1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রবল বিক্ষোভের পর ভোপালের বিষাক্ত বর্জ্য পোড়ানো স্থগিত

৬ জানুয়ারি ২০২৫

প্রবল বিক্ষোভের ফলে ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইডের কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হলো।

https://p.dw.com/p/4orEB
ভোপালে ইউনিয়ন কার্বাইডের কারখানার ছবি ২০০৯ সালে। একজন নিরাপত্তা রক্ষীকে শুধু দেখা যাচ্ছে।
ভোপালে ইউনিয়ন কার্বাইডের কারখানা থেকে বিষাক্ত বর্জ্য নিয়ে পিথমপুরে পোড়াবার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। ছবি: AP

গত বুধবার ইউনিয়ন কার্বাইডের কারখানা থেকে ৩৭৭ টন বর্জ্য তুলে নিয়ে ভোপাল থেকে ২০৩ কিলোমিটার দূরে পিথমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল, পিথমপুরের দাহনযন্ত্রে তা পুড়িয়ে ফেলার হবে।

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, এই বর্জ্য পোড়াবার জন্য তাদের ছয় থেকে নয় মাস সময় লাগবে।  পিথমপুরের মানুষদের স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি যাতে না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হবে।

কীভাবে নিয়ে যাওয়া হলো?

লিক প্রুফ ব্যাগে ৩৭৭ টন বর্জ্য ভরা হয়। তারপর তা ১২টি ট্রাকে করে পিথমপুর নিয়ে যাওয়া হয়। এর জন্য গ্রিন করিডোর তৈরি করা হয়েছিল। সেহোর, দিওয়াস ও ইন্দোর জেলায় মধ্যে দিয়ে গ্রিন করিডোর দিয়ে তা নিয়ে যাওয়া হয়। 

১২টি ট্রাক ছাড়াও কনভয়ে ছিল পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, দমকলের গাড়ি এবং কুইক রেসপন্স টিম।

ভোপাল থেকে এই বর্জ্য নিয়ে যাওয়া হয় পিথমপুরের তারাপুরা গ্রামে। সেখানে পিথমপুর ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড এবং রি-সাসটেনেবেলিটি লিমিটেডের যৌথ উদ্যেোগে দাহন-যন্ত্র আছে। সেখানেই এই বিষাক্ত বর্জ্য পোড়ানোর কথা ছিল।

কেন হঠাৎ এই উদ্য়োগ?

২০ বছর আগে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে একটি মামলা করা হয়। সেখানে বলা হয়, ইউনিয়ন কার্বাইডের বিষাক্ত বর্জ্য আশপাশের এলাকার ক্ষতি করছে।

গত ৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, চার সপ্তাহের মধ্যে বিষাক্ত বর্জ্যের হাত থেকে মানুষকে নিষ্কৃতি দিতে হবে। তারপর সরকার নড়েচড়ে বসে এবং সিদ্ধান্ত নেয়, এই বর্জ্য সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

কীভাবে পোড়ানো হতো?

ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ত্রাণ ও পুনর্গঠন বিভাগের প্রধান স্বতন্দ্র নারায়ণ সিং বার্তাসংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ''প্রথমে কিছু বিষাক্ত বর্জ্য পুড়িয়ে দেখা হবে। তারপর তার ছাই পরীক্ষা করা হবে। দেখা হবে সেখানে কোনো বিষাক্ত জিনিস আছে কি না।''

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ''অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বর্জ্য পোড়ানো হবে। মাটি থেকে বেশ কিছুটা উঁচুতে এই বর্জ্য পোড়ানো হবে। তার ধোঁয়ায় কারো যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।''

তিনি জানিয়েছিলেন, ''এর ফলে কারো কোনো ক্ষতি হবে না। কাছাকাছি এলাকাগুলিও নিরাপদ থাকবে।''

এর জন্য সরকারের ১২৮ কোটি টাকা খরচ হতো।

বিরোধ শুরু

সরকার এই সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পরই ভোপাল গ্যাসপীড়িুত মহিলা কর্মচারী সংঘের রশিদা বি বলেন, ''কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল প্রেজেন্টেশন অনুযায়ী ইউনিয়ন কার্বাইডের সব বিষাক্ত বর্জ্য পোড়াবার পর নয়শ টন ছাই ও অবশিষ্টাংশ পড়ে থাকবে। এগুলোও বিষাক্ত হওয়ার কথা।''

তিনি জানিয়েছেন, ''স্থানীয় মিডিয়ার করা বৈজ্ঞানিক তদন্ত রিপোর্টে দেখা গেছে, ইউনিয়ন কার্বাইডের আশপাশের জলে প্রচুর বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে।''

এরপর পিথমপুরে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। গত শুক্রবার সেখানে বনধের ডাক দেয় 'পিথমপুর বাঁচাও সমিতি'। বিভিন্ন জায়গায় মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। দুইজন গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

বিক্ষোভ বাড়ছে দেখে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা আপাতত পিথমপুরে এই বিষাক্ত বর্জ্য পোড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখছেন। তারা হাইকোর্টের কাছে আরো সময় চাইবেন।

রাজ্যের মুখ্যসচিব অনুরাগ জৈন সাংবাদিকদের বলেছেন, ''আমরা হাইকোর্টে গিয়ে মানুষের এই উদ্বেগের কথা জানাব। আমরা বলব, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই কাজ করতে চাই। তার জন্য কিছুটা সময় দরকার।''

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেন ফর জাস্টিস ইন ভোপালের তরফ থেকে  রচনা ধিংড়া ডিডাব্লিউকে বলেছেন,  ''যদি বর্জ্যকে বাইরে না রাখা হয়, তাহলে তা কোনো ক্ষতি করবে না। স্টেইনলেস স্টিলের বন্ধ করা ড্রামের মধ্যে রাখলে এবং তা যদি লিক না করে তাহলে তাহলে তা কোনো ক্ষতি পারে না। ইউনিয়ন কার্বাইডকে তখন সরকার বলতে পারে, তারা যেন ওই বর্জ্য নিয়ে নেয়।''

তিনি জানিয়েছেন, ''ইউনিলিভারকে কোদাইকানাল কারখানার বর্জ্য এভাবেই নিতে বলা হয়েছিল এবং তারা তা নিয়েছিল। তাদের কাছে ব্যবস্থা আছে, এই বর্জ্য নিয়ে তারা তা পোড়াতো পারে বা নষ্ট করতে পারে। ইউনিলিভার চারশো কিলো পারদ যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়েছিল। তাহলে এখানে ইউনিয়ন কর্বাইড কেন তা করবে না। এটা না করে সরকার আরো মানুষকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে না।''

তার দাবি, ''কারখানা চত্বরে ১১ লাখ টন বিষাক্ত বর্জ্য আছে। সেগুলি আশপাশের ৪২টি বসতি এলাকায় জল দূষিত করছে। প্রতিদিনই তা করে যাচ্ছে।''

তিনি জানিয়েছেন, ''পিথমপুরে সাতবার ট্রায়াল দেয়া হয়েছে। পাঁচবার সেখানে বিষাক্ত বর্জ্য় পাওয়া গেছে যার ফলে ক্যান্সার হতে পারে।''

ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা নিয়ে বই লিখেছেন সাংবাদিক বিজয় মনোহর তিওয়ারি। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''১৯৬৫ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত ইউনিয়ন কার্বাইডের কারখানায় বর্জ্য ২০টি আলাদা গর্ত করে রাখা হয়েছিল। এতদিন ধরে তা নিচের মাটি ও জলের সঙ্গে মিশেছে। সেটা ঠিক করা দরকার।''

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)