জার্মানির বিশেষ উদ্যোগ
১ আগস্ট ২০১৩প্রত্যাবর্তনকারীদের একজন সান্ড্রা ব্লায়েস৷ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ৩৯ বছর বয়সি সান্ড্রা ব্লায়েস-এর মুখ৷ গত এপ্রিল মাসে এই জীববিজ্ঞানী তাঁর হাবিলিটেশন শেষ করলেন৷ যোগ্যতা অর্জন করলেন প্রফেসর হওয়ার৷
সান্ড্রা ব্লায়েস বন ইউনিভার্সিটির ‘লাইফ অ্যান্ড ব্রেইন' ইন্সটিটিউটে হাবিলিটেশনের কাজ করেছেন পাঁচ বছর৷ ইঁদুরের ভ্রুণের মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের পরিবর্তন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন তিনি৷ এটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণা৷ এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই পরে হয়ত পার্কিনসন রোগীদের জন্য নতুন থেরাপি তৈরি হবে৷
প্রত্যাবর্তনকারীদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি
গবেষণার কাজের জন্য সান্ড্রা ব্লায়েস প্রয়োজন ছিল পর্যাপ্ত সময়, যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রচুর অর্থ এবং গবেষণা সহকারী৷ ‘‘নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের প্রত্যাবর্তনকারীদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি না থাকলে এই ধরনের ক্যারিয়ার করা যেত না'', বলেন সান্ড্রা৷
এই প্রোগ্রামের আওতায় প্রথম দিকে যাঁরা জার্মানিতে ফিরে আসেন, তাঁদের মধ্যে সান্ড্রা একজন৷ এর আগে সুইজারল্যান্ডের বাসেলে পিএইচডি করেছেন তিনি৷ তারপর নিউ ইয়র্কে গবেষণা করেন ছয় বছর৷ সেখানেই নতুন এই কর্মসূচিটির কথা শোনেন এই বিজ্ঞানী৷ তারপর আবেদন করেন, সফলও হন৷ ১.২৫ মিলিয়ন ইউরো মঞ্জুর করে নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্য তাঁর জন্য৷ গবেষকদের ওপরই নির্ভর করে রাজ্যের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা যাবেন৷
সান্ড্রা বন ইউনিভার্সিটিকে নির্বাচন করেন
সান্ড্রা বন ইউনিভার্সিটিকে নির্বাচন করেন৷ কেননা সেখানে নিউরো বায়োলজি বিষয়টির সুনাম রয়েছে৷ তখন থেকে ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক চত্বরে ‘লাইফ অ্যান্ড ব্রেইন' ইন্সটিটিউটে কর্মরত তিনি৷ ইতিমধ্যে নতুন এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে৷ ‘‘গত বছরের অক্টোবরে আমার ছেলে হয়েছে৷ এখন আমি সন্তানের দেখা-শোনা ও গবেষণা কাজ, এই দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলতে চাই, যা খুব সহজ নয়'', জানান সান্ড্রা৷
প্রত্যাবর্তনকারীদের কর্মসূচিতে শুধু যে, সান্ড্রা ব্লায়েস-এর মতো গবেষকরা উপকৃত হন তাই নয়, যে সব ইউনিভার্সিটিতে তাঁরা কাজ করেন সেগুলিও লাভবান হয়৷ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই আগে নামি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন৷ যেমন ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যান্ডফোর্ড ইউনিভার্সিটি কিংবা বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে৷
উপকৃত হয় ইউনিভার্সিটিগুলিও
‘‘ফিরে আসা গবেষকদের জন্য ধার্য করা অর্থ ও তাঁদের গবেষণা কাজ দ্বারা উপকৃত হয় ইউনিভার্সিটিগুলিও'', জানান নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার গবেষণা মন্ত্রণালয়লের মুখপাত্র ও সহায়তা কর্মসূচিটির উদ্যোক্তা হ্যার্মান লামব্যার্টি৷
এই গ্রীষ্মেই সান্ড্রার পাঁচ বছরের সাহায্য কর্মসূচিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ তার পরেও তাঁর ইন্সটিটিউটে কিছুদিন কাজ করতে চান তিনি৷ খুব সম্ভবত ২০১৪ সালের শেষ পর্যন্ত তাঁকে সহায়তা দেওয়া হবে, সরাসরি ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক ও তাঁর ইন্সটিটিউট থেকে, বলেন সান্ড্রা৷ আসলে তিনি স্থায়ী একটি পদের আশা করেছিলেন৷ কিন্তু আবেদন করার সময় সেটা সম্ভব ছিল না৷
হ্যার্মান লামবের্টি আশা করেন, ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পক্ষ থেকে প্রত্যাবর্তনকারীদের আরো সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে৷ তাঁদের ক্যারিয়ারের ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হবে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বিজ্ঞানীদের গবেষণাকাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পর তাঁদের দীর্ঘস্থায়ী কোনো পদে নিয়োগ দেওয়া হলে, তাকে স্বাগত জানাবো আমরা৷'' তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি স্বায়ত্তশাসিত, তাই এক্ষেত্রে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা৷
১৭ জন গবেষক ও বিজ্ঞানী ফিরে এসেছেন
সহায়তা কর্মসূচির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৭ জন গবেষক ও বিজ্ঞানী বিদেশ থেকে জার্মানিতে ফিরে এসেছেন৷ এরপর সংখ্যাটা আরো বেশি হবে৷ আগামী বছরও এই কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ অবশ্য এটা নির্ভর করে রাজ্যের বাজেটের ওপর৷ এই আশা ব্যক্ত করেন হ্যার্মান লামবের্টি৷
বর্তমানে সহায়তা প্রকল্পের তিনটি পদের জন্য ৬০ জন আবেদন করেছেন৷ অনেক আবেদনই এসেছে অ্যামেরিকা থেকে৷ কেননা বহু জার্মান বিজ্ঞানী কিছুটা সময়ের জন্য পেশাগত কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পছন্দ করেন৷ প্রত্যাবর্তনকারীদের গবেষণার মূল বিষয়বস্তু প্রাকৃতিক বিজ্ঞানকে ঘিরে৷ তবে ভবিষ্যতে অন্যান্য বিষয়কেও সুযোগ দেওয়া হবে বলেন, লামবের্টি৷ যেমন জলবায়ু ও শক্তি, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি ইত্যাদি বিষয়গুলিকে৷