বেতন দিন, নয়ত ধর্মঘট শুরু
৭ আগস্ট ২০১৪
তা না হলে শনিবার থেকে দেশের সব গার্মেন্টস শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তাঁরা৷ বুধবার প্রায় সব শ্রমিকই ঢাকার বাড্ডা এলাকায় গার্মেন্টস ইস্যুতে তুবা গ্রুপের অবস্থান নিয়ে তাঁদের অনশন কর্মসূচি এবং প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন৷ বিকেলে গার্মেনস্ট ভবন থেকেই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তুবা গ্রুপ সংগ্রাম কমিটি৷ কমিটির নেতা মোশারেফা মিশু তাঁর ঘোষণায় বলেন, ‘‘কাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে তুবা গ্রুপের শ্রমিকদের তিন মাসের বকেয়া বেতন, বোনাস এবং ওভারটাইমের বিল পরিশোধ করতে হবে৷ নয়ত শনিবার বাংলাদেশের সব গার্মেন্টস শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘট পালন করা হবে৷''এখানেই শেষ নয়৷ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং আমরণ অনশন অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন তিনি৷ বলেন, বেতন-ভাতা দিতে হবে তুবা গ্রুপের অফিসে বসে৷ কারণ তাঁরা বিজিএমইএ ভবনে গিয়ে বকেয়া বেতন নেবে না৷ তবে শ্রমিকরা যেখানে আন্দোলন করছেন, পুলিশ সাংবাদিকদের সেখানে ঢুকতে দেয়নি৷ কর্মসূচি ঘোষণার পর কাগজে সেগুলো লিখে আন্দোলনকারীরা তা নীচে ফেলেন৷ সেখান থেকেই আন্দোলনের তথ্য পাওয়া যায়৷
এদিকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে বুধবার সকাল থেকে শ্রমিকদের দুই মাসের বকেয়া বেতন দেয়া শুরু করেন বিজিএমইএ-র কর্মকর্তারা৷ বেতন দেয়ার জন্য ১৬টি বুথ খোলা হলেও স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মাত্র ৩২৬ জন শ্রমিক তাঁদের দুই মাসের বকেয়া বেতন নিয়েছেন৷ তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সভাপতি আতিকুল বিকেলে জানান, ‘‘সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত মজুরি দেওয়ার কথা৷ তবে এরপরও যদি শ্রমিকেরা আসেন, সে ক্ষেত্রে সময় বাড়ানো হবে৷''
মজুরি দেয়ার আগে মঙ্গলবার বিজিএমইএ-র পক্ষ থেকে তুবা গ্রুপ এলাকায় মাইকিং করা হয়৷ বুধবার সকালে বাসও পাঠান হয় শ্রমিকদের আনতে৷ কিন্তু সাড়া মেলে খুবই কম৷ তার ওপর বিজিএমইএ জানায় যে, বুধবারে শ্রমিকরা দুই মাসের বকেয়া টাকা নিলে বিজিএমইএ থেকে আর টাকা দেওয়া হবে না৷
তুবা গ্রুপে পুলিশ
সকাল ১০টার দিকে বাড্ডার হোসেন মার্কেটের নীচ তলায় তুবা গ্রুপের চারটি প্রবেশ পথের সবগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়৷ আর নীচে ভবনের সামনে ভ্যান, জলকামান ও এপিসি নিয়ে অবস্থান নেয় কয়েকশ' পুলিশ৷ এরপর বেলা ১২টার দিকে পুলিশ তালা ভেঙে প্রধান ফটক খুলে দিয়ে বিজিএমইএ ভবনে গিয়ে বেতন নেয়ার জন্য শ্রমিকদের অনুরোধ জানিয়ে পুলিশের ভ্যান থেকে মাইকিং করে৷
এর কিছুক্ষণ পর ‘বহিরাগতদের' বের করে দিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ কারখানা ভবনে ঢোকে৷ ওই ভবনের সাত তলায় দশ দিন ধরে অনশন চালিয়ে আসছেন তুবাকর্মীরা৷
পুলিশ সাংবাদিকদের এবং অন্যান্য ২০/২৫ জনকে কারখানা ভবন থেকে বের করে দেয়৷ ভবন থেকে বেরিয়ে এসে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা মঞ্জুর মইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘অসুস্থদের চিকিত্সা সেবা দিতে কারখানায় থাকা এক চিকিত্সককেও বের করে দেয়া হয়েছে৷'' এমনকি অনশনে অসুস্থ শ্রমিকদের চিকিত্সায়ও বাধা দেয়া হয় বলে তিনি দাবি করেছেন৷
তবে বাড্ডা থানার ওসি এমএ জলিল দাবি করেন, ‘‘যাঁরা তুবার কর্মী নন, তাঁদের সবাইকে বের করে দেয়া হয়েছে৷'' তিনি জানান, ‘‘নিরপত্তার কারণইে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে৷ তাদের অবস্থান অব্যাহত থাকবে৷'' শ্রমিকরা ভিতরে অবস্থান করে তাঁদের অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন৷
ঈদের আগে প্রতিশ্রুত তিন মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা না পেয়ে ২৮শে জুলাই ধেকে তুবা গ্রুপের ৫টি গার্মেন্টস-এর ১,৬০০ জন শ্রমিক অনশন শুরু করেন৷ এরইমধ্যে মঙ্গলবার এই গ্রুপের মালিক দেলোয়ার হোসেন শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের মুচলেকা দিয়ে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন৷ তাঁর আরেকটি পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশানস-এ ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে আগুন গেলে ১১৩ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন৷ সেই মামলার সূত্র ধরেই জেলে ছিলেন দেলোয়ার হোসেন৷