বিধাননগরের ভাঙা রাস্তা, আবর্জনা, জবরদখলের কাহিনি
ভাঙা রাস্তা, আলোহীন পথ, জবরদখল, আবর্জনর সমস্যায় জেরবার কলকাতার আধুনিক উপনগরী বিধাননগর।
যত্রতত্র আস্তাকুঁড়
পাঁচের দশকে কলকাতা শহরের পূর্বপাড় ঘেঁষা নুনের ভেড়ি বুজিয়ে তৈরি করা হয়েছিল সল্টলেক। পরে এই উপনগরীর পরিকল্পনাকার পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের নামে নাম রাখা হয় বিধাননগর। মূলত মধ্য ও উচ্চবিত্তের বাস উপনগরীতে। একটা সময় ছিল যখন বিধাননগরের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে শহরের মানুষ গর্ব করতেন। আজ তার বেহাল অবস্থা।
ভাঙা পথের ছবি
এই ভাঙা রাস্তার ছবিটা বৈশাখী আইল্যান্ডের কাছাকাছি। এই পথ ফার্স্ট অ্যাভিনিউ নামে পরিচিত। রাস্তার এমন হাল শুধু এখানেই নয়, প্রায় সারা বিধাননগর জুড়েই একই অবস্থা। বিড়ম্বনার বিষয় হলো এই রাস্তার একপাশে বিধাননগর মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্তের ওয়ার্ড আর অন্যপাশে ডেপুটি মেয়র অনিতা মণ্ডলের ওয়ার্ড। ঘটনাচক্রে বিধানগরের রাস্তা মেরামতির দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি।
মেয়রের ওয়ার্ডের পথ
করুণাময়ী হয়ে সেক্টর ফাইভে যাওয়ার পথ এটা। বিধাননগরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা। সেক্টর ফাইভ বিধাননগরের হলো অফিসপাড়া। এখানে একাধিক তথ্যপ্রয়ুক্তি সংস্থার অফিস আছে। তাছাড়াও অন্য বহু সংস্থার অফিস আছে এখানে। সেখানে যাওয়ার পথই এমন ভাঙাচোরা। এই ওয়ার্ড থেকে বিধাননগর মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জিতেছেন।
দুর্ঘটনার সমূহ সম্ভাবনা
বাস ড্রাইভারদের কথায় সল্টলেকের ভাঙাচোরা রাস্তার নেটওয়ার্ক ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। রাস্তার উপরিভাগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আলগা নুড়ি দুচাকার গাড়ির জন্য বিপদ ডেকে আনে৷ চাকা স্কিড করার প্রবণতার কারণে ব্রেক লাগাতে অসুবিধা হয়। এই রাস্তাটিও মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে।
পরিচ্ছন্নতা এখন ইতিহাস
এজে-ব্লকের ছবি। পরিচ্ছন্নতা এখন কেবলই ইতিহাস হয়ে রয়ে গিয়েছে বিধাননগরে।
গর্বের উপনগরীর অবস্থা
ইই-ব্লকের বাসিন্দা চিত্ততোষ বণিক বলেছেন, একটা সময় ছিল যখন সৌন্দর্য আর পরিচ্ছন্নতার জন্য বিধাননগরের স্বীকৃতি ছিল। আজ তার বেহাল অবস্থা। এই ছবিটিও ইই ব্লকের।
সুলভ এখানে দুর্লভ
বাজারগুলিতে থাকলেও বিধাননগরের ব্লকগুলির কোথাও সুলভ শৌচাগারের মতো পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। পথচলতি মানুষ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে এভাবেই যত্রযত্র মূত্রত্যাগ করে শহরকে আরও নোংরা করে তুলেছেন। অনেকের মতে নোংরা জায়গা মানুষ আরও বেশি নোংরা করে। পরিষ্কার জায়গায় এগুলো করার সাহস পায় না মানুষ।
তথ্যতালুকের হাল
বিধাননগরের তথ্যতালুক হিসেবে পরিচিত সেক্টর ফাইভের অবস্থাটাও এমনই। উপনগরীর এই অংশে বাড়িঘরের সংখ্যা কম, প্রায় পুরোটাই অফিস। সেখানকার পথের পাশেও পড়ে রয়েছে আবর্জনা। বিধাননগরের এই অংশের দেখভাল করার জন্য মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের বাইরে নবদিগন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি নামে আলাদা একটি সংস্থাও রয়েছে। তবুও এই হাল।
মশামাছির উপদ্রব
দেখভালের অভাবে আগাছায় ভরে রয়েছে বিধাননগরের বহু জায়গা। যা থেকে বাড়ছে মশামাছির উপদ্রবও। সেক্টর ফাইভের মত জায়গায় এমন দৃশ্য মেনে নেওয়া যায় না বলে আফশোস করেন নিত্যযাত্রীরা।
বাজারের হাল
বাজারগুলির অবস্থাও তথৈবচ। বিধাননগরের বেশ কিছু ব্লকে আবাসিকদের সুবিধার জন্য তৈরি হয়েছিল এমন বাজার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলির বেশিরভাগই এখন জীর্ণ। ওপরের ছবিটি সিকে-মার্কেটের।
বাজারের ভিতরের চেহারা
বাজারগুলির ভিতরের অবস্থাও বেশ খারাপ। বোঝাই যায় দেখভালের অভাব এর মূল কারণ।
আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাস
ওপরের ছবিটি করুণাময়ী বাস টার্মিনাসের প্রবেশপথের। উল্লেখ্য, এটি একটি আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাস। এখান থেকে বাংলাদেশ যাওয়ার বাস ছাড়ে। বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের ডেপুটি মেয়র অনিতা মণ্ডল জানিয়েছেন, “আমরা জানি যে রাস্তাগুলি ভেঙে যাচ্ছে। বেশকিছু জায়গায় প্যাচওয়ার্ক করা হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ মেরামত হয়নি তাই এই অবস্থা। আমরা তাড়াতাড়ি ঠিকাদারদের সঙ্গে বৈঠক করব। প্যাচওয়ার্ক দ্রুত করা হবে।''
জবরদখল
পথঘাট, আবর্জনার মত জবরদখলও বিধাননগরের একটা বড় সমস্যা। সারা বিধাননগর জুড়ে এমন বহু জায়গা রয়েছে যেখানে এমন দখলদারেরা বসতি গড়ে তুলেছেন।
বাতিল জিনিসের স্তূপ
এই ছবিটি জিডি-ব্লকের। এই পথের দু-পাশ জুড়ে এমন বাতিল জিনিসের স্তূপ। এখানেই বসতি অনেক দখলদারের। এরাই সল্টলেকের বিভিন্ন বাড়ি থেকে পুরনো জিনিস কিনে এনে এই রাস্তায় জড়ো করে। শুধু এই রাস্তাই নয়, এমন অনেক রাস্তা আছে যেখানে এই ব্যবসা চলে। ফলে দৃশ্যগতভাবে একটা শহরকে আরও আবর্জনাময় লাগে।
গাছ কাটা
পূর্বভারতের একটা পরিকল্পিত শহর হিসেবে বিখ্যাত ছিল এই বিধাননগর। পরিকল্পনা করে রাস্তা, বাজার, নিকাশি — সবকিছু তৈরি করা হয়েছি। প্রতিটি বড় রাস্তায় রয়েছে ডিভাইডার এবং প্রায় প্রতিটি মোড়েই রয়েছে আইল্যান্ড। রাস্তার ডিভাইডারে লাগানো হয়েছিল গাছ। এলাকার মানুষদের অভিযোগ, গাছ কাটা সল্টলেকে এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে।
আলো কম
বিধাননগরের অনেক ব্লকে রাতের ছবিটাও বেশ অস্বস্তিকর। অনেক পথই এমন অন্ধকার থাকে। এই ছবিটি লাবণি এস্টের কাছাকাছি বিদ্যাসাগর আবাসনের পাশের রাস্তার। অনেক ব্লকের ভিতরের অবস্থা এমনই।