পৃথিবীর অর্ধেক ভূমি মরুভূমিতে রূপান্তরের ঝুঁকিতে
৯ ডিসেম্বর ২০২৪শুষ্ক এবং কম বৃষ্টিপাতপ্রবণ এলাকার এসব ভূমিতে বিশ্বের ৪৫ শতাংশ কৃষি কার্যক্রম পরিচালিত হলেও, চরম খরা এবং জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুত এই অঞ্চলগুলোকে অনুর্বর মরুভূমিতে রূপান্তর করছে।
বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এই শুষ্ক ভূমিগুলোতে বাস করে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ভূমির ‘অবনতি‘র কারণে খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য এবং ব্যাপক উদ্বাস্তু সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সৌদি আরবে কপ-১৬ সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৫ বিলিয়ন হেক্টর মরুকৃত ভূমি পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানানো হবে।
মরুকরণ কী, কেন চলছে মরুকরণ
মরুকরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে উর্বর ভূমি জীববৈচিত্র্য এবং উৎপাদনশীলতা হারিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়। জাতিসংঘের মতে, বর্তমানে বিশ্বের অন্তত ৪০ শতাংশ ভূমি মরুকরণের শিকার। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন ধ্বংস এবং অপ্রত্যাশিত কৃষি কার্যক্রমের পাশাপাশি নগরায়ণ এই সমস্যার প্রধান কারণ।
২০২৪ সাল সবচেয়ে উষ্ণ বছর হতে চলেছে। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে খরা বিশ্বের ৭৫ শতাংশ জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া, সমাজিক সমস্যা, যেমন নারীদের জমির মালিকানা সীমিত করা ভূমি এবং মাটির স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করবে। জাতিসংঘ উল্লেখ করে যে, নারীরা সাধারণত জীববৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্যব্যবস্থায় বেশি বিনিয়োগ করে, যেখানে পুরুষরা সাধারণত উচ্চ ফলনশীল একক সংস্কৃতিতে মনোযোগ দেন, যা দ্রুত ভূমির অবনতি ঘটায়।
মরুকরণের প্রভাব
মরুকরণের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থা ঝুঁকিতে পড়ছে। প্রতিনিয়ত উর্বর ভূমি অবনতির শিকার হওয়ায় জীববৈচিত্র্য হ্রাস, ক্ষুধা এবং দারিদ্র্য বাড়ছে। জাতিসংঘের মতে, সীমিত সম্পদের কারণে সংঘাত এবং বাধ্যতামূলক স্থানান্তরের মতো সামাজিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জাতিসংঘের মেরুকরণবিরোধী সংস্থা ইউনাইটেড নেশন্স কনভেনশন টু কমব্যাট ডেজার্টিফিকেশন (ইউএনসিসিডি) নির্বাহী সচিব ইব্রাহিম থিয়াও বলেন, "ভূমি আমাদের জীবনধারণের ভিত্তি — এটি আমাদের খাদ্য সরবরাহ করে, অর্থনীতি শক্তিশালী করে এবং আমাদের পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখে।"
মরুকরণ রোধে পদক্ষেপ
জাতিসংঘ মাটি পুনরুদ্ধার এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। পশ্চিম আফ্রিকায় ‘হাফ-মুন' তৈরির মাধ্যমে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে, যা স্থানীয়ভাবে সহজে তৈরি করা সম্ভব।
অন্যদিকে, আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে ‘গ্রেট গ্রিন ওয়াল' প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গাছপালা রোপণ করা হচ্ছে। তবে, অর্থের অভাবে প্রকল্পটি ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
প্রয়োজন সমাধান
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমন্বিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টা ছাড়া এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভূমির অবনতির এই চ্যালেঞ্জ মানবতার ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করে তুলেছে।
স্টুয়ার্ট ব্রাউন/ টিআই