ই-কমার্সের প্রসারে এক দম্পতি
১৬ মে ২০১৭এরপর গত সাত-আট বছরে অনেক পথ পেরিয়েছে ব্রিটেনে লেখাপড়া শেষে মাতৃভূমির টানে ২০০৯ সালে দেশে ফেরা এই দম্পতির উদ্যোগ৷ এর মধ্যে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছে দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কার৷
উদ্যোগটির নাম ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’৷ এর মাধ্যমে তৃণমূলের পণ্যকে ই-কমার্সের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে শুরুর দিকের কথা বলতে গিয়ে আতাউর রহমান জানান, ‘‘ব্রিটেনে লেখাপড়া শেষে আমরা সেখানে কিছুদিন কাজ করি৷ তারপর ‘হোম সিকনেস’-এর কারণে দেশে ফিরে মংলার মিঠাখালী গ্রামে গিয়ে সেখানকার মহিলাদের জিজ্ঞেস করি, তাঁরা তাঁদের নকশিকাঁথা কীভাবে বিক্রি করেন৷ তাঁরা জানান, লোকজন এসে তাঁদের কাছ থেকে নকশিকাঁথা নিয়ে যায়৷ তাঁদের নিজেদের এ সব বিক্রি করার উপায় নেই৷ এই কথা শুনে আমরা তাঁদের কম্পিউটারের মাধ্যমে বিক্রির ধারণা দিই৷’’
এরপর সেখানে একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন আতাউর-সাদেকা দম্পতি৷ স্থানীয় তরুণদের প্রশিক্ষণও দেন৷ তাঁরাই নারী ও কৃষকদের ছবি ও তাঁদের পণ্যের ছবি তুলে অনলাইনে দেয়ার কাজটি করেন৷
কিন্তু সমস্যাটি বাঁধে পণ্য বিক্রির পর টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে৷ কারণ, তখনও বাংলাদেশে অনলাইনে টাকা লেনদেনের সুযোগ ছিল না৷ ‘‘এই অবস্থায় আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে এই সেবা চালুর অনুরোধ করি,’’ বলেন আতাউর৷ এর ফলশ্রুতিতে ২০১০ সালের শুরুতে বাংলাদেশে অনলাইন লেনদেন শুরু হয় বলে জানান তিনি৷
আতাউর রহমান বলেন, অনলাইনে পণ্য বিক্রির কারণে এক জেলার কৃষকের পণ্য এখন সারা দেশের মানুষ কিনতে পারছেন৷ আগে দেখা যেত, কোনো এলাকার কৃষকের পণ্য শুধু সেই এলাকার স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে৷ ‘‘রাঙামাটির আনারস এখন চাইলে বাকি ৬৩ জেলার মানুষ সহজেই কিনতে পারছেন,’’ যোগ করেন আতাউর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন যেমন দেখা যায়, চাহিদার চেয়ে কোনো পণ্যের উৎপাদন অনেক বেশি হয়ে গেলে বাজারের অভাবে কৃষককে সেগুলো খুবই কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে কিংবা ফেলে দিতে হচ্ছে৷’’ কিন্তু অনলাইন বেচাকেনার আরও প্রসার হলে কৃষকদের ঐসব পণ্য সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে৷
সরকারের সঙ্গে ই-শপ
আতাউর ও সাদেকা দম্পতি সাত বছরে ১১টি জেলায় তাদের কার্যক্রম প্রসার করেছিলেন৷ এরপর সরকার সারা দেশে ই-শপ চালুর উদ্যোগ নিলে তার সঙ্গে যোগ দেয় ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’৷ তাদের পদ্ধতিতেই এখন দেশের ৬৪টি জেলায় ই-শপ চালু হয়েছে৷ এই প্রকল্পের আওতায় এক হাজারেরও বেশি উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে৷
ক্রেতাদের জন্য পরামর্শ
বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটা যেমন বাড়ছে, তেমনি কিছু অভিযোগও উঠছে৷ যেমন পণ্য অর্ডার দিয়ে সময়মতো না পাওয়া, ঠিক পণ্য না পাওয়া এবং পছন্দ না হলে ফেরত দেয়ার সমস্যা ইত্যাদি৷ এসব থেকে বাঁচতে ক্রেতাদের সবসময় পরিচিত ব্র্যান্ডের কাছ থেকে পণ্য কেনার পরামর্শ দিয়েছেন আতাউর রহমান৷ এছাড়া ঝুঁকি এড়াতে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি'-র চেয়ে অনলাইনে মূল্য পরিশোধ করার পরামর্শ দেন তিনি৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন মন্তব্যে৷