পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষ স্থানে এখন চীন
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০২০০৯ সালটি জার্মানির জন্য খুব সুখকর ছিল না৷ অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব, বিশ্ববাণিজ্যে চীনের ক্রমর্ধমান অবস্থান - সব কিছুর প্রভাব পড়েছে জার্মানির রপ্তানি শিল্পে৷ ২০০৯ সালে জার্মানি ৭৩৪ বিলিয়ন ইউরোর পণ্য রপ্তানি করেছে আর চীন করেছে ৭৪৬ বিলিয়ন ইউরোর পণ্য৷ এটা কি করে হল ? উত্তর পেতে চলুন ঘুরে আসি জার্মানির বন্দর নগরী হামবুর্গ থেকে৷
জার্মানির উত্তরে অবস্থিত হামবুর্গ৷ সেখানে হু হু করে বাড়ছে চীনা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান৷ সব মিলে এখন পর্যন্ত সেখানে ঠাঁই নিয়েছে প্রায় ৪০০ প্রতিষ্ঠান৷ এই সব প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করছে তাদের বেশির ভাগই চীনের নাগরিক৷ বন্দর নগরী হামবুর্গে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করছে৷ হামবুর্গ শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে প্রায় ১০ হাজার চীনা৷ তাদেরই একজন সফ্ট ওয়্যার ডেভেলপার লি কিয়াং৷ ৯ বছর ধরে তিনি জার্মানিতে বসবাস করছেন৷ এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে দেশে গিয়েছিলেন মাত্র দু'বার৷ লি জানালেন, আমি এখানে আরো যতদিন থাকবো ততদিনে আমার আরো জার্মান বন্ধু-বান্ধব হবে, সহকর্মী হবে৷ খুব শীঘ্র হামবুর্গ হয়ে উঠবে আমার দ্বিতীয় মাতৃভূমি৷
হামবুর্গ শহরও সাদরে গ্রহণ করেছে চীনের নাগরিকদের৷ গত দেড় বছর ধরে হামবুর্গ শহরে গড়ে উঠেছে একটি চিনা চায়ের দোকান৷ সাংহাই শহরে যেমন দেখা যায় একেবারে হুবহু - সেই রকম৷ জার্মানি-চীন বাণিজ্যিক সম্পর্ক শুরু করার সময় উপহার হিসেবে সাংহাই শহর থেকে এই চায়ের দোকানটি পাঠানো হয়েছে৷ অসংখ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের একটি হল কাইয়সা ট্যুরিস্টিক৷ চীনা ব্যবসায়ীদের ইউরোপে আসা-যাওয়ায় বিমানের টিকিট এবং সুলভে হোটেলের ব্যবস্থা করে থাকে এই সংস্থাটি৷ চেন মাং কাজ করছেন এই সংস্থায়৷ তিনি বললেন, হামবু্র্গ শহরে চী নের বহু মানুষ ব্যবসার কারণে নিয়মিত আসা যাওয়া করছে৷ এখানে অনেক ল'ফার্ম রয়েছে যাদের বেশ কিছু শাখা চীনেও রয়েছ৷ এখানে যে বণিক সংঘ রয়েছে সেখানে কাজ করছে অসংখ্য চীনা৷
আরেক ব্যবসায়ী বাও জি জুন জানালেন, চীন আজ বিশ্বে এক নম্বর পণ্য রপ্তানিকারী দেশ - এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা খুবই সামান্য৷ বাও জানাল, বিশাল একটি থালা ভর্তি ভাতের মধ্যে আমি অতি ক্ষুদ্র একটি চাল মাত্র৷ কিন্তু আসলেই কি তাই ?
বাও জি শাওয়ার কার্টেন অর্থাৎ বাথরুমের প্লাস্টিক পর্দা তৈরি করে৷ আট বছর আগে বাও জি শুরু করেন এই ব্যবসা, সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী৷ বাড়িতে ছোট সেলাইয়ের মেশিন দিয়ে শুরু হয় ব্যবসার শুভযাত্রা৷ আজ বাও জি-র অধীনে কাজ করছেন ৬০ জন কর্মী৷ কোম্পানির ৯০ শতাংশ পণ্য আজ রপ্তানি করা হচ্ছে ইউরোপে৷ ইউরোপে প্রায় প্রতিটি বাণিজ্যিক মেলায় নিয়মিত উপস্থিত থাকেন বাও জি৷ বাও জি বললেন, যখন আমি শুরুতে ইউরোপের বিভিন্ন বাণিজ্য মেলায় যেতাম, সবাইকে বলতাম, ‘আমি চীন থেকে এসেছি' - তখন সবাই যেন বেশ অনাগ্রহ নিয়ে আমাকে দেখতো৷ আমার জন্য তা ছিল অস্বস্তিকর৷ আজ অবস্থাটা সম্পূর্ণ বিপরীত৷ সবাই আমাকে শুভেচ্ছা জানায়, আমাকে চীনের অর্থনীতি নিয়ে প্রশ্ন করে - যেন সবাই আমাকে চেনে৷
বাও জি-র একেকটি শাওয়ার কার্টেন তৈরি করতে খরচ হয় ১ ইউরো ৫০ সেন্ট অর্থাৎ দেড়'শ টাকা৷ ইউরোপে প্রতিটি কার্টেন বিক্রি হয় ৩০ ইউরোতে৷ ব্রিটেনে ৩০ পাউন্ড করে৷ মেইড ইন চায়না! বাও জি-র কারখানায় কাজ করছেন সুয়াং সিউ ইং৷ সে বলল, আমরা প্রতিমাসে প্রায় দেড়শো ইউরো পারিশ্রমিক হিসেবে পাই৷ কেউ কেউ দু'শো ইউরো পর্যন্ত পাচ্ছে৷ এর আগে আমি অন্য আরেকটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম৷ সেখানে আমি মাত্র ৯০ ইউরো পেতাম৷ এখানে বেতন অনেক বেশি আর কাজের পরিবেশও বেশ ভাল৷
বাও জি তাঁর ফ্যাক্টরি আরো বড় করতে চান৷ নতুন কারখানার কাজ চলছে৷ কাজ শেষ হলে অনায়াসে আরো ১০০ জন কর্মী আনা যাবে৷ হাঁটি হাঁটি পা পা করে চীন এভাবেই পৌঁছে গেছে শীর্ষে৷
প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদক: আবদুল্লাহ আল-ফারূক