দুই মাসের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার রাজনৈতিক দল
২১ ডিসেম্বর ২০২৪আগামী দুই মাসের মধ্যেই ঘোষণা হতে পারে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী-জনতার নতুন রাজনৈতিক দল৷ এরইমধ্যে থানা পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে৷
তবে জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই দুটি পক্ষই অরাজনৈতিক ফোরাম হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবে৷ রাজনৈতিক দলটি নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করবে৷ চাইলে ওই দুইটি ফোরাম থেকে যে কেউ নতুন দলে যোগ দিতে পারবেন এমনটাই জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্ররা৷
এদিকে নতুন যে-কোনো রাজনৈতিক দলকে স্বাগত জানাতে চান রাজনৈতিক নেতারা৷ তবে সরকারের ছত্রছায়ায় কোনো রাজনৈতিক দল হলে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে বলে মনে করছেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা৷
রাজনৈতিক দল গড়ার কার্যক্রম
বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট মাসে শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে প্লাটফর্ম৷ ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা হাসিনা সরকারেরর পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়৷ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতা এই সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷
এরইমধ্যে সংগঠনটি পুনর্গঠন করা হয়েছে৷ সেইসাথে ওই আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি নামে আরেকটি সংগঠন করা হয়েছে৷
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আগামী দুই-এক মাসের মধ্যেই ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করা হবে বলে জানান৷
ডয়চে ভেলেকে শনিবার তিনি বলেন, ‘‘গণঅভ্যুত্থানের যে স্বতঃস্ফূর্ত শক্তি ছিলো সেটাকে আমরা অর্গানাইজ করছি৷ আর সেই লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আমরা এখন পর্যন্ত ১০০টি থানা কমিটি দিয়েছি৷ আশা করি, আগামী মাসের ১৫-২০ দিনের মধ্যে সব থানা কমিটি হয়ে যাবে৷ এরপর আমরা ছাত্রদের কাছে এটা পেশ করব৷ তারাই সিদ্ধান্ত নেবে, কত দিনের মধ্যে তারা কাজটি (দল গঠনের) করতে পারবে৷’’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবেই থাকবে বলেও জানান তিনি৷
নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেবেন ছাত্ররা, এমনটি উল্লেখ করে তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে৷ তবে এই দুই অংশের কেউ চাইলে নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারবেন৷
‘‘আমাদের সাথে বিপ্লবী, সিভিল সোসাইটি এবং পলিটিক্যাল তিন ধরনের লোক আছেন৷ যারা রাজনীতি করতে চান তারা অবশ্যই যদি নতুন রাজনৈতিক দল তাদের পছন্দ হয় সেখানে তারা যোগ দিতে পারবেন,'' বলেন পাটওয়ারী৷
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘‘দুই মাসের মধ্যেই আশা করছি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করবে৷ এর গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র তৈরিসহ অন্যান্য কাজ এগিয়ে যাচ্ছে৷ দলের নাম নিয়েও আলোচনা হচ্ছে৷ তবে এখানো চূড়ান্ত হয়নি৷ আর দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদে কারা থাকবেন তা নিয়েও কাজ চলছে৷''
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এটি একটি নতুন রাজনৈতিক দল হবে৷ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি থাকবে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে৷’’
রাজনৈতিক দলগুলোর সতর্কতা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে এরইমধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে৷ রাজনৈতিক নেতারা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ছত্রছায়ায় এমন রাজনৈতিক দল গঠিত হলে নিরপেক্ষতা হারাবে সরকার৷
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, ‘‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি বিপ্লব করেছে৷ তারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে৷ আবার চাইলে অন্য কোনো দলে যোগও দিতে পারে৷''
তবে তিনি এই বলে সতর্ক করেন যে, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকারের সহায়তা নিয়ে, সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যদি দল গঠন করা হয় তাহলে তা বিতর্কিত হবে৷ অন্তর্বর্তী সরকারও তার নিরপেক্ষতা হারাবে৷’’
তিনি আরো বলেন, এর ফলে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে৷
একই মন্তব্য করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যে-কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে৷ এটা তাদের অধিকার৷ কিন্তু সরকারের তরফ থেকে কোনো ব্যক্তিবর্গ, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে রাজনৈতিক দল গঠনে আনুকূল্য, অনৈতিক সহায়তা দেয়া ঠিক হবে না৷ এটা করলে সরকার তার নিরপেক্ষতা বা গ্রহণযোগ্যতা হারাবে৷’’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আর যদি বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য দিয়ে দল গঠন করায় তাহলে তাদের অধীনে নির্বাচন সম্ভব হবে না৷ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার লাগবে৷’’
‘সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা’ অস্বীকার
সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বা আনুকূল্যে রাজনৈতিক দল গঠন হচ্ছে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘‘আমাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ক্ষেত্রে এমন কিছু হচ্ছে না৷ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের ইচ্ছা নেই৷ যারা উপদেষ্টা আছেন তাদেরও ইচ্ছা নেই৷ যারা এটা বলছে তারা সংকট সৃষ্টি করার জন্য বলছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আসলে জিয়াউর রহমান সাহেব রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন৷ সেই সময় থেকেই মানুষের মনে কিংস পার্টির আইডিয়া রয়ে গেছে৷’’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন,‘‘এটি একটি নতুন রাজনৈতিক দল হবে৷ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি থাকবে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে৷’’
তিনি দাবি করেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকারে বৈষম্যবিরোধী বা নাগরিক কমিটির কেউ নেই৷ ফলে সরকারের সহযোগিতায় দল বা কিংস পার্টি করার প্রশ্নই আসে না৷ আর সেটা হলে সরকারতো আমাদের সব দাবি মেনে নিতো৷ তা তো হচ্ছে না৷’’
‘দ্রুত নির্বাচন চাইবে নতুন রাজনৈতিক দল’
ছাত্রদের এই রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচন চাইবে৷ তবে তার আগে সংস্কারের কাজ এবং ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময়কার ঘটনার বিচারকাজের উপর গুরুত্ব দেন এই দুই মুখপাত্র৷
নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘‘আমরা চাই বাংলাদেশ দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করুক৷ কিন্তু যারা বাংলাদেশের দুই হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, ৫০ হাজার মানুষের চোখ ও অঙ্গ কেড়ে নিয়েছে তাদের বিচার আমরা আগে চাই৷ ১৯৭১ এবং ১৯৯০-এর বিচার আমরা পাইনি৷ সুতরাং ২০২৪-এর বিচার আমরা না পাওয়া পর্যন্ত ওই প্রক্রিয়ায় (নির্বাচন) যাওয়া উচিত হবে বলে মনে করি না৷’’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘‘নতুন দল দ্রুতই নির্বাচন চাইবে৷ তবে তার আগে সংস্কার হতে হবে যাতে আর কেউ স্বৈরাচার না হতে পারে ন৷ গণতন্ত্র হরণ করতে না পারে৷’’