বিজেপির বিজয় গতি অপ্রতিহত
২০ অক্টোবর ২০১৪দিল্লি লাগোয়া হরিয়ানা এবং পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র – এই দুই রাজ্যে ভোটের লড়াইটা হয় একদিকে মোদী-কেন্দ্রিক বিজেপি আর অন্যদিকে যুযুধান অন্যসব রাজনৈতিক দল৷ বিনা গাঁটছড়ায় ‘একলা চলো' নীতিকে ভর করে বিজেপি যে সাফল্য পেয়েছে, তা আশাতীত৷ হরিয়ানায় একার জোরে সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি৷ মোট ৯০টি আসনের মধ্যে বিজেপির ঝুলিতে ৪৭টি আসন৷
মহারাষ্ট্রে ২৮৮টি আসনের মধ্যে বিজেপি ১২২টি আসন নিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ট দল হলেও, একা সরকার গড়ার মতো অবস্থায় নেই৷ কোনো না কোনো দলের হাত ধরতে হবে৷ স্বাভাবিকভাবে আদর্শগত দিক থেকে সেটা হতে পারে হিন্দুত্ববাদী আঞ্চলিক দল শিবসেনা, কারণ বিজেপির সঙ্গে শিবসেনার গাঁটছড়া ২৫ বছরের৷ তবে মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটের আগে আসন বণ্টন নিয়ে মতভেদের কারণে সেই গাঁটছড়া ছিঁড়ে যায়৷ এরপরেও অবশ্য কেন্দ্রে মোদী সরকারের শরিক সম্পর্ক অটুট আছে৷ কিন্তু বিজেপিকে সরকার গড়ার জন্য বাইরে থেকে সমর্থন দেবার কথা আগেভাগেই ঘোষণা করে দিয়েছে শরদ পওয়ারের এনসিপি দল৷ এতে শিবসেনার সঙ্গে দরকষাকষিতে বিজেপির হাত যে শক্ত হবে, সন্দেহ নেই৷
‘মোদী ম্যাজিক'-এর আসল মন্ত্রটা কী? আমার মতে, পরিবার-কেন্দ্রীক গণতন্ত্রের বদলে দুর্নীতিমুক্ত প্রকৃত আর্থিক উন্নয়ন ও পরিবর্তন৷ গৈরিক রঙের ধ্বজা উড়তে দেননি মোদী৷ হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ জমে আছে বহুদিন ধরে৷ সব অভিযোগ ধামা চাপা পড়ে আছে৷ আমজনতা এর একটা বিহিত চান৷ এটা জানা কথা, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে একটা কায়েমী স্বার্থ ডাল-পালা মেলে৷ অন্যদিকে, সাধারণ নির্বাচনের প্রায় মাস চারেকের মধ্যে মোদী সরকার নীতি পঙ্গুত্ব মুছে ফেলে সরকারের কাজকর্মে এনেছেন গতি৷
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবার মোদী বড়সড় আর্থিক সংস্কারে হাত দেবেন৷ ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে৷ মোদী সরকার ইতিমধ্যেই খাদ্য সুরক্ষা, জমি অধিগ্রহণ, শ্রম আইন সংশোধন, কর্মসংস্থান, শিক্ষার অধিকার ইত্যাদি প্রকল্প দ্রুত রূপায়ণে উদ্যোগী হয়েছে৷ সরকার এবং দলে মোদীর একমোদ্বিতীয়ম ছবি সরকারের ভেতরে ও বাইরে একটা শৃঙ্খলা আনার দিকে এগিয়ে চলেছে বলেই মনে হয় আমার৷ আমি দিল্লিবাসী হয়ে দিল্লিতেই তার একটা নমুনা দেখতে পাচ্ছি৷ মোদীর স্বচ্ছ-ভারত অভিযানে মহানগরীর রাস্তা ঘাট, পার্ক, পাবলিক টয়লেট আগের তুলনায় অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়েছে৷ পরিতাপের বিষয়, ভারতের জাতীয় চরিত্রে রয়ে গেছে অনেক গলদ৷ সেটা দূর করতে বলা বাহুল্য সময় লাগবে৷ ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই৷ কাগজের ঠোঙা, যত্রতত্র পানের পিক ফেলা, ছেঁড়া কাগজ তিন ফুট দূরের ডাস্টবিনে না ফেলে ফেলবে পায়ের কাছেই৷ অবাক লাগে এ সব লোকেরাই যখন উন্নত দেশে যান, তখন কিন্তু সেটা করেন না, যে কারণেই হোক৷ আমার মতো অনেকেরই চোখে পড়ছে সরকারি কর্মচারিদের মধ্যে আগের সেই চিরাচরিত ঢিলেঢালা ভাবটা তুলনামূলকভাবে কম৷
মোদীর স্পষ্টবাদিতা, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং দৃঢ়সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা সুবিদিত৷ গুজরাট দাঙ্গা ছাড়া দুর্নীতি নিয়ে মোদীর গায়ে কালি ছেটাবার সাহস এ পর্যন্ত কেউ করেনি৷ তাই মোদীর চিত্রনাট্যের ওপর ভর করে এবার বিজেপির পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হবে ঝাড়খন্ড ও জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন৷ কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, গণতন্ত্রে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া নতুন নয়৷ তবে কংগ্রেস যেভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে, তাতে অদুর ভবিষ্যতে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াবার আশা কম৷ বিশেষ করে, রাহুল গান্ধীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কংগ্রেসের অন্দরমহলেই৷