1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্মীয় সম্প্রীতি বাড়াতে প্রকল্প হয়েছে, তবে পরিস্থিতি বদলায়নি

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, নির্যাতনের ঘটনা থামছেই না৷ সব ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়াতে গত বছরের জুলাই মাসে ধর্ম মন্ত্রণালয় ২৫ কোটি টাকার এক প্রকল্প চালু করেছে৷ সেই প্রকল্প কি আদৌ কোনো কাজে আসছে?

https://p.dw.com/p/4NKb6
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা হয়৷
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা হয়৷ছবি: Privat

এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এসব প্রকল্প দিয়ে কাজ হবে না৷ মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে৷ আর সাম্প্রদায়িক যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলো যারা করছে, তাদের কাছে ধর্মের বাণীর কথা বলে লাভ নেই৷ তারা স্বার্থান্বেষী মহল৷ তারা লাভের জন্য এই কাজ করে৷ ফলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি হবে না৷’’

জনগণের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বাড়াতে গত বছরের জুলাইয়ে ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়৷ সেই প্রকল্পের আওতায় ‘বাংলা ঢোল লিমিটেড’ ও ‘রিভ সিস্টেম’ নামে একটি আইসিটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিও করে৷ মূলত প্রচার প্রচারণামূলক এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৫ কোটি টাকা৷

টক শো করেছি, প্রতিটি জেলা শহরে মতবিনিময় সভা করেছি: প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লা-আল-শাহীন

মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পে পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন উপ-সচিব আবদুল্লা-আল-শাহীন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যে অনেকগুলো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি৷ আমরা লিফলেট বিতরণ করেছি, দুর্গাপূজার সময় পোস্টার ছাপিয়ে সারাদেশে সেগুলো লাগানোর ব্যবস্থা করেছি, টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়েছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণামূলক অনেকগুলো কাজ করেছি৷ টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন নাটকের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ আমরা টক শো করেছি, ডকুমেন্টারিসহ প্রতিটি জেলা শহরে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছি৷ জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এসব সভায় ডাকা হয়েছে৷’’

এই ধরনের আলোচনায় কখনো কেউ ডেকেছিল কিনা জানতে চাইলে যশোর সদরের সাড়াপোল মসজিদের ইমাম আকরাম হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইসলামী ফাউন্ডেশন তো মাঝে মধ্যে আমাদের নানা অনুষ্ঠানে ডাকে৷ সব জায়গাতেই ধর্মীয় সম্প্রীতি, ধর্মীয় উগ্রবাদ নিয়ে আলোচনা হয়৷ ফলে এই ধরনের কোনো প্রকল্পের অনুষ্ঠানে ডেকেছিল কিনা বলতে পারবো না৷’’

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধর্মীয় বাণী প্রচার করা হয়েছে: বিশ্বজিত সাহা

তবে যশোর শহরের পালবাড়ির বায়তুন নূর জামে মসজিদের ইমাম আনোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার যদ্দুর মনে পড়ছে, এই ধরনের প্রকল্পের বিষয়ে আমাদের বলা হয়েছিল৷ একটা আলোচনাসভা হয়েছিল, সেখানে আমাকেও ডেকেছিল৷ সেটা কয়েকমাস আগের ঘটনা৷’’ এসব প্রকল্পে টাকা খরচ করে সত্যিকার অর্থে কোনো ফল পাওয়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘তা বলতে পারবো না৷ তবে এই ধরনের সভাগুলোতে যা বলে, তা প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই বলে৷ আমরাও খুতবায় সেগুলো বলি৷ এগুলো তো নতুন কিছু না৷ তারা না ডাকলেও আমরা বলতাম৷’’

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গত বছরের জুলাইয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় মিডিয়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলা ঢোল লিমিটেড’ ও আইসিটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘রিভ সিস্টেম লিডিটেড’-এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, ‘‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনাকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর৷ যে ধরনের ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটে, এগুলোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স৷ এসব ঘটনা ঘটিয়ে কেউ পার পাবে না৷ কোনো অবস্থাতেই কোথাও যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, তার জন্যই এখন সম্প্রীতি বাড়াতে ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্মসূচিগুলো হাতে নিয়েছে৷’’

প্রকল্পের আওতায় তৈরি একটি পোস্টার৷
প্রকল্পের আওতায় তৈরি একটি পোস্টার৷

মিডিয়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রমোশনাল কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য তথ্য-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিচ্ছে আইসিটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘রিভ সিস্টেম লিমিটেড’৷ এটি ‘অ্যাডি সফট লিমিটেড’ ও ‘প্রাচুর্য ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’ নামে দু'টি আইসিটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করছে৷ কী ধরনের কাজ করছে তারা? এ সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে রিভ সিস্টেমের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিত সাহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের আওতায় একটি ডায়নামিক ওয়েব পোর্টাল ও ড্যাশবোর্ড, ১০টি মোবাইল অ্যাপ, একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-ভিত্তিক বট সিস্টেম ডেভেলপ করা হয়েছে৷ কয়েকটি অ্যাপ ইতিমধ্যে চালু হয়েছে৷ কিছু টিভিসিও তৈরি করা হয়েছে৷ সেগুলো দ্রুতই টেলিভিশনে প্রচারিত হবে৷ একইসঙ্গে ডিজিটাল প্রচারণা, একটি পিআর সিস্টেম প্রস্তুতের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধর্মীয় বাণীর প্রচার ও ক্ষুদে বার্তাসহ ভয়েস মেসেজ, ই-মেইল বার্তা পাঠানো হয়েছে৷ ইতিমধ্যে ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে৷ বাকি কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে৷’’

‘বাংলা ঢোল লিমিটেড’ কী ধরনের কাজ করেছে জান চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক রাজ কুমার চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ট্যাডিশনাল এবং ডিজিটাল সব ধরনের কমিউনিকেশনের তথ্যই তৈরি করে প্রচার করেছি৷ আমরা ট্যাডিশনাল কাজের মধ্যে পোস্টার বানিয়ে সেগুলো দেয়ালে লাগানোর ব্যবস্থা করেছি৷ টিভি নাটক করেছি, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি, ওয়েব সিরিজ করেছি৷ আর ডিজিটাল কাজের মধ্যে ফেসবুক পোস্ট করা হয় নিয়মিত৷ এছাড়া মিউজিক ভিডিও করেছি, ডকুমেন্টারি করেছি৷ এই কাজগুলো জেলা পর্যায়েও হয়েছে৷ গত পূজার সময় পোস্টার ছাপিয়ে সবগুলো মন্ডপ ও মন্দিরে লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এই কাজগুলো ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে৷ সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থানের বিষয়টি এসব পোস্টারে তুলে ধরা হয়েছে৷ কিছু অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরি করা হয়েছে৷ আমরা যুবকদের মধ্যে এই প্রচারণায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছি৷ ওয়েব সিরিজ আর টিভি নাটকগুলোর খুব শিগগিরই প্রচার শুরু হবে৷’’

‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় পোস্টার বানিয়ে তাদের  কাছে পাঠানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইসলামি ফাউন্ডেশন টাঙ্গাইলের উপ-পরিচালাক মোহাম্মদ আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুর্গাপূজার সময় আমাদের কাছে এই পোস্টারগুলো পাঠানো হয়েছিল৷ আমরা লোক দিয়ে সেগুলো লাগানোর ব্যবস্থা করেছি৷ যে আলোচনাসভা হয়েছে, সেখানেও আমাদের ডাকা হয়েছিল৷ এর বাইরেও আমরা ইসলামি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নানা ধরনের আলোচনার আয়োজন করি৷’’

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷