পশ্চিমবঙ্গে দফায় দফায় ভোট যে কারণে
২৮ মার্চ ২০২১২০১৬ সালে ভোটগ্রহণ পর্ব টানা ৭৭দিন ধরে চলেছিল পশ্চিমবঙ্গে৷ সাত দফায় ভোটগ্রহণ হয় সেবার৷ কিন্তু আট দফায়, ধাপে ধাপে ভোটগ্রহণ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনি ইতিহাসে এই প্রথম৷
এবার ৬৬ দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সাত কোটি ৩৩ লাখ ভোটার তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন৷ ভোটকেন্দ্র সংখ্যা মোট এক লাখ ১ হাজার ৯১৬টি৷ কেন্দ্রের এ সংখ্যাটিও নতুন৷ এর আগে এতগুলো ভোটকেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গে কখনোও স্থাপন হয়নি৷ সর্বশেষ অর্থাৎ, ২০১৬ সালে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৭৭ হাজার ৪১৩টি৷ নির্বাচন কমিশনের হিসাব বলছে, এবারের নির্বাচনে প্রতি দফায় আনুমানিক ১২ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে৷
শুধু তাই নয়, এবারই প্রথমবারের মতো দু'দফায় অর্থাৎ ২৬ ও ২৯ এপ্রিলে ভোট দেবে কলকাতা৷ শহর কলকাতার আশেপাশের কিছু অঞ্চল, যেমন যাদবপুর, ভাঙড় ইত্যাদি দক্ষিণ ২৪ পরগণার অন্তর্গত হওয়ায় সেখানে ভোটগ্রহণ হবে ১০ এপ্রিল৷
এমন নজিরবিহীন ভোটের ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন মহলে সৃষ্টি করছে নানা প্রশ্ন৷ কী কারণে এমন নির্বাচনসূচি? এর প্রভাবই বা কেমন হতে পারে?
নিরাপত্তার নানা দিক
শুধু প্রথম দফার নির্বাচনেই মোতায়েন করা হয়েছে ৭৩২ কোম্পানি সিএপিএফ বা সেন্টাল আর্মড পুলিশ ফোর্সেস সদস্য৷ এর আগে, ভোটারদের মধ্যে সাহস জোগাতে ও তথাকথিত ‘অশান্ত' অঞ্চলে শান্তির আশ্বাস দিতে রাজ্যজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছিল ১২৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যদের৷ বলা হয়, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন শেষ করতেই এই পদক্ষেপ৷
পাশাপাশি, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বাড়ানো হয়েছে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা, যেন স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করা যায়৷
২০২০ সালের জাতীয় অপরাধ দপ্তরের প্রতিবেদন ও তৃণমূলের বিরোধী সমস্ত দলের তরফ থেকে ‘ফিডব্যাক' নিয়েই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আট দফায় ভোটের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন, বলে জানান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা৷ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গুন্ডামি থেকে শুরু করে আইনহীনতা, অপরাধের বাড়বাড়ন্তের মতো ঘটনা, এমন কি রাজনৈতিক হত্যা ঘিরে তাদের কাছে বহু নালিশ জমা পড়াতেই আট দফার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত৷
এছাড়া, ভোটের নির্ঘন্ট এভাবে সাজানোর পিছনে নির্বাচন কমিশন বলেছেন ধর্মীয় উৎসবের কথাও৷ নির্বাচনের সময়ে একই সাথে চলবে দোল ও রমজানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উদযাপন৷ এ বছর পবিত্র রমজান এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হতে পারে৷ অথচ পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ভোটারদের একটা বড় অংশ যেখানে রয়েছেন, যেমন মুর্শিদাবাদ, মালদা ও দক্ষিণ দিনাজপুর, সেখানে ভোট হবে এপ্রিল ২২ থেকে, অর্থাৎ রমজান চলাকালীন সময়ে৷ ফলে যে রাজ্যের বাসিন্দাদের প্রায় ৩০ শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী, সেখানে এমন ভোটের নির্ঘন্ট স্থানীয় ভোটার ও নির্বাচনকর্মীদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে৷
যা বলছেন রাজনীতিকরা
নির্বাচনসূচি প্রকাশের পর থেকেই সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘এটা কি ওরা (নির্বাচন কমিশন) মোদী আর অমিত শাহকে জিজ্ঞেস করে তৈরি করেছেন? যাতে আসাম আর তামিলনাড়ুর ভোট মিটিয়ে তারপর এখানে আসতে পারেন? এতে ওদের (বিজেপি) কোনো সাহায্য হবে না৷''
বাম ও কংগ্রেস জোট এই নির্ঘন্টের সমালোচনা করলেও তৃণমূলের মতো সরাসরি বিরোধিতায় যায়নি৷ বিজেপিও এই ইস্যুকে তুলে ধরছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসাবেই৷ নিরাপত্তা ও করোনাকালীন স্বাস্থ্যঝুঁকির দোহাই দিচ্ছেন তারা৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, অতিমারির মধ্যে যদি পুরোদমে রাজনৈতিক সভা, মিছিল সবই হয়, তবে নির্বাচন নয় কেন৷ মমতার সাথে সুর মিলিয়ে প্রশ্ন করেছেন অখিলেশ যাদবও৷
অথচ তামিলনাড়ুর মোট ২৩৪টি আসনে ভোট হবে এক দফাতেই৷ সেখানে কি তবে কার্যকর নয় সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাস্থ্যবিধির প্রশ্ন? নাকি নির্বাচন কমিশনের প্রতি মমতার সন্দিহান আচরণ কিছুটা হলেও যৌক্তিক? সব প্রশ্নের জবাব না হলেও কিছুটা আভাস মিলতে পারে আগামী কয়েক সপ্তাহে৷