পানিবন্দি লাখো মানুষ, বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিপর্যস্ত জনজীবন
ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল৷ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সিলেট, সুনামগঞ্চের কয়েক লাখ মানুষ৷ পানি উঠেছে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে৷
আকস্মিক বন্যা
একদিকে বৃষ্টি আর অন্যদিকে পাহাড়ি ঢল৷ ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত সিলেট৷ ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার কোম্পানিগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশিরভাগ এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে৷ জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলারও বিস্তীর্ণ এলাকাও পানিবন্দি৷ পানি বাড়ছে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, জকিগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায়৷
বিপদসীমার উপরে
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার এবং সিলেট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে৷ সারি নদীর পানি বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে৷ পানির উচ্চতা বেড়েছে কুশিয়ারা ও লোভা নদীরও৷ কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপরে বইছে৷
পানিবন্দি পাঁচ লাখ
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সিলেট জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য ৪৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে; দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে৷
ছুটছেন মানুষ
জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে দুর্গত এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানের সন্ধানে ছুটছেন গ্রামের মানুষ৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রনিখাইল এলাকার ইসমাইল আলী বলেন, “বারবার বন্যায় আক্রান্ত হচ্ছি৷ সব হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি৷ পরিবার নিয়ে কোথায় যাব৷”
গবাদিপশু রক্ষার চেষ্টা
চার দিনের টানা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে কোম্পানিগঞ্জ৷ নিজেদের বাঁচাতেই যখন হিমশিম অবস্থা, তখন গবাদি পশু নিয়ে আরো বিপাকে পড়েছেন মানুষ৷ একটি পরিবারকে গরু নিয়ে উঁচু স্থানে যেতে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে বন্যাক্রান্ত উপজেলাগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ হয় পানি সাঁতরে, নয়তো নৌকায় চেপে আশ্রয়স্থলে ছুটছেন মানুষ৷ অনেকে কলা গাছের ভেলায় চেপেও নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷
বিদ্যুৎ, পানির সংকট
ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, শামীমাবাদ, ডহর, তালতলা, কালিঘাট, সোবহানীঘাট, শাহজালাল উপশহর, তেররতন, হবিনন্দি, সাদিপুর, বোরহানবাগ, শিবগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমার কদমতলিসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে৷ অনেক বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে৷ শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম পলাশ জানান, বুধবার দুপুরেই উপশহরের বেশির ভাগ সড়ক তলিয়ে যায়৷ রাতের দিকে বাসায় পানি ঢুকে পড়ে৷ বিদ্যুৎ নেই, সঙ্গে পানির সংকটও দেখা দিয়েছে।
বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
সিলেট ও সুনামগঞ্জের নয়টি উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে৷ সিলেট জেলায় ২৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। এছাড়া জেলার ৬০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এগুলোতে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে৷
এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত
বন্যার কারণে সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আগামী রোববার থেকে চলতি বছরের মাধ্যমিক, দাখিল ও এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল৷ এদিকে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ২৫ জুন পর্যন্ত সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ৷ পিছিয়ে গেছে পরীক্ষাও৷
বিপর্যস্ত সুনামগঞ্জও
বৃহস্পতিবার বিকালে তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জ পৌর শহর৷ দুর্ঘটনা এড়াতে তখন থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে শহরের বাসিন্দাদের বৃহস্পতিবার রাত কেটেছে অন্ধকারে৷ সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দোয়ারা, শান্তিগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলা এখন পানিতে ভাসছে৷ বন্ধ সারাদেশের সঙ্গে যানবাহন চলাচল৷ কাজ করছে না মোবাইল নেটওয়ার্কও৷
‘এমন ভয়াবহ বন্যা দেখিনি’
বিডিনিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুনামগঞ্জে একতলা কোনো বাড়িতে পানি উঠতে বাকি নেই, বন্ধ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ, সুরমা উপচানো বন্যা চরম দুর্বিপাকে ফেলেছে সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দাদের৷ সেলিম মিয়া নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমার ৫০ বছরের জীবনে সুনামগঞ্জ শহরে এমন ভয়াবহ বন্যা দেখিনি৷ শহরের সব এলাকা প্লাবিত৷ মানুষ আশ্রয় নিতে পারছে না৷ এখন ত্রাণের চেয়ে আশ্রয় জরুরি৷’’
উদ্ধারে সেনাবাহিনী
সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার ও ত্রানকাজে সেনা সদস্য নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বিডিনিউজকে জানিয়েছেন, ‘‘সেনাবাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যে সিলেটে কাজ শুরু করেছেন৷ সুনামগঞ্জেও দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু করবেন৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীকেও কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন৷’’