1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘অরাজনৈতিক সরকারের এসব বিষয়ে হাত দেয়া ঠিক না'

৩ জানুয়ারি ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৭ বছর করার পক্ষে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ভোটারের বয়সসহ ভোটসংক্রান্ত নানা বিষয়ে কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে...

https://p.dw.com/p/4omYf
বাংলাদেশ সংসদ ভবন ঢাকা
পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ভোটারদের বয়স ১৭ করার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

ডয়চে ভেলে: প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ভোটারদের সর্বনিম্ন  বয়স ১৭ বছর করলে ভালো হয়। তিনি মনে করেন, এতে আরো বেশি তরুণরা মতামত দিতে পারবেন। এটা বাংলাদেশের জন্য কতটা প্রয়োজ্য? এরমধ্যে কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে?

রফিকুল ইসলাম: কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা সেটা আমি কী করে বলবো? উনি (অধ্যাপক ইউনূস)  হয়তো মনে করেছেন, যেহেতু তরুণরা একটা শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করে নতুন একটা শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাই তরুণরা যাতে আরো বেশি করে মতামতের প্রতিফলন  ঘটাতে পারেন... সেকারণেই হয়তো ১৭ বছরের কথা বলেছেন। এটা তার একটা প্রস্তাব।

"সর্বনিম্ন বয়স ১৭ বছর করা কঠিন হবে"

প্রস্তাবটা কি ঠিক আছে? একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার হিসাবে আপনার পর্যবেক্ষণ কী? এই দেশের প্রেক্ষাপটে কি আমরা ১৭ বছরের জন্য প্রস্তুত?

প্রস্তুতি বলতে দুইটা দিক আছে,একটা হলো ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি, আরেকটা হলো মানসিক প্রস্তুতি। আমাদের যে জন্মসনদ দেয়া হয়, সেখানে বয়স কখনো কমিয়ে দেয়, আবার কখনো বাড়িয়ে দেয়। ইচ্ছামতো এটা করা হয়। দেখবেন শিক্ষিত লোক, যারা মাস্টার্স ডিগ্রি পাস, তাদের প্রায় সবারই জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি। স্কুল থেকে ১ জানুয়ারি জন্ম তারিখ ঠিক করে দিয়েছে। তাই ১৮, ১৭ বা ১৬ আসলে বাস্তবে নয়। বহু ১৮ আসলে ১৬ নয়, বহু ১৬ আসলে ১৬ নয়। ফলে নানা কারণে ওই বয়সটা মানা যায়।

তাহলে এটা করতে তো সময় লাগবে? যদি দ্রুত নির্বাচন করতে চায়?

আসলে বয়সটা আমাদের দেশে মারাত্মক ফ্যাক্টর না, কারণ, এখানো বয়স নিয়ে অনেক কিছুই হয়।  তবে এখানে অসুবিধা যেটা, তা হলো, যেসব আইন-কানুন আছে, তাতে একটু অসুবিধা তো হতেই পারে। আন্তর্জাতিক বা ইউএন-এর যে আইন আছে, সেখানে ১৮ বছর পর্যন্ত তো শিশু। তাহলে ১৮ বছরের নিচে যদি ভোটাধিকার দেয়া হয় তাহলে শিশুকে ভোটাধিকার দেয়া হলো।আন্তর্জাতিকভাবে এটাকে নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারে। আবার আমাদের কোনো কোনো আইনে শিশু আবার ১৬ বছর। আরেক আইনে আছে ১৪ বছর। আন্তর্জাতিক আইনে যে ১৮ বছর, সেটাকেও আমরা আবার স্বীকৃতি দিয়েছি। এটা আমাদের একটা সমন্বয়ের মধ্যে আনা দরকার ছিল। যদি আন্তর্জাতিক আইনকে আমরা সমন্বয় করি, তাহলে ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৭ বছর করা কঠিন হবে।

১৭ বছর করতে তো আইন করতে হবে। সংবিধান সংশোধনেরও প্রয়োজন হবে।

হ্যাঁ, ওটা তো আপনাকে বললাম। আইন পরিবর্তন করতে হবে। সংবিধানেও কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। ভোটার তালিকা আইন সংশোধন করতে হবে। তারপরে  রুলস , রেগুলেশন- এগুলো সবই সংশোধন করতে হবে। এরপর আরপিও সংশোধন করতে হবে। এগুলো না করে তো ১৭ বছর বয়সিদেরও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।

এটা তো তাহলে দীর্ঘ প্রক্রিয়া...

দীর্ঘ না হলেও  বেশ কিছু দিন সময় তো লাগবে।

সংস্কার , নির্বাচন- এসব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নানা মত আছে। তার মধ্যে আবার ১৭ বছরে ভোটার- এই বিতর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের যাওয়া ঠিক হবে?

ওনারা যাবেন কিনা  এটা তো ওনাদের ব্যাপার। তবে স্বাভাকিভাবে যদি বলেন, তাহলে নন-পলিটিক্যাল গভর্নমেন্টের এসব বিষয়ে হাত দেয়া ঠিক না। আমি হলে নিজেদেরকে বিতর্কিত করার মধ্যে যেতাম না।

এটা করলে ভোটার কত বাড়তে পারে?

আমার মনে হয় ৪০-৫০ লাখ ভোটার বাড়তে পারে।

ছাত্ররা গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা রাজনৈতিক দলও গঠন করছেন। ১৭ বছর হলে যে নতুন ভোট-ব্যাংক হবে, সেটা টার্গেটে রেখে হঠাৎ এই ১৭ বছরকে সামনে আনা হলো কিনা...

সেটা আমি তো বলতে পারবো না। হয়তো সেই কারণে উনি (ড. ইউনূস) এটা বলেও থাকতে পারেন। আবার বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেও বলতে পারেন।

কিছু কিছু দেশে তো ১৭ বছর বা তার কম বয়সেও ভোটার হয়।

কোনো কোনো দেশে আছে। আমাদের এখানে আলোচনা হতে পারে। সেটা সময় নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। বিবেচনার অনেক দিক আছে। আমি তো নিজে ভোটার তালিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এখানে অনেক অপ্রাপ্ত বয়স্ককেও ভোটার করা হয়। কারণ, বয়স প্রমাণের কোনো কার্যকর পদ্ধতি নেই। সার্টিফিকেটে যা আছে, তাই। এসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে অনেক সময় লাগে। এখন আলোচনা হতে পারে। কিন্তু সময়সাপেক্ষ কাজ নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেয়াই ভালো।

মতৈক্যে পৌঁছালেই নির্বাচন: ড. ইউনূস