1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচনই টার্গেট বিএনপি'র

১৮ মার্চ ২০১৮

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেই বিএনপি তাদের প্রথম টার্গেটে রেখেছে৷ খালেদা জিয়ার মুক্তিকে তারা ‘বার্গেইনিং পিস' হিসেবে সামনে রাখছে৷ আর তা করতে গিয়ে তবে তারা দলকে সহিংস আন্দোলনের পথে নেবেনা বলেই সব পর্যায়ে নির্দেশনা আছে৷

https://p.dw.com/p/2uXiY
Aktivisten sammeln sich vor dem Sitz der Nationalistischen Partei BNP in Dhaka
ছবি: DW

খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার আগের দিন স্থায়ী কমিটির বৈঠক করেন৷ ওই বৈঠকে দলের পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে তিনি কিছু নির্দেশনা দেন৷ তাতে আগামী নির্বাচনে দলের শরীকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো কথা হয়নি৷

তখন সিদ্ধান্ত হয় দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর বৈঠক করে আসন ভাগাভাগি এবং জোটগত নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে৷ তবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতা-কর্মীদের বলা হয়৷ বলা হয়েছে, কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেত দেয়ার পর নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে হবে৷

জানা গেছে, বিএনপি থেকে প্রার্থিতার ব্যাপারে আগাম একটা সিগন্যাল দেয়া আছে অনেককেই৷ কারা প্রার্থী হলে কেমন করবে তা নিয়ে বিএনপি এর আগে অন্তত দু'টি জরিপ করিয়েছে বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে৷ বিএনপি জরিপের কথা স্বীকার করলেও কাদের দিয়ে সেই জরিপ করিয়েছে তা অবশ্য প্রকাশ করেনি৷

বিএনপি এখন আন্দোলন এবং নির্বাচন নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছে৷ তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবেই নিয়েছে৷ আর এই আন্দোলনকে তারা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণই রেখেছে৷

জানা গেছে, এর মধ্যে খালেদা জিয়া যদি মুক্তি না পান তাহলে আগামী জুন পর্যন্ত বিএনপি এই ধারাতেই আন্দোলন চালিয়ে যাবে৷ জুনের পর বিএনপি তাদের আন্দোলনের গতি আরো বাড়াবে৷ তবে সেটাও শান্তিপূর্নই রাখার নির্দেশনা আছে৷ কারণ বিএনপি চায় বিএনপি'র নেতা-কর্মী যারা বাইরে আছেন তাদের যেন সরকার আটেকের কোনো ‘অজুহাত' না পায়৷

বিশেষ করে সংসদীয় আসনগুলোতো বিএনপি'র যারা সম্ভাব্য প্রার্থী তারা যেন মুক্ত থাকতে পারেন৷ তাদের যদি নির্বাচনের আগে কারাগারে যেতে হয় তাহলে বিএনপি'র অন্য নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের মাঠে পাওয়া কঠিন হবে৷ একই সঙ্গে বিএনপি দলে এবং স্থানীয় পর্যায়ে কারা ‘বিদ্রোহী' হতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখছে৷

বিএনপি মনে করে, নির্বাচনে তাদের ভোট ব্যাংক অক্ষুন্ন থাকবে৷ একই সঙ্গে বিএনপি'র প্রতি সহানুভূতির ভোটও বাড়বে৷ কিন্তু নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী দেয়া না যায় তাহলে পরিস্থিতি ভিন্নও হতে পারে৷ তাই এখন বিএনপি চাইছে সম্ভাব্য যোগ্য প্রার্থীদের যেন গ্রেপ্তার এড়িয়ে কারাগারের বাইরে রাখা যায়৷

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট এবং প্রতিরোধ করতে গিয়ে বিএনপি এখন সংসদেও নেই৷ আর আগে তারা অন্তত সংসদে ছিল৷ দলটি এক যুগের মত ক্ষমতার বাইরে৷ তাই নেতা-কর্মীরা হতাশ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন৷ এবার নির্বাচনই নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা ও ঐক্যবদ্ধ করার সুযোগ করে দেবে৷ আর এই ট্রেন মিস করলে বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে আরো সংকটে পড়বে৷ নির্বাচন বর্জন করলে দলের নেতা-কর্মীদের একটি অংশকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে৷ অনেকে স্বতন্ত্র হিসেবে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন এমন আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ৷

‘যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত’

সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি'র কার্যকরী কমিটির সদস্য এবং ইউপি চেয়ারম্যান ফুল মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরাতো ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যেতে পারিনা৷ আর কেন্দ্র থেকে এখন ম্যাডামের মুক্তির আন্দোলনের কথাই বলা হচ্ছে৷ তবে নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতিই আমাদের আছে৷ কেন্দ্র যে রকম সিদ্ধান্ত দেয় আমরা সেরকম কাজ করব৷ কিন্তু আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে৷ আমি সুনামগঞ্জের কথা বলতে পারি৷ এখানকার ২-৩ জন প্রার্থী প্রস্তুত আছেন৷ শেষ মুহূর্তেও যদি কেন্দ্র নির্বাচনের সিগন্যাল দেয় তাহলে আমাদের নির্বাচনে অসুবিধা হবেনা, এবং বিএনপি'র প্রার্থী পাশ করবে বলে আশা করি৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সারা দেশেই যারা বিএনপি'র সম্ভাব্য প্রার্থী তারা নেতা-কর্মীদের নিয়া মাঠে আছেন৷ তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ তারা যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছেন৷ যদিও বিএনপি'র তুনমূলের নেতা-কর্মীরাই এখন টার্গেট৷ তাদের আটকের জন্যই নানা তৎপরতা চলছে৷ তবে এসব কোনো ব্যাপার না৷ নির্বাচনের সিগন্যাল পেলে সবাই মাঠে নামবে৷ সবাই প্রস্তুত আছে৷''

বিএনপি'র এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘বিএনপি মনে করে সরকার যতই চেষ্টা করুক না কেন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে৷ আর নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে সরকারের প্রভাব ততই কমবে৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও তত সক্রিয় হবে৷ ২০১৪ সালের মত একতরফা নির্বাচন এবার আর সম্ভব হবেনা৷ তাই বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে মাঠে নেমেছে নির্বাচনকেই টার্গেট করে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এরমধ্যে খালেদা জিয়া মুক্তি না পেলে জুন মাস থেকে চলমান আন্দোলনের গতি বাড়বে৷ আর মুক্তি পেলেও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামবে বিএনপি৷ সরকারকে চাপে রেখেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি৷ বিএনপি'র টার্গেট হল যতটা সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে নির্বাচন করা যায়৷''

‘খালেদা জিয়ার মুক্তি ও লেভেল প্লেইং ফিল্ডের জন্য আন্দোলন’

বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা স্পষ্ট যে বিএনপি যাতে নির্বাচনে আসতে না পারে সেজন্য সরকার নানা নীলনকশা প্রণয়ন করছে৷ আর সেজন্যই একটি ভুয়া মামলায় বিএনপি'র চেয়ারপার্সন এবং তিন বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে৷ জামিন দেয়া নিয়ে নানা টালবাহানা করছে৷ প্রতিদিন বিএনপি'র নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে৷ তাদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে৷ সরকার চায় বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ২০১৪ সালের মত আরেকটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে৷''

তাহলে বিএনপি কী করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া আগেই ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছেন৷ তিনি বলেছেন, বিনপিকে যদি জনগণ ভোট দেয়, বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায় তাহলে এই ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়ন করবে৷ খালেদা জিয়া বলেছেন আগামী নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে৷ আমরা এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ডের জন্য আন্দোলন করছি৷ আশা করছি খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে মুক্তি পেয়ে একটি রূপরেখা দেবেন৷ আর সেই রূপরেখা অনুযায়ী একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি৷ দেশের জনগণ নির্বাচন চায়৷ বিএনপিকে ভোট দিতে চায়৷ আমরাও জনগণের দল হিসেবে নিরপেক্ষ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত আছি৷''

এদিকে, জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন হলেও জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করায় তিনি এখনো কারাগারে আছেন৷ রবিবার আপিল বিভাগে এর শুনানি শেষ হয়েছে৷ সোমবার আদেশ দেয়া হবে৷ তবে কুমিল্লার আরেকটি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে৷

আপনিও কি মনে করেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী আন্দোলন করছে? লিখুন নিচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য