বিএনপির ওয়েবসাইট বন্ধ!
৩০ মার্চ ২০১৪বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তার আগে তারেক রহমানের কণ্ঠে জিয়াউর রহমানকে প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করা হয়৷ গত মঙ্গলবার প্রথম দাবিটি করেন জিয়াউর রহমানের বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷
এর একদিন পর তারেক রহমানের মা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও একই দাবি করেন৷ বিএনপির অনেক নেতা এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দেয়ারও চেষ্টা করেন৷ কিন্তু তারা যখন এই দাবি করছেন তখনও বিএনপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেখা যায় জিয়াউর রহমান সপ্তম রাষ্ট্রপতি?
এ নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে ঝড় উঠে৷ এর একদিন পরই বিএনপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দেয়া হয়৷ শুক্রবারও ওয়েবসাইটটি দেখা গেছে৷ কিন্তু শনিবার থেকে আর সেটা দেখা যাচ্ছে না৷ বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিতর্ক এড়াতে সাইটটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে৷ তবে তাদের অফিসিয়াল ভাষ্য, কারিগরি ত্রুটির কারণে সাইটটি দেখা যাচ্ছে না৷ ঠিক করার কাজ চলছে, শেষ হলে আবার দেখা যাবে৷ এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই বলেও দাবি তাদের৷
গত মঙ্গলবার লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে তারেক রহমান দাবি করেন, তাঁর পিতা জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের ‘প্রথম' রাষ্ট্রপতি ও ‘স্বাধীনতার ঘোষক'৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এ দাবির সমালোচনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, তাঁর স্বামীই ছিলেন দেশের ‘প্রথম' রাষ্ট্রপতি৷
ওই দিনও বিএনপির ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা গেছে, সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দলটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দল৷''
একইদিন সন্ধ্যায় স্বাধীনতা দিবসের এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁরা (বিএনপি নেতারা) এখন ফর্মুলা পাল্টেছেন৷ এতোদিন তাঁরা বলেছেন, জিয়া স্বাধীনতার ‘ঘোষক'; এখন বলছেন, ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি'৷ স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷
আর শনিবার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, জিয়াউর রহমানকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা প্রয়োজন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সংবিধানে প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান, উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ৷ সুতরাং, তাঁদের এই বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহী, সংবিধান পরিপন্থি ও ষড়যন্ত্রমূলক৷ এজন্য তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে গ্রেফতার করা প্রয়োজন৷''
এর একদিন আগে শুক্রবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে ‘মিথ্যার উপর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নির্মাণ' করতে চাইছে৷ জিয়াউর রহমান ‘সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিকভাবে কখনোই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিল না' মন্তব্য করে জয় বলেছেন, খালেদা জিয়ার পুরো জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত৷
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের এই দাবি থেকে এখনো সরে আসেনি বিএনপি৷ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়া৷ সেখানে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বিএনপিপন্থি অংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার তাঁর বক্তব্যে জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি' বলে উল্লেখ করেন৷ এসময় মঞ্চে উপস্থিত খালেদা জিয়া মাথা নেড়ে তাঁর এই বক্তব্যে সায় দেন৷
ওই অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্যে বর্তমান বিরোধীদল নেতা রওশন এরশাদকে সময় থাকতে পদত্যাগ করে নিজেদের সম্মান বাঁচানোর আহ্বান জানিয়েছেন৷ খালেদা জিয়া রওশন এরশাদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিরোধীদল নেতা বলে যিনি নিজের পরিচয় দেন, তিনি বলেছেন, চাপের মুখে পড়ে নির্বাচনে গেছি৷ চাপতো আমাদেরও ছিল! আমরাতো নির্বাচনে যাইনি! জনগণের কথা ভেবেছি৷ তাহলে কী চাপে গেছেন? তিনি এসময় রওশন এরশাদের সমালোচনা করে বলেন, নিশ্চয়ই কোনো অপকর্ম আছে৷ তার জন্য ব্যবস্থাও নিশ্চয়ই হবে ইনশাল্লাহ৷ এখনও সময় আছে, যেহেতু বলছেন, নির্বাচন করবেন না৷ তাই, অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিজেদের অবশিষ্ট সম্মান বাঁচান৷