ফলোয়ার ছাড়া মডেল হয় না
২৩ মার্চ ২০১৭প্যারিসে ফ্যাশন ডিজাইনার ইসি মিয়কে-র শো’র ব্যাকস্টেজ – মানে নেপথ্যে৷ আগে মডেলদের এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো, করার কিছুই থাকত না৷ এখন সকলের হাতে মোবাইল, সকলেই পোস্ট করতে ব্যস্ত৷ ফরাসি মডেল আদাম আমুরি-র মতো সকলেই জানেন: ফেসবুক এবং বিশেষ করে ইনস্টাগ্রাম ছাড়া আজকের যুগে মডেল হওয়া যায় না৷
ফলোয়ার থাকলে তবেই বুক করা হয়
আদাম আমুরি-র ইনস্টাগ্রামে ১১,০০০ এর বেশি ফলোয়ার আছে৷ আমুরি বললেন, ‘‘খুব সক্রিয় থাকতে হবে আর উচ্চমানের সব কন্টেন্ট পোস্ট করতে হবে৷ ভক্তদের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করাটা খুব জরুরি, তারা কোনো কমেন্ট দিলে, রিঅ্যাক্ট করতে হবে৷ কাউকে অবহেলা করলে চলবে না৷ প্রচুর কাজ!’’
সকলেরই লক্ষ্য হলো, যত বেশি সম্ভব ফ্যান সংগ্রহ করা, কেননা, তার ফলে মার্কেট ভ্যালু, অর্থাৎ বাজারদর বেড়ে যায়৷ আমুরি জানালেন, ‘‘কোনো উপায় নেই: দু'জন মডেল যদি দেখতে এক রকম হয়, কিন্তু এক জনের দশ লাখ ফলোয়ার আর অন্য জনের এক হাজার ফলোয়ার থাকে, তাহলে কাকে বুক করা হবে, তা তো বুঝতেই পারছেন৷’’
ফ্যাশন সাংবাদিক লিজা বুতেলদিয়া শোনালেন, ‘‘আমি একটি ফ্যাশন ম্যাগাজিনের হয়ে কাজ করি, আমাদের অফিসে একটি কাস্টিং এজেন্সিও আছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় মডেলদের উপস্থিতি কেমন, কাস্টিংয়ে তার একটা বড় ভূমিকা থাকে: কার কতজন ফলোয়ার রয়েছে, প্রভাব আছে, নাকি নেই, ফ্যাশন লেবেলগুলো সেগুলো খুঁটিয়ে যাচাই করে দেখে৷’’
‘এলিট’ বিশ্বের বৃহত্তম মডেল এজেন্সিগুলির অন্যতম৷ ইন্টারনেটে মডেলদের সাফল্য তুলে ধরার জন্য ‘এলিট’ সংস্থা গ্রাহকদের কাছে তাদের মডেলদের ফেসবুক প্রোফাইল পাঠিয়ে থাকে৷ ‘এলিট’-এর প্রধান ভিক মিহাচি বললেন, ‘‘সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলো আসার আগে মডেলরা পত্র-পত্রিকা, আলোকচিত্রী, ফ্যাশন ডিজাইনার, এক কথায় গোটা ফ্যাশন জগৎটার ওপর নির্ভরশীল ছিল৷ এই লোকগুলোই ঠিক করত, তারা মডেলটিকে তাদের জগতে ঢুকতে দেবে কিনা৷ ইতিমধ্যে পরিস্থিতি বদলে গেছে৷ মডেলদের ভাগ্য আজ নিজেদের হাতে আর তাদের সাফল্যের মাত্রা হলো পাবলিক৷’’
ব্রিটেনের স্টিফেন জেমস-এর এ সাফল্য আছে৷ তিনি ‘এলিট’ সংস্থায় চুক্তিবদ্ধ৷ শুধুমাত্র ইনস্টাগ্রামেই তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা ১৮ লাখ৷
উঠতি তারকা
২০ বছর বয়সি নাইজেরীয় ডেভিডসন ওবেনেডো এখনও এতদূর পৌঁছাতে পারেননি৷ ২০১৬ সালের নভেম্বরে তিনি ‘এলিট’ সংস্থার আন্তর্জাতিক মডেল প্রতিযোগিতায় জয়ী হন৷ এ বছর তিনি প্রথমবারের মতো মিলান আর প্যারিসের ফ্যাশন শো-গুলিতে যাচ্ছেন – এমনকি তিনি ভেরসাচের ফ্যাশন শো’র একেবারে প্রথম ও শেষে থাকবেন – একজন নবাগতের জন্য যা বড় সম্মান৷
কিছুদিন হলো ডেভিডসনের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হয়েছে৷ অবশ্যই সেই অ্যাকাউন্টে কন্টেন্ট দিতে হবে: ব্যক্তিগত ছবি আর মডেল হিসেবে তাঁর ছবির একটা ভালো সংমিশ্রণ হওয়া চাই৷ যেমন এখানে ইসি মিয়কে-র ফ্যাশন শো-তে৷ ডেভিডসন বললেন, ‘‘ইনস্টাগ্রাম আর ফেসবুক হলো কাজের অঙ্গ৷ ওগুলো হলো নিজেকে বেচার পন্থা৷ তুমি নিজে হলে সেই পণ্য৷ দোনাতেল্লা যখন ডেভিডসনকে খোঁজেন, তখন ডেভিডসনকে খুঁজে পাবার সবচেয়ে সহজ দু'টি পথ হলো ডেভিডসনের ফেসবুক আর ডেভিডসনের ইনস্টাগ্রাম৷’’
সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলো আসার পরে মডেলরা স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন, তাদের প্রভাবও বেড়েছে৷ মহিলাদের ক্ষেত্রে সেটা আরো ভালোভাবে বোঝা যায়৷
সুপারমডেল ক্যারা ডিউয়েভিং-এর পাঁচ কোটি ফলোয়ার আছে, কেন্ডাল জেনার-এর আছে দশ কোটি ফলোয়ার৷
পুরুষ মডেলদের তার ধারে-কাছে আসতে এখনো অনেক বাকি৷
কাটিয়া লিয়ের্শ/এসি