দুর্যোগের নাম জিএলওএফ বন্যা
বন্যা হওয়ার নানান কারণের কথা আমরা জানি৷ তবে পাহাড়ি এলাকায় হিমবাহ বা পাহাড় ধসের কারণে সৃষ্ট বন্যা সম্পর্কে আমরা হয়ত ততটা অবগত নই৷ কিন্তু পাকিস্তানের পাহাড়ি এলাকায় এটি একটি বড় সমস্যা৷
জিএলওএফ কী?
পুরো নাম ‘গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড’৷ নাম শুনে বোঝা যাচ্ছে, এটি একধরনের বন্যা৷ পাহাড়ি লেক বা হ্রদের পানি কোনো কারণে বেড়ে নীচের দিকে প্রবাহিত হয়ে বন্যা সৃষ্টি করতে পারে৷ তখন পাহাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা গ্রাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ এটিই জিএলওএফ বন্যা৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমবাহের বরফ গলে বা ধসে, কিংবা অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসেও এই বন্যা তৈরি হতে পারে৷
ঝুঁকিতে দেড় কোটি মানুষ
গত ফেব্রুয়ারিতে নেচার কমিউনিকেশন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, বিশ্বের প্রায় দেড় কোটি মানুষ জিএলওএফ বন্যার ঝুঁকিতে আছে৷ এর মধ্যে পাকিস্তানে এমন ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ৷ এছাড়া চীন, আন্দেজ পর্বতমালা ও ইউরোপের আল্পস এলাকার মানুষও ঝুঁকিতে আছেন৷
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পাকিস্তান
দেশটির প্রায় আট লাখ মানুষ হিমবাহের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাস করেন৷ ইউএনডিপি জানিয়েছে, পাকিস্তানে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চার বছরে ১৪ বার হিমবাহ লেকের পানি উপচে পড়ার ঘটনা ঘটেছে৷ আর শুধু ২০২২ সালেই এমন ঘটনা ঘটেছে ৭৫ বার৷ ছবিতে পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকার হাসানাবাদ গ্রামের দিলশাদ বানুকে তার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সামনে দেখা যাচ্ছে৷
ছেলের মৃত্যু
গতবছর কারাকোরাম পর্বতমালায় অবস্থিত শালট গ্রামে জিএলওএফ বন্যার কালো পানি ছুটে গিয়েছিল৷ এই পানি জাহরা রমজানের (ছবি) ১১ বছর বয়সি ছেলেকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে৷ ‘‘আমি ছেলের দেহও আর দেখতে পারিনি,’’ বলেন ৪০ বছর বয়সি জাহরা৷ তাই এখন অতিবৃষ্টি বা বন্যা হলেই তিনি শঙ্কায় থাকেন৷
প্রতিরোধ ব্যবস্থা
জিএলওএফ বন্যা ঠেকাতে জাতিসংঘের একটি প্রকল্প আছে৷ এর আওতায় কারাকোরাম পর্বতমালার হাসানবাদ গ্রামে এই আবহাওয়া স্টেশনটি বসানো হয়েছে৷ এছাড়া পাহাড়ের উপরে সেন্সরও বসানো হয়েছে৷ সেন্সর দিয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং নদী ও লেকের পানির স্তর পরিমাপ করা হয়৷ এছাড়া গ্রামে স্পিকার বসানো হয়েছে যেন গ্রামবাসীদের সতর্ক করা যায়৷ আর বন্যার পানির প্রবাহ ধীর করতে পাথর ও তারের দেওয়ালও স্থাপন করা হয়েছে৷
প্রশিক্ষণ
জাতিসংঘের প্রকল্পের আওতায় তারিক জামিলসহ ২৪ জনকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ফার্স্ট এইডের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া দুর্যোগের সময় সবাইকে কীভাবে সরিয়ে নিতে হবে সেই প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে৷ পাহাড়ের উপর হিমবাহ লেকের কাছে স্থাপন করা ক্যামেরার ছবি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন এই স্বেচ্ছাসেবীরা৷