বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে মানুষ, পশু
১৩ জুলাই ২০১৭বন্যাদুর্গত বগুড়ার সাংবাদিক নাজমুল হুদা নাসিম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বগুড়ার তিনটি উপজেলা সারিয়াকান্দি, সোনাতলা এবং ঘোঘট উপজেলার পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ বন্যার কারণে বাড়ি ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে তিন হাজার বন্যাদুর্গত বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন৷ গত কয়েকদিনে ত্রাণ বলতে পরিবার প্রতি ২০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে৷ আর কোনো সহায়তা পাননি তাঁরা৷ তাই তাঁরা এখনও ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছেন৷''
তিনি আরো জানান, ‘‘বন্যানিয়ন্ত্রণ বাধে মানুষ এবং গবাদি পশু এক সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে৷ গবাদিপশুর খাদ্যেরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে৷ এখনো রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়েনি৷ তবে কয়েকদিন এই পরিস্থিতি থাকলে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়বে৷''
গাইবান্ধার চার উপজেলার ৩০ ইউনিয়নে পানিবন্দি লাখো মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন৷ খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন তাঁরা৷ সরকারি উদ্যোগে কিছু এলাকায় বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা ও নগদ টাকা দেওয়া হলেও, তা চাহিদা অনুযায়ী একবারেই অপ্রতুল্য বলে অভিযোগ উঠেছে৷
গাইবান্ধার সাংবাদিক জিল্লুর রহমান পলাশ জানান, ‘‘এক সপ্তাহ ধরে এ সব মানুষ পানিবন্দি থাকায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ৷ সব বয়সি মানুষ জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ পাশাপাশি গবাদি পশু গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যাদুর্গতরা৷ বাধ্য হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে উচু বাঁধ, রেলের জায়গা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা৷ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে সেখানে দিন কাটাতে হচ্ছে গাদাগাদি করে৷
সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ – এই ১৩টি জেলা এখন বন্যাকবলিত৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানিয়েছেন, ‘‘নতুন করে মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, শরিয়তপুর, চাঁদপুর এবং ভোলা জেলা বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ এ সব জেলার প্রশাসনকে সর্তক থাকার নির্দেশ দেওয়া আছে৷''
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বুধবার এক প্রেস ব্রিফিং-এ বলেন, ‘‘ভারি বর্ষণের সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্ট বন্যায় দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৩টি জেলার ৪৫টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে৷ এতে এ সব এলাকার প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷''
ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ‘‘গত ৩ জুলাই থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চার হাজার মেট্রিক টন চাল, এক কোটি নয় লাখ টাকা ও ন'টি আইটেম সমৃদ্ধ সাড়ে ১৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়৷''
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার খোলা আকাশের নীচে, উঁচু বাঁধে ও রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া মানুষজনকে দ্রুততার সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের টিউবওয়েল উঁচু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহের জন্যও বলা হয়েছে৷''
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল দাবি করেন, ‘‘অনেকে ত্রাণ পাচ্ছে না – এমন ঢালাও অভিযোগ মানা হবে না৷ তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে জানান, আমরা ব্যবস্থা নেব৷''
এদিকে বাংলাদেশে চালের ঘাটতি মোকাবেলায় উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ২০ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে৷ এছাড়া সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরো ১২ লাখ টন চাল আনা হচ্ছে৷
আপনার চেনাশোনা কেউ কি বন্যার কবলে পড়েছেন? আপনার এলাকার অবস্থা জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷