি হামলা মোকাবিলায় দেশজুড়ে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে জার্মানি৷

এদিকে, ৯ জুন জার্মানিতে ইউরোপীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে৷ আর এক সপ্তাহ পর জার্মানিতে শুরু হচ্ছে ইউরোপীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ৷ এমন অবস্থায় জার্মান গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান সতর্ক করে বলেছেন, দীর্ঘদিন পর এমন হামলার ঝুঁকি রয়েছে৷

জার্মান অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার (এফডিপি) ট্যাবলয়েড সংবাদপত্র বিল্ডকে বলেন, ‘‘আমাদের অবশ্যই দৃঢ়তার সঙ্গে ইসলামি সন্ত্রাসবাদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে৷''

সোমবার সন্ধ্যায় ড্যুসেলডর্ফে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম রাইনিশে পোস্ট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক৷ সেখানে তিনি বলেন, ‘‘উগ্র ডানপন্থি হোক কিংবা ইসলামপন্থি, চরমপন্থিদের লক্ষ্য যদি হয় একটি মুক্ত সমাজকে বিভক্ত করা, তাহলে আমাদের সমাজবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে তার জবাব দিতে হবে৷''

মানহাইমের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই আমি ভীষণভাবে মর্মাহত হয়েছি৷''

কিন্তু তারপরও জার্মান সমাজ এবং গণতন্ত্রপন্থিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এসব ঘটনার কারণে ‘‘ঘৃণা, সহিংসতা এবং হত্যাকে বেছে নিয়ে আমরা যেন নিজেদের ধ্বংস হতে না দিই৷''

টিএম/জেডএইচ (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স, কেএনএ)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য