তালিবানের হাতে নিহত পুলিশ প্রধান
১৯ অক্টোবর ২০১৮কান্দাহারের গভর্নরের এক দেহরক্ষীর গুলিতে বৃহস্পতিবার নিহত হয়েছেন আফগানিস্তানের অন্যতম ক্ষমতাশালী নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেনারেল আবদুল রাজিক৷
শীর্ষ পর্যায়ের এক নিরাপত্তা বৈঠক শেষে এ ঘটনা ঘটে৷ বৈঠকে আফগানিস্তান মিশনে মার্কিন বাহিনী ও ন্যাটোর যৌথ কমান্ডার জেনারেল স্কট মিলার, কান্দাহারের গভর্নর জালমায় ওয়েসা এবং কান্দাহারের প্রাদেশিক গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান আবদুল মোহমিনও উপস্থিত ছিলেন৷
হামলায় রাজিক ছাড়াও মোহমিন এবং এক আফগান সাংবাদিক মারা গেছেন বলেও জানা গেছে৷
মিলারের শরীরে কোনো আঘাত না লাগলেও আহত ১৩ জনের মধ্যে দুই অ্যামেরিকান ও গভর্নর রয়েছেন৷
ঘটনার পরপরই দায় স্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে তালিবান৷ তাদের দাবি, মিলার এবং রাজিকই ছিলেন হামলার মূল লক্ষ্য৷ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘অন্য কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কান্দাহারের নৃশংস পুলিশ প্রধানও নিহত হয়েছেন৷’’
আফগানিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের দুইদিন আগে ঘটলো হামলার এ ঘটনা৷
দেহরক্ষীই হত্যাকারী
কান্দাহার থেকে নির্বাচিত আফগান পার্লামেন্টারিয়ান খালিদ পশতুন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, হামলাকারী সবার আগে রাজিককেই গুলি করে৷ তিনি বলেন, ‘‘বৈঠক শেষ হওয়ার পর কর্মকর্তারা যখন একজন আরেকজনের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন, তখন গভর্নরের এক দেহরক্ষী গুলি চালায়৷’’
তিনি বলেন, ‘‘জেনারেল রাজিককে সবার আগে গুলি করা হয়৷ প্রাদেশিক গভর্নর, গোয়েন্দা প্রধান এবং এই অঞ্চলের সামরিক কমান্ডারও ছিলেন হামলার লক্ষ্য৷’’
২০১১ সাল থেকে কান্দাহার পুলিশের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন রাজিক৷ একটি গোপন নির্যাতন কেন্দ্র পরিচালনাসহ নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে৷ ২০১৭ সালে জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি নির্যাতন ও গুমের অভিযোগে জেনারেল রাজিকের বিচারের আহ্বান জানায়৷ তবে রাজিক বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন৷
তালিবানদের হাত থেকে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল সুরক্ষায় মার্কিন সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন রাজিক৷
গত বছর এক হামলায় কান্দাহারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাঁচ কূটনীতিক প্রাণ হারান৷ রাজিক সে হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান৷
হুমকির মুখে নির্বাচন
এই হামলায় শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে আশংকা বিশ্লেষকদের৷ তালিবান অনেক আগে থেকেই নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে এসেছে৷ দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ২৪৯ আসনের জন্য নির্বাচনে লড়ছেন প্রায় আড়াই হাজার প্রার্থী৷ নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর সময় এঁদের ১০ জন বিভিন্ন হামলায় নিহত হয়েছেন৷
কান্দাহারের হামলার পর এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘‘জেনারেল রাজিকের মৃত্যু দক্ষিণের নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে৷ ভোটাররা হয়তো আর নিরাপদ বোধ করবেন না৷’’
মার্কিন সেনাবাহিনী অবশ্য বলছে, এই হামলায় তালিবানকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার চেষ্টা এবং দেশটিতে তাঁদের সেনা উপস্থিতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফট্যানেন্ট কর্নেল ফকনার বলছেন, ‘‘এই হামলায় আমাদের দক্ষিণ এশিয়া নীতি পরিবর্তন হবে না৷ বরং এর ফলে আমরা এখন আরো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷’’
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস রাজিকের মৃত্যুকে ‘দেশপ্রেমিকের মৃত্যু’ বলে আখ্যা দিয়েছেন৷ তবে এই হামলায় কান্দাহারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রভাব পড়ার আশংকাও ব্যক্ত করেছেন তিনি৷
পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘আমরা খুঁজে বের করবো কারা এই হত্যার জন্য দায়ী৷ তবে এই মুহূর্তে আমরা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছি৷ আফগান জনগণকে রক্ষায় আমরা কাজ চালিয়ে যাবো৷’’
এডিকে/এসিবি (এপি, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)