নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল পুজদেমনের দল
২২ ডিসেম্বর ২০১৭ক্ষমতাচ্যুত প্রাদেশিক প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদেমনের ‘কাটালুনিয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ' দল বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে ৩৪টি আসন লাভ করে৷ অপর দু'টি স্বাধীনতাপন্থি দল একত্রে ৩৬টি আসন সংগ্রহ করেছে৷ কাজেই ১৩৫ আসন বিশিষ্ট প্রাদেশিক সংসদে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকছে৷ ফলে পুজদেমন দৃশ্যত ক্ষমতায় ফিরতে চলেছেন৷
২০১৫ সালের শেষ প্রাদেশিক নির্বাচনে কিন্তু পুজদেমনের জোট আরেকটু ভালো ফলাফল করেছিল: সেবার স্বাধীনতাপন্থি দলগুলি মিলে মোট ৭২টি আসন জয় করে – এবারের চেয়ে দু'টি আসন বেশি৷ এবারের নির্বাচনে বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলি প্রদত্ত ভোটের মাত্র ৪৮ শতাংশ লাভ করেছে৷ মাদ্রিদপন্থি নাগরিক দল তাদের ৩৭টি আসনের অধিকাংশ সরাসরি ভোটে জয় করে; কিন্তু নাগরিক দলের পক্ষে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মতো জোরালো জোট গঠন করা সম্ভব নয়৷
ব্রাসেলসে তাঁর স্বেচ্ছানির্বাসন থেকে পুজদেমন এই জয়কে ‘‘কাটালান প্রজাতন্ত্রের'' পক্ষে একটি জয় ও স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখয়ের পক্ষে একটি ‘‘চপেটাঘাত'' বলে অভিহিত করেছেন৷ ‘‘আমাদের কথা যাতে শোনা হয়, আমরা সে অধিকার অর্জন করেছি বলে আমার ধারণা,'' পুজদেমন যোগ করেন৷
নাগরিক দলের নেতা ইনেস আরিমাদাস বলেন, ভোটের ফলাফল প্রমাণ করে যে, ‘‘কাটালানদের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ নিজেদের কাটালান, স্প্যানিশ ও ইউরোপীয়'' বলে বোধ করে৷ তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাবার সংকল্প ঘোষণা করেন৷
কাটালান জাতীয় সম্মেলনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আগুস্তি আলকোবেরো বিচ্ছিন্নতাবাদিদের জয় দাবি করে বার্সেলোনায় এক জনতার সমীপে বলেন যে, ‘‘স্বাধীনতাপন্থি দলগুলি নির্বাচনে জয়লাভ করেছে৷'' আলকেবেরো কারারুদ্ধ বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতিকদের মুক্তি ও মাদ্রিদ কর্তৃক বরখাস্তকৃত ‘‘সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা'' দাবি করেন৷
কাটালুনিয়া ইতিমধ্যেই বহুলাংশে স্বশাসিত৷ তা সত্ত্বেও এই প্রাদেশিক নির্বাচনকে কাটালুনিয়ার স্পেন থেকে স্বাধীন হওয়ার প্রচেষ্টার সনদ – বা তার বিপরীত – বলে গণ্য করা হচ্ছিল৷ ভোটের আগের বিভিন্ন জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছিল যে, স্বাধীনতাপন্থি তরফে ইআরসি দল ও স্পেনের সঙ্গে ইউনিয়নের পক্ষপাতী নাগরিক দল, এই দু'টি দলের মধ্যে কোনো একটি সর্বাধিক আসন সংগ্রহ করবে৷
স্বাধীনতাপন্থি শক্তিদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়াটা স্পেনের প্রধানমন্ত্রী রাখয়ের সরকারের পক্ষে একটি লক্ষণীয় পরাজয়, কেননা রাখয় এই নির্বাচনের মাধ্যমে কাটালুনিয়ায় বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতার অন্ত ঘটানোর আশা করেছিলেন৷ অপরদিকে এই ভোটের ফলাফল থেকে কাটালুনিয়ায় রাজনৈতিক অচলাবস্থার অন্ত ঘটার কোনো আশা নেই, কেননা কাটালানদের একটি সংখ্যালঘু অংশ স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সপক্ষে ভোট দিলেও, একটি বিচ্ছেদপন্থি সরকার প্রাদেশিক প্রশাসনের দায়িত্ব নিতে চলেছে৷
গতবছরের পয়লা অক্টোবর কাটালুনিয়ায় স্বাধীনতা সংক্রান্ত একটি বহু বিতর্কিত গণভোট অনুষ্ঠিত হয়৷ সেই গণভোটের পর কাটালুনিয়া একতরফাভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে – যদিও আদালতের তরফ থেকে গণভোট ও সেই গণভোট পরবর্তী স্বাধীনতা ঘোষণা, উভয় পদক্ষেপকেই অসাংবিধানিক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ অতঃপর মাদ্রিদের কেন্দ্রীয় সরকার পুজদেমনের সরকারকে বরখাস্ত করে কাটালুনিয়ায় কেন্দ্রের শাসন চালু করেন৷
কাটালুনিয়ার মুখ্য রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সপক্ষে হলো:
- ইআরসি দল, যাদের নেতা ওরিয়ল ইউঙ্কেরাসকে অক্টোবরের গণভোটের পর একটি তদন্তের কারণে আটক করা হয়;
- ‘কাটালুনিয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ' দল, যারা স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সপক্ষে, তবে তার কোনো সময়সূচি নির্দিষ্ট করেনি৷
আর স্পেনের অংশ থাকার পক্ষপাতী দলগুলি হলো:
- প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখয়ের পপুলার পার্টি (পিপি);
- মধ্যম-বামপন্থি কাটালান সোশ্যালিস্ট পার্টি (পিএসসি);
- নাগরিক দল ‘চিউদাদানোস', একটি প্রগতিশীল গোষ্ঠী যারা নিজেদের ‘উত্তর জাতীয়তাবাদী' বলে বর্ণনা করে থাকে৷
সরকারের সাশ্রয় নীতির বিরোধী ‘কাটালুনিয়া ইন কমন' দল বস্তুত একটি অন্তর্দ্বন্দ্ব পীড়িত জোট, যারা কাটালুনিয়ার সম্ভাব্য জোট সরকারে জায়গা পেতে পারে৷
ব্যাপক ভোট পড়েছে...
উভয় পক্ষের সমর্থকরা যে এই নির্বাচনকে কতোটা আন্তরিকভাবে নিয়েছেন, তার প্রণাম এই ভোটের টার্নআউট৷ বৃহস্পতিবার সকালে ভোটকেন্দ্র খোলার আগেই তার সামনে অপেক্ষমান জনতার লাইন পড়ে, কেননা অনেকে কাজে যাবার আগে ভোটপর্ব সমাপ্ত করতে চেয়েছিলেন৷ বিকেলে ভোটকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার আগের কয়েক ঘণ্টাতেও কাটালানরা কাজ থেকে ফেরার পথে ভিড় করে ভোট দিতে যান৷ প্রদেশিক সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৮২ শতাংশের সামান্য কিছু কম, বা প্রায় ৩৭ লাখ রেজিস্ট্রিকৃত ভোটার ভোট দিয়েছেন – যা কিনা ২০১৫ সালের টার্নআউটের চেয়ে সাত শতাংশ বেশি৷
কাটালুনিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট পুজদেমন ব্রাসেলস থেকেই তাঁর ‘কাটালুনিয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ' দলের হয়ে প্রচারণা করেছেন৷ ইআরসি দলের ওরিয়ল ইউঙ্কেরাসের মতো অপরাপর কারারুদ্ধ স্বাধীনতাপন্থি নেতা জেল থেকেই পত্র, সেশ্যাল মিডিয়া ও টেলিফোনের মাধ্যমে দলের নির্বাচনি প্রচার অভিযানে সাহায্য করা চেষ্টা করেছেন৷
ক্রিস্টিনা বুরাক, এলিজাবেথ শুমাখার/এসি
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার কোনো ভাবনা থাকলে জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷