নিজেকে ছোট করছেন সাকিব
২৮ অক্টোবর ২০১৯শুরুতে বলে নেয়া ভালো, ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের সময়ের মতো এখনো বিসিবি প্রধানের কথাবার্তার ধরন একেবারেই অভিভাবকসুলভ নয়৷ এজন্য তার সমালোচনা হচ্ছে, হবেও৷
তবে আগে বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের সার্বিক স্বার্থের প্রশ্ন ছিল৷ তখন স্পষ্ট বলা গেছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-র সর্বোচ্চ পদে আসীন নাজমুল হাসান পাপন অভিভাবকসুলভ সর্বোচ্চ উদারতা আর সহনশীলতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ এখন কিন্তু বিসিবি প্রধানের যুক্তি হতে পারে, একজন ক্রিকেটারের (সাকিব) অন্যায়ে যদি বাকি সবার ক্ষতি হয়, একজন ক্রিকেটারের নিয়মবহির্ভূত উপায়ে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন উদারমনে মানতে গিয়ে যদি ক্রিকেটের সার্বিক ক্ষতি করতে হয়, তাহলে সেই উদারতা কতটা কাম্য?
এর সদুত্তর আমাদের জানা নেই৷ একথা সত্যি যে, সাকিব যা করেছেন তাতে শুধু তারই লাভ হবে আর ক্ষতি হবে বিসিবি এবং অন্য ক্রিকেটারদের৷ এমন পরিস্থিতি কিন্তু সাকিবই সৃষ্টি করেছেন!
সাকিব কী করেছেন তা সবারই মোটামুটি জানা৷ বিসিবির সঙ্গে চুক্তির শর্ত না মেনে তিনি একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছেন৷ চুক্তিটা করেছেনও এমন সময়ে যখন তার নেতৃত্বে ক্রিকেটারদের ধর্মঘট চলছে৷ ক্রিকেটে বিদ্রোহ বা দাবি আদায়ের আন্দোলন অনেক হয়েছে, কিন্তু আন্দোলন চলার সময়েই শীর্ষ নেতা কোনো পণ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হতে মোটা অঙ্কের চেকে স্বাক্ষর করছেন, এমন নজির কিন্তু আগে দেখা যায়নি৷
এভাবে ক্রিকেটারদের নেতা হিসেবে গড়ে ওঠা ভাবমূর্তিটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন সাকিব৷ তা করেই থেমে থাকেননি৷ বিসিবি তাকে নোটিশ পাঠানোর পর বিসিবি প্রধানের কাছে অভিভাবকসুলভ আচরণ প্রত্যাশা করে বক্তব্যও দিয়েছেন৷ অভিবাবকসুলভ আচরণের প্রত্যাশা তার থাকতেই পারে৷ কিন্তু সাকিব নিজে যা করছেন, তা কি ক্রিকেটারদের প্রতি অভিভাবকসুলভ? অন্যদের লাভ-ক্ষতি বিবেচনায় না নিয়ে নিজের লাভ আগে নিশ্চিত করা কি অভিভাবকের মতো?
আশার কথা, বিসিবির অনুমতি না নিয়ে টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করলেও সাকিবের বিরুদ্ধে মামলা করবে না বিসিবি৷ বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন আহমেদ তেমনটিই জানিয়েছেন৷ তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, আদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে না হলেও নিয়মভঙ্গের জন্য সাকিবকে জবাবদিহি করতেই হবে৷
এটা কোনো অন্যায্য দাবি নয়৷ কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির নিজেকে জবাবদিহিতার ঊর্ধে ভাবাটাই বরং অন্যায়৷
ভারত সফরের আগে দু'টি অনুশীলন ম্যাচ খেলছেন না সাকিব৷ বলেছেন, অন্যদের পর্যাপ্ত সুযোগ করে দিতেই নাকি তার এই সিদ্ধান্ত৷ অতীতে কি তিনি কখনো এমনটি করেছেন? ভবিষ্যতেও সব সফরের আগে কি প্র্যাকটিস ম্যাচ থেকে নিজেকে এভাবে সরিয়ে নেবেন সাকিব? আশা করি, করবেন না৷ কারণ, ক্রিকেটারদের সবচেয়ে কাছের অভিভাবক কিন্তু অধিনায়ক৷ অনুশীলনে অভিবাবক পাশে না থাকলে প্রস্তুতিতে ঘাটতি থেকে যায়৷ তার প্রভাব টি-টোয়েন্টি বা টেস্ট ম্যাচে পড়তে পারে৷ তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই ক্ষতি৷ বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের তা বোঝা দরকার৷