জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণের আগ্রহ কমছে দিন দিন
১৪ জুন ২০০৯২০০৮ সালে অভিবাসীদের জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণের হার ১৬ শতাংশ কমে গেছে৷ জার্মানির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দপ্তর জানিয়েছে, ২০০০ সালে যত বেশি অভিবাসী জার্মানির নাগরিকত্ব নিয়েছিল ২০০৮ সালে তার সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে৷ ২০০৮ সালে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে ৯৪ হাজার ৫০০ জন৷ সবচেয়ে বেশি জার্মান নাগরিকত্ব নিয়েছে তুরস্কের অভিবাসীরা৷ তাদের সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার ৫০০৷ তুরস্কের নাগরিকদের জার্মানিতে নাগরিকত্ব গ্রহণের হার ২০০৮ সালে কমেছে ১৫.৩ শতাংশ৷ সার্বিয়া, কসোভো এবং মন্টিনিগ্রো থেকে নাগরিকত্ব নিয়েছে প্রায় ৭ হাজার অভিবাসী৷ পোল্যান্ডের অভিবাসীরা এক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে৷ একমাত্র ব্যতিক্রম ঘটেছে ইরাকি প্রবাসীদের ক্ষেত্রে৷ গত বছর প্রায় ৪ হাজার দু'শ ইরাকি জার্মানির নাগরিকত্ব লাভ করেছে৷ এদের হার আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে ৩.১ শতাংশ৷
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউরোপের পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছু সাবেক কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ২০০৪ সালের দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ায় এবং দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ সীমিত করে ফেলায় সম্ভাব্য অনেক অভিবাসী নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারছেনা৷ বাম্বেয়ার্গে অবস্থিত ইউরোপিয়ান ফোরাম ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজ এর ফ্রিডরিক হেকমান বলেছেন, ২০০৪ সালে পোল্যান্ডসহ আরো কিছু দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়ে যাওয়ার ফলেই সম্ভবত এই প্রবণতা দেখা গেছে৷
হেকমান জানিয়েছেন, প্রথমদিকে তুরস্কের অনেক অভিবাসী জার্মান নাগরিকত্ব পাওয়ার পর আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে আবারও তাদের পুরনো নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য আবেদন করতো৷ এক্ষেত্রে তুরস্কের দূতাবাসও তাদের কিছুটা সহযোগিতা করে আসছিল৷ তবে এক্ষেত্রে তাদের ক্ষতিটা হচ্ছে, তারা পরিণামে জার্মান নাগরিকত্ব হারাতো৷ হেকমান বলেন, গত বছর থেকে তুরস্কের দূতাবাস এব্যাপারটি পরিষ্কারভাবে অনুধাবন করায় তারা এক্ষেত্রে সহযোগিতা বন্ধ করেছে৷ এই কারণেও জার্মান নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের হার কিছুটা কমেছে, বলে হেকমানের অভিমত৷
প্রসঙ্গত, জার্মানির নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের শর্তসমূহ ২০০০ সালে সংস্কার করে কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল৷ কিন্তু রক্ষণশীলদের বিরোধিতার মুখে দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়৷ মূলত সেসময় থেকেই বিদেশী নাগরিকদের জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণের হার ক্রমাগত কমে যাচ্ছে৷ অবশ্য, প্রতি বছর জার্মানির নাগরিকত্ব লাভের জন্য বিদেশী আবেদনকারীদের সংখ্যা সরকারি এই পরিসংখ্যান দপ্তরের জানা নেই৷
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিতেই জন্ম হার সবচেয়ে কম৷ অন্যদিকে, জার্মানির বয়োবৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা ৮২ মিলিয়নেরও বেশি৷ এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সামাজিক নিরাপত্তা আরো ভেঙ্গে পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশংকা৷
প্রতিবেদক: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারুক