দিল্লি বিধানসভার ভোট ৫ ফেব্রুয়ারি, কেজরিওয়াল জিততে পারবেন?
৭ জানুয়ারি ২০২৫অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ, নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি না কি রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস, দিল্লি-শাসন করার দায়িত্ব কাকে দেবেন ভোটদাতারা, তা জানা যাবে ৮ ফেব্রুয়ারি।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার মঙ্গলবার দিল্লি বিধানসভার ভোটের দিন ঘোষণা করে জানিয়েছেন, এক কোটি ৫৫ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তার মধ্যে দুই লাখের বেশি ভোটদাতা এই প্রথমবার ভোট দেয়ার অধিকার পাবেন।
রাজীব কুমারের দাবি, ''ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব নয়। এটা ফুলপ্রুফ ব্যবস্থা। এই বিষয়ে প্রতিটি অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হয়েছে। কিন্তু সেই অভিযোগের কোনো সারবত্তা ছিল না।''
কেজরিওয়াল কি পারবেন?
আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল তিনবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ২০১৩ সালে কংগ্রেসের সমর্থনে, তারপর ২০১৫ সালে তিনি বিপুলভাবে জেতেন। ৭০টির মধ্যে ৬৭টি আসন পায় আপ। কংগ্রেস একটিও আসন পায়নি। ২০২০ সালে কেজরিওয়াল আবার ৬২টি আসনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন।
কিন্তু তারপর মদের লাইসেন্স কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সাবেক উপ-মুখ্যমন্ত্রী মনীষ সিসোদিয়া প্রথমে জেলে যান। পরে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও জেলে যেতে হয়। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের সময় প্রচার করার জন্য তিনি সাময়িকভাবে ছাড়া পান। পরে আবার তাকে জেলে যেতে হয়। এরপর তিনি জামিন পান এবং মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হন আপের আতিশি।
এরমধ্যে লোকসভা নির্বাচনে আপ একটাও আসনে জেতেনি। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেও তারা জিততে পারেনি। দিল্লির সাতটি আসনই বিজেপি জিতেছে। বিধানসভা নির্বাচনে কেজরিওয়াল আর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেননি। একাই লড়ছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, দীর্ঘকালীন জেলে বন্দি থাকা, দুর্নীতির অভিযোগ, লোকসভায় খারাপ ফলের ধাক্কা কাটিয়ে আপ কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? কেজরিওয়াল কি আবার দলকে জেতাতে পারবেন।
ইতিহাস বলছে, দিল্লির ভোটে কেজরিওয়ালের একের পর এক সাফল্যের পিছনে আছে, জনমোহিনী সিদ্ধান্ত। তিনি প্রথমে স্লোগান দেন, 'বিজলি হাফ, পানি মাফ', অর্থাৎ, বিদ্যুতের মাসুল অর্ধেক করা হবে ও জলের মাসুল কার্যত দিতে হবে না, বিশেষ করে গরিবদের। পরে ক্ষমতায় এসে তিনি প্রতিশ্রুতি পালন করেন। এরপর তিনি মেয়েদের সরকারি বাসে যাতায়াত ফ্রি করে দেন। বিভিন্ন জায়গায় মহল্লা ক্লিনিক করে বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সরকারি স্কুলের হাল ফেরাবার ব্যবস্থা করা হয়।
এবার কেজরিওয়ালের হাতিয়ার এমনই একটি ঘোষণা, আপ ক্ষমতায় এলে মেয়েদের মাসে দুই হাজার একশ টাকা করে দেয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, মধ্যপ্রদেশে লাডলি বহনা, মহারাষ্ট্রে, কর্ণাটকে এই ধরনের প্রকল্প তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেসকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছে। দিল্লিতে কি কেজরিওয়ালও এই প্রকল্পের জোরে ক্ষমতায় আসতে পারবেন?
আপ ইতিমধ্যে দলীয় স্তরে এই প্রকল্পের জন্য মেয়েদের নাম নথিভুক্ত করেছে। লাখ লাখ নারী তাদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। বাঙালিপ্রধান চিত্তরঞ্জন পার্ক এলাকায় বারোশ নারী তাদের নাম নথিভুক্ত করিয়ে নিয়েছেন।
বিজেপি-র ভরসা মোদী
বিজেপি এখনো পর্যন্ত দিল্লির জন্য কোনো মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। তারা প্রধানমন্ত্রী মোদীর নামেই ভোট চাইবে। গত কয়েকদিনে প্রধানমন্ত্রী দিল্লির জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন।
বিজেপি চাইছে, লোকসভা ভোটের সাফল্যকে ধরে রাখতে। তবে লোকসভা ভোট ছিল মোদী বনাম রাহুল গান্ধীর লড়াই। সেখানে কেজরিওয়ালের ভূমিকা ছিল খুবই কম। কিন্তু এবার কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে বিজেপি-কে লড়তে হবে।
কংগ্রেসের অবস্থা
দিল্লিকে দীর্ঘদিন ধরে শাসন করলেও গত দুইটি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একটিও আসনে জিততে পারেনি। এবার কি তারা পারবে?
কংগ্রেস দিল্লিতে সরকার বানাবে তা দলের অতি বড় সমর্থকও মনে করেন না। তবে তারা দাবি করছেন, দল এবার কয়েকটি আসনে জিতবে। তাদের ভোটের হার বাড়বে। এমনকী যদি কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় এবং কংগ্রেস কয়েকটি আসনে জিততে পারে, তা হলে তাদের গুরুত্ব অনেকটাই বাড়বে।
কেজরিওয়ালের আসন কমবে
দীর্ঘদিন ধরে দিল্লিতে সাংবাদিকতা করা গুলশন ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''এই মুহূর্তে যা অবস্থা, তাতে কেজরিওয়ালের আসন কমবে, তবে তিনি সরকার বানাতেই পারেন।''
গুলশনের বক্তব্য, ''গত নির্বাচনে ১১ আসনে আপ ১০ হাজারের কম ভোটে জিতেছিল, বিজেপি জিতেছিল চারটি আসনে। ২০ হাজারের কম ব্যবধানে আপ জিতেছিল ২৩টি আসনে, বিজেপি জিতেছিল তিনটি আসনে। এবার বিজেপি-র রণনীতি হলো, ১০ হাজারের কম ভোটে হারা আসনে তারা বেশি গুরুত্ব দেবে এবং সেগুলি জেতার চেষ্টা করবে। বিজেপি নেতারা গত ছয় মাসে গরিব বস্তিতে গিয়ে রাত কাটাচ্ছেন। কিছু আপ নেতাকে তারা দলে নিয়েছেন।''
গুলশন মনে করেন, ''আপের বড় চিন্তা হলো কংগ্রেসকে নিয়ে। কারণ, কংগ্রেসের ভোটই আপ-এর কাছে গেছিল। ফলে কংগ্রেস ভালো করলে তাতে আপ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কংগ্রেস কেজরিওয়াল এবং বিশেষ করে মনীষ সিসোদিয়ার বিরুদ্ধে ভালো প্রার্থী দিয়েছে। মুসলিম-বহুল আসনগুলিতে কংগ্রেসের জেতার সম্ভাবনা আছে।''
আপ নেতা অনুপ ঠাকুর ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আমরাই জিতব। আসন কিছু কম হতে পারে। কিন্তু দিল্লিতে আপই আবার ক্ষমতায় আসছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষদের সমর্থনে কোনো চিড় ধরেনি''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)