‘নীল তিমি’ বানালো দুই বাঙালি তরুণ
২১ জুলাই ২০১০এই সিস্টেমের কাজ হচ্ছে ঘরবাড়ির মধ্যে থাকা বিভিন্ন বস্তু বা মানুষের সঠিক অবস্থান নির্ণয় এবং সেগুলোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ৷
ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম কেন
আরেকটু সহজ করে বলা যাক, ধরুন একটি হাসপাতালে কয়েকজন রোগী আছেন৷ এদের সবারই হাসপাতালের মধ্যেই ঘুরে ফিরে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে৷ এখন ঘুরতে গিয়ে কোন এক জায়গায় হয়তো অজ্ঞান হয়ে গেলেন একজন রোগী৷ প্রচলিত পদ্ধতিতে তখন সেই রোগীকে খুঁজতে যাবেন জনাকয়েক মানুষ৷ নাম ধরে ডাকবেন কিংবা বাথরুম থেকে শুরু করে সিঁড়িঘর, লিফট - সব জায়গায় চষে বেড়াবেন তার খোঁজে৷ কত ঝক্কি!
ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম কিন্তু এই কাজটি অনেকটাই সহজ করে দিতে পারে৷ শুধু প্রয়োজন রোগীর কাপড়ে একটি ট্যাগ৷ এরপর এই সিস্টেমই খুঁজে দেবে কাঙ্খিত রোগীটি হাসপাতালের কোথায় আছে৷
এভাবে ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম কাজে লাগতে পারে কলকারখানায়৷ এমনকি ঘরবাড়িতে৷ তাছাড়া রোবট গবেষণায়ও প্রয়োজন এই প্রযুক্তি৷ কেননা, রোবটের চলাচল কিংবা গতিবিধি পর্যবেক্ষণে কাজ করে ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম৷
জটিল গবেষণা
এতক্ষণ যা বললাম, তা শুনে খুব সহজ মনে হতে পারে৷ কিন্তু কাজটি আসলে বেশ জটিল৷ তাই বিশ্বব্যাপী গবেষণা চলছে ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম নিয়ে৷ এই গবেষণায় বেশ খানিকটা এগিয়েছে বাংলাদেশের দুই তরুণ৷ এরা হচ্ছেন তাসবিরূন নাহিয়ান উপল ও আহসান হাবীব সজল৷ দু'জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ, তড়িৎ কৌশল ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী৷ তাদের তৈরি ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম এর নাম ব্লু হোয়েল বা নীল তিমি৷
যেভাবে কাজ করে নীল তিমি
নীল তিমি কাজ করে শব্দোত্তর বা আলট্রাসনিক সিগন্যালের তৈরি স্থির তরঙ্গ বা স্ট্যান্ডিং ওয়েভ ব্যবহার করে৷ এতে করে লক্ষ্যবস্তু এবং যন্ত্রটির বেইজ পয়েন্টের মধ্যে বিশেষ আল্ট্রাসনিক সিগন্যালের একটি ধারা তৈরি হয়৷ উপল জানালেন, তাদের নীল তিমি একই ধরণের বিশ্বের অন্যান্য প্রকল্পের চেয়ে আরো নিখুঁত ফলাফল দিতে সক্ষম৷ একইসঙ্গে খরচের দিকে থেকে এটি সাশ্রয়ী৷ তাই, তাদের এই গবেষণা এগিয়ে নিতে পারলে ভবিষ্যত বেশ উজ্জ্বল৷ কিন্তু এজন্য প্রয়োজন সময় এবং আর্থিক সহায়তা৷ তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত কোন সহায়তা বা আশ্বাসও কোথাও থেকে পাইনি৷ তবে এখন মোটামুটি অনেকেই ব্যাপারটা সম্পর্কে জেনেছেন৷ আমরা আশা করছি যারা বিজ্ঞানমনষ্ক এবং বিজ্ঞানের চর্চাকে এগিয়ে নিতে চান, তারা আমাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবেন৷
জুরিখে বিজ্ঞানসভা
সেপ্টেম্বরে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম নিয়ে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানসভা৷ সেখানে অংশ নেবার আমন্ত্রণ পেয়েছেন এই দুই বাংলাদেশি তরুণ৷ কিন্তু সমস্যা একটাই৷ জুরিখে যাবার প্রয়োজনীয় বিমান খরচ এখনো পায়নি তারা৷ তবে আশাবাদী আহসান হাবীব সজল, সুইজারল্যান্ডে যাবার জন্য ফান্ড বের করার চেষ্টা করছি৷ সেটা এখনো আমরা পাইনি৷ আশা করি পেয়ে যাব, আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি৷
উল্লেখ্য উপল এবং সজলের তৈরি নীল তিমি ছাড়াও রয়েছে আরো কয়েকটি ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম৷ যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি-র আবিষ্কৃত সিস্টেমের নাম ক্রিকেট৷ রয়েছে ডলফিন, অ্যাকটিভ ব্যাট নামক আরো কয়েকটি এধরণের প্রযুক্তি৷ কিন্তু এসবের চেয়ে নীল তিমি ভালো ফলাফল দেবে, এমনটাই মত দুই তরুণের৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই