বাংলাদেশে ডিএনএ পরীক্ষা: সাফল্য, হতাশা
বাংলাদেশে এখন ডিএনএ পরীক্ষা সম্ভব হচ্ছে৷ সম্প্রতি রানা প্লাজা ধসে নিহত অনেকের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে৷ তবে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের শনাক্ত করা যায়নি এখনও৷ এই নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
আগুনে পোড়া মরদেহ শনাক্ত
২০১২ সালের নভেম্বরে ঢাকার আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানায় আগুনে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ১১২ কর্মী৷ নিহতদের অনেকের মরদেহ এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে স্বাভাবিকভাবে তাদের শনাক্ত সম্ভব ছিল না৷ পরবর্তীতে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয়৷
ভবন ধসে নিহতদের শনাক্ত
ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসে নিহতদের শনাক্তে ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে৷ ২০১৩ সালের এপ্রিলে ভবন ধসে প্রাণ হারায় এক হাজারের বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিক৷
২০০ জনকে শনাক্ত
ভবন ধসে নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় স্বাভাবিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি, তাদের মধ্য থেকে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ২০০ জনের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয়েছে৷ তবে এখনও ১১২টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয়নি৷
গাজীপুরে আগুন
গত বছর অক্টোবরে গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় আগুনে পুড়ে প্রাণ হারায় কয়েকজন শ্রমিক৷ এক্ষেত্রেও নিহতদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হচ্ছে৷
খুনি শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা
শুধু ভবন ধস বা আগুনে পুড়ে নিহতদের শনাক্ত নয়, হত্যাকাণ্ডেদর সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তেও এখন বাংলাদেশে ব্যবহার হচ্ছে ডিএনএ প্রযুক্তি৷ গত বছর এক কিশোরীর বিরুদ্ধে তার বাবামাকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়৷ এক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কিশোরীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে৷ (প্রতীকী ছবি)
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির যাত্রা শুরু করে ২০০৬ সালে৷ প্রতিষ্ঠার পর এই ল্যাবরেটরিতে কয়েক হাজার মানুষের ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে৷ বাংলাদেশে ডিএনএ পরীক্ষার মূল কেন্দ্র এই ল্যাবরেটরি৷ (ফাইল ফটো)
চাঞ্চল্যকর মামলার ডিএনএ টেস্ট
ডিএনএ ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান জানান, বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ৪ সেনা কর্মকর্তাসহ অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে তাঁর ল্যাবরেটরিতে৷ তবে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনির হত্যাকারীদের শনাক্তে ডিএনএ টেস্টের সুযোগ পায়নি এই ল্যাব৷ (ফাইল ফটো)
টেস্টের নামেই কেটে গেছে ২ বছর
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার নামে দু’বছর সময় কাটিয়ে দিয়েছে ব়্যাব৷ তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার পর ব়্যাব হত্যাকারীদের শনাক্তে ডিএনএ টেস্টের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু নমুনা পাঠায়৷ কিন্তু দু’বছর পরও সেসব নমুনার ভিত্তিতে হত্যাকারী শনাক্ত সম্ভব হয়নি৷
‘বাংলাদেশেই সম্ভব’
ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা বাংলাদেশেই সম্ভব৷ ব়্যাব অবশ্য তখন বাংলাদেশে পরীক্ষা সম্ভব নয় দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রে আলামত পাঠায়৷
ডিএনএ নমুনা নষ্ট করলে শাস্তি
আগুনের পোড়া কিংবা পচে যাওয়া মরদেহ শনাক্ত থেকে শুরু করে অপরাধী শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় গত বছর একটি নতুন আইন অনুমোদন হয়েছে বাংলাদেশে৷ ‘ডি-অক্সি-রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) আইন, ২০১৩ সালের আওতায় ডিএনএ নমুনা নষ্ট করলে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷