‘পরিস্থিতির কারণে জামায়াতের নিবন্ধন’
৬ আগস্ট ২০১৩ওয়ান ইলেভেনের পর, অর্থাৎ ২০০৮ সালে, নতুন জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও অনুযায়ী জামায়াতসহ ২৯টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায় শর্ত সাপেক্ষে৷ তারা যে খসড়া গঠনতন্ত্র জমা দেয়, তা ছয় মাসের মধ্যে আরপিও এবং বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রণয়ন করে তা নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়৷
জামায়াত ছাড়া সব রাজনৈতিক দল তা মেনেছে৷ কিন্তু জামায়াত মানেনি৷ সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) ডয়চে ভেলেকে জানান, তারা থাকতেই জামায়াতকে মোট তিন দফা নোটিশ দিয়েছেন৷ তারপরও জামায়াত তার গঠনতন্ত্র চাহিদা মতো সংশোধন করেনি৷
আরপিও-র ৯০-সি ধারায় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্তে বলা হয়েছে যে, দলীয় গঠনতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের পরিপন্থী হতে পারবে না৷ গঠনতন্ত্রে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ভাষা এবং লিঙ্গ ভেদে কোনো বৈষম্য থাকতে পারবে না৷
সর্বশেষ গত বছরের ১২ই নভেম্বর জামায়াতকে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশন চিঠি দেয়৷ তাতে জামায়াতের গঠনতন্ত্র থেকে ‘মৌলিক বিশ্বাস এবং চেতনার ভিত্তিতে ইসলামি সমাজ গঠনের মহান উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এই গঠনতন্ত্র প্রণীত এবং প্রবর্তিত হইল' শব্দগুচ্ছ বাদ দিতে বলা হয়৷ এছাড়া, তাদের গঠনতন্ত্রের কয়েকটি ধারাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়৷ নির্বাচন কমিশন ২০২০ সালের মধ্যে জামায়াতকে তাদের বিভিন্ন স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতেও বলে৷ অথচ জামায়াত এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷
এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, ২০০৮ সালে ছয় মাসের জন্য সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ দেয়া হয়েছিল৷ তবে জামায়াতের গঠনতন্ত্রে গুরুতর সমস্যা ছিল৷ কিন্তু নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য ছিল ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ তারা চেয়েছিল সব দলের অংশগ্রহণে যেন একটি সফল এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়৷ এবং তা সম্ভবও হয়েছে৷ তখন যদি জামায়াতকে নিবন্ধন দেয়া না হতো, তাহলে বিএনপিও নির্বাচনে অংশ নিত না৷ বলা বাহুল্য, বড় দুটি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতো না৷ তাহলে দেশ আরো বড় ধরণের সংকটে পড়ত৷ তাই পরিস্থিতি বিচেনায় নিয়ে তারা তখন জামায়াতকে নিবন্ধন দেয়৷ কিন্তু তারপর বারবার তাগাদা দেয়ার পরও জামায়াত তার গঠনতন্ত্র ঠিক না করেই পুনর্মূদ্রণ করে৷
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ বলে যে রায় দিয়েছে তা কার্যকর করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷ আর নির্বাচন কমিশনের এ ব্যাপারে কোনো তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না৷ আদালতের রায়, পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া এবং সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ কারণ, এটি খুবই স্পর্শকাতর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়৷
উল্লেখ্য, ১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর মোট তিনবার দলটি নিষিদ্ধ হয়েছে৷ ১৯৫৯ ও ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭৯ সালের ২৫শে মে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জামায়াত প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়৷